মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্ষতি সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা

রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার

রুহুল আমিন রাসেল

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ক্ষতি সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বড় ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। রপ্তানি, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার, ই-কমার্স ও স্টার্টআপ খাত মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির তথ্য দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। এতে প্রযুক্তিকর্মীদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি বেড়ে গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের তিন সংগঠন বেসিস, ই-ক্যাব ও ভিসিপিয়াব জানিয়েছে, সফটওয়্যার রপ্তানি আদেশ বাতিল হওয়ায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনলাইন কেনাকাটার বাজার ই-কমার্সে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। আর স্বল্প পুঁজিতে গড়ে তোলা স্টার্টআপ ব্যবসায় ক্ষতি প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।

তথ্য-প্রযুক্তি খাতের এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের কাছে প্রণোদনা চেয়ে চিঠি দিয়েছে এই খাতে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস-বেসিস। সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া ওই চিঠিতে বেসিস বলেছে, সারা দেশের প্রায় দেড় হাজার তথ্য-প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সরকারি-বেসরকারি খাত ছাড়াও বিশ্বের ৬০টিরও বেশি দেশে প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি করছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। অনেকে বাসায় বসে অফিস করছেন। কিন্তু দেশের অভ্যন্তরে ও বিশ্ববাজারে সফটওয়্যার ও আইটি খাতের কাজ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। রপ্তানি অর্ডার কমে গেছে প্রায় ৫০ শতাংশ। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যবসার মন্দা কমপক্ষে আরও ৬ মাস থাকার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে আগামী ৬ মাসে স্থানীয় বাজারে ৫০০ মিলিয়ন ও রপ্তানিতে ৮০০ মিলিয়ন মিলিয়ে মোট ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতি হতে পারে। যা টাকার হিসাবে দাঁড়ায় ১১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এই ক্ষতি বিবেচনায় নিয়ে বেসিস সরকারের কাছে শিল্প খাতের মতোই তথ্যপ্রযুক্তি খাতে প্রণোদনা চেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বেসিস সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও, বাসায় বসেই কিছু কাজ করছেন প্রযুক্তিকর্মীরা। তবে রপ্তানি বন্ধ। যেসব দেশে প্রযুক্তি পণ্য রপ্তানি হয়, সেসব দেশে লকডাউন থাকায় প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল হয়েছে। স্থানীয় বাজারেও ক্ষতি ৫০০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি খাতে। বেসিসের সাবেক সভাপতি ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অ্যান্ড প্রাইভেট ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ভিসিপিয়াব সভাপতি শামীম আহসান বলেন, স্বল্প পুঁজি, বাবা-মায়ের পেনশনের টাকা, কিছু এঞ্জেল বিনিয়োগকারী ও ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টের বিনিয়োগ হওয়া অর্থ নিয়ে হাজার হাজার তরুণ উদ্যোক্তা উদ্ভাবনী চিন্তাকে ব্যবসায় রূপ দিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। গত ১২ বছরে এই উদ্যোক্তাদের রক্ত, ঘাম এবং ত্যাগের ফলে অনেক উদ্ভাবনী স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের থাবায় তিলে তিলে গড়ে তোলা স্টার্টআপ ও ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অর্থ-ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। সরকারের প্রণোদনা ও পদক্ষেপ ছাড়া এই খাত টিকতে পারবে না। এদিকে স্টার্টআপদের বাঁচাতে সরকারকে দেওয়া প্রস্তাবে ভিসিপিয়াব বলেছে, করোনাভাইরাসে স্টার্টআপ ব্যবসা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে। স্থানীয় বাজারে বিক্রয় ও সেবা নেওয়া বন্ধ থাকায় দেশের প্রায় ৩০০ স্টার্টআপের প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ খাতে প্রায় দেড় লাখ কর্মীর চাকরিও ঝুঁকিতে পড়েছে। পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৭ লাখ সেবা প্রদানকারীও রয়েছে বিপাকে। অনেক স্টার্টআপের রপ্তানি আয় ৮০ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভিসিপিয়াব সংকট উত্তরণে সরকারকে দেওয়া ৬ প্রস্তাবে আগামী ৬ মাস এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে কর্মীদের বেতনের একটি অংশ সরকারি অনুদান হিসাবে চেয়েছে। এই সময়ে আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন স্টার্টআপগুলোর অফিস ভাড়া সরকারি অনুদান হিসাবে দেওয়ার দাবি করা হয়েছে। সরকার দুর্যোগকালীন যে অনলাইন ক্লাসরুম, ডিজিটাল শিক্ষণের বিষয়বস্তু, স্বাস্থ্যবিষয়ক অনলাইন কনটেন্ট, বিনোদনমূলক কনটেন্ট ইত্যাদি তৈরির কথা ভাবছে, সে কাজ দেশীয় স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে করতে হবে। সরকারি কাজে স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসা সচল রাখা এবং স্থানীয় বাজার সম্প্রসারিত করতে হবে। এই খাতে ন্যূনতম ২ শতাংশ সুদে জামানতবিহীন ঋণ প্রদান দিতে হবে। সরকারের স্টার্টআপ বাংলাদেশের আইডিয়া প্রকল্পের তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করতে হবে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, সারা দেশে ই-কমার্স বা অনলাইন কেনাকাটার বাজার প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সে হিসাবে এক মাসে ক্ষতি ৬৬৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ছুটি তিন মাস দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হবে এই খাত। কারণ ই-ক্যাবের ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আর দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান এখন সেবা দিতে পারছে। তবে করোনাভাইরাসে অনলাইনে ক্রেতা কয়েক গুণ বেড়েছে। যদিও বৈশাখের বাজার হাতছাড়া হয়েছে। ঈদের বাজারও হাতছাড়া হবে।

এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি ই-ক্যাব সরকারকে দেওয়া প্রস্তাবে ২৪০ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছে। এই টাকা দিয়ে কর্মীদের বেতন ও অফিস ভাড়ার ৫০ শতাংশ পরিশোধ করা হবে জানিয়ে সংগঠনটি বলেছে, অফিস ভাড়া ও বেতন মিলিয়ে ৪৮০ কোটি টাকার বিশাল চাপের মধ্যে রয়েছে ই-ক্যাবের সদস্যরা। পয়লা বৈশাখের বিশাল বাজার হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর