সোমবার, ৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নাইকো মামলায় জয়ী বাংলাদেশ

পাবে ১ বিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণের ঘটনায় কানাডিয়ান বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে মামলায় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। নাইকো দুর্নীতি প্লাটফর্ম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপুটেড (ইকসিড) এ রায় ঘোষণা করেছে। আর নাইকো দুর্নীতি মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে আসায় ক্ষতিপূরণ বাবদ নাইকোর কাছ থেকে বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলার বা আট হাজার কোটি টাকা পেতে পারে। যদিও ইকসিড স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি নির্ণয় করে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে বলেছে। সব মিলিয়ে আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। গতকাল দুপুরে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ তার বারিধারার বাসভবন থেকে ডিজিটাল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান। নসরুল হামিদ বলেন, দীর্ঘ ১০ বছর আইনি প্রক্রিয়ার পর এ মামলার রায় বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে। রায় পক্ষে আসায় সারা বিশ্বের কাছে বার্তা গেছে যে, বাংলাদেশে গিয়ে যা ইচ্ছা তা করা যাবে না। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ইকসিড এ রায় ঘোষণা করে। তবে মার্চের শুরুতে সংবাদ সম্মেলন করে এ রায় জানানোর কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির জন্য তা পিছিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আরও জানান, ২০১৬ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান দিয়ে যে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয় তা ২০১৮ সালে ইকসিডে জমা দেওয়া হয়। ইকসিড রায়ে বলেছে, নাইকোর গাফিলতি এবং অদক্ষতার জন্যই বিস্ফোরণ ঘটেছে। ফলে এর দায় নাইকোকেই নিতে হবে এবং বাংলাদেশকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ক্ষতির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আগামী সেপ্টেম্বরে আবার শুনানি হওয়ার কথা। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তা পিছিয়ে যেতে পারে।

এ মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার মঈন গণি বলেন, বাপেক্সের ১১৮ মিলিয়ন ডলার এবং পেট্রোবাংলার ৮৯৬ মিলিয়ন ডলার মিলিয়ে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। এর বাইরে আদালত বলেছে, স্বাস্থ্যগত ক্ষতি এবং পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি নিরুপণ করে আদালতে জমা দিতে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে। ধারণা করছি, আগামী বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ ঠিক হওয়ার জন্য সময় প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। আমরা তাদের দিয়ে পুনরায় মূল্যায়ন করে প্রতিবেদন দেব। এদিকে নাইকো দেউলিয়া হয়ে গেছে। এখন আমাদের ব্লক-৯ এ বাঙ্গুরা গ্যাসক্ষেত্রে নাইকোর সম্পত্তি দিয়ে তা উসুল করতে হবে। তিনি আরও জানান, নাইকো আমাদের কাছে ৩০ মিলিয়ন ডলারের গ্যাসের বিল পাবে। এ ছাড়া ব্লক-৯ এ নাইকোর সম্পত্তি রয়েছে। এ সম্পত্তি তারা বছর কয়েক আগে ২৮০ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করতে চেয়েছিল। জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের নাইকোকে আগের বিলের অর্থ দিতে হতো। কিন্তু এখন আর দিতে হচ্ছে না। প্রসঙ্গত ছাতকের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়নে ২০০৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নাইকোর সঙ্গে চুক্তি করে বাপেক্স। গ্যাসক্ষেত্রে অনুসন্ধান কূপ খননকালে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দুই দফা প্রচ  বিস্ফোরণ ঘটে। দুর্ঘটনার কারণে মজুদ গ্যাস পুড়ে যায়। আশপাশের সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ জন্য নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে পেট্রোবাংলা। যা দিতে নাইকো অস্বীকৃতি জানায়। ক্ষতিপূরণ আদায়ে পেট্রোবাংলা নাইকোর বিরুদ্ধে ২০০৭ সালে স্থানীয় নিম্ন আদালতে মামলা করে।

সর্বশেষ খবর