মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পদ্মা সেতুর সাড়ে ৪ কিমি দৃশ্যমান

বসল ২৯তম স্প্যান

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

পদ্মা সেতুর সাড়ে ৪ কিমি দৃশ্যমান

পদ্মা সেতুর ২৯তম স্প্যান (আইডি-৪এ) বসেছে ১৯ নম্বর ও ২০ নম্বর পিলারের ওপর। এতে দৃশ্যমান হলো প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার পদ্মা সেতু। বর্তমানে পদ্মায় চলছে থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি। এই রোদ, বৃষ্টি, ঝড় আর করোনাতঙ্ক উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে পদ্মা সেতুর কাজ। ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়েই রবিবার দুপুরের দিকে মাওয়ার কুমারভোগ এলাকার কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে ২৯তম স্প্যানটি (আইডি-৪এ) সেতুর মাওয়া অংশে ১৯ নম্বর ও ২০ নম্বর পিলারের কাছে নিয়ে রাখা হয়। গতকাল ৪ মে সকাল থেকে শুরু হয় স্প্যানটি পিলারে বসানোর কাজ। বেলা যখন ঠিক পৌনে ১১টা তখনই সম্পূর্ণরূপে পিলারের ওপর বসে পড়ে স্প্যানটি। ১৯-২০ পিলার দুটির অবস্থান মাঝ পদ্মায়। এ স্প্যানটি পিলারে বসলে মোট দৃশ্যমান হলো প্রায় সাড়ে ৪৩৫০ মিটার যা প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটাার সেতু। এসব তথ্য জানিয়ে মূল সেতুর প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  ইতিমধ্যে সেতুর একটি একটি করে গুনে ২৯৪টি পাইল ও ৪২টি পিলারের কাজ শেষ করা হয়েছে। এভাবে গুনতে গুনতে ৪১টি স্প্যানও শেষ হবে। আর মাত্র ১২টি স্প্যান স্থাপন করার বাকি। অদ্য (গতকাল) পর্যন্ত মাওয়া প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে- ১০টি (২০ টির মধ্যে) মাঝের স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে ১টি (১টির মধ্যে) জাজিরা প্রান্তে স্থাপন করা হয়েছে ১৮টি (২০টির মধ্যে), অর্থাৎ মোট ২৯টি স্প্যান স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর জন্য প্রয়োজন ৪১টি স্প্যান। তার মধ্যে মাওয়ায় এসেছে ৩৯টি। যার মধ্যে ২৯টি স্থাপন করা হলো এবং ১০টি মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ওয়েল্ডিং, অ্যাসেম্বলি ও পেইন্টিংয়ের কাজ চলছে। বাকি ২টি স্প্যান, যা মিলে ২৩০টি নোড/কর্ড অংশ, এরই মধ্যে ১৯৩টি চীন হতে মোংলা বন্দরে এসে পৌঁছেছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মাওয়া পৌঁছে যাবে আশা করা যায়। অবশিষ্ট সর্বশেষ ৩৭ টি নোড/কর্ড অংশ চীনে তৈরি শেষে শিনহোয়াংডাও বন্দরে লোডিং হচ্ছে এবং তা ৫ মে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেবে এবং জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে মাওয়া পৌঁছবে। সাধারণত পদ্মায় প্রতি বছর বর্ষাকালে উজান থেকে প্রচুর পলি (প্রায় ২ বিলিয়ন টন পলি/সেডিমেন্ট) এসে মূল সেতুর পিয়ার ১৭-৩৮ পর্যন্ত খননকৃত চ্যানেল বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী শুষ্ক মৌসুমে সেতুর জাজিরা প্রান্তে ড্রেজিং জটিলতা এড়ানোর জন্য জাজিরা প্রান্তের বাকি স্প্যান দুটি যত দ্রুত সম্ভব (৩০ জুনের আগেই) এ মৌসুমেই পিয়ার ২৬-২৭-২৮ এর ওপর স্থাপন করা হবে এবং ওই দুটি স্প্যান সরানো সম্পন্ন হলেই জাজিরা প্রান্তে ২০টির সব কটি বসানো হয়ে যাবে। এরপর মাওয়া প্রান্তে বাকিগুলো বসানো হবে। এ সময় প্রকৌশলী কাদের পদ্মা সেতুর অন্যতম বিশেষজ্ঞ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকে স্মরণ করে বলেন, সাধারণত পদ্মা সেতুর একেকটি স্প্যান স্থাপনের পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আপডেটেড প্রগ্রেস নকশা মেইল করতে হয়। প্রতিটি স্প্যান স্থাপনের পর শ্রদ্ধেয় জামিলুর রেজা চৌধুরী স্যারকেও অবহিত করতাম এবং প্রতিবারই স্যার শত ব্যস্ততার মধ্যেও আমার মেইলের রিপ্লাই দিতেন। গত ১১ এপ্রিল ২৮তম স্প্যান স্থাপনের পর স্যারের সঙ্গে মোবাইলে ২/৩ বার স্প্যান স্থাপন নিয়ে কথাও হয়, মেইল করি এবং যথারীতি তার রিপ্লাইও পাই। কিন্তু  আজ (গতকাল) ৪ মে ২৯তম স্প্যান স্থাপনের সময় স্যার আর নেই এবং স্যারকে মেইলের কপিও দিতে পারলাম না (জিমেইলে বারবার ঠিকানাটা আসছে)। সেতুর স্প্যান বসানোর পুরো ৪ ঘণ্টা সময়ই সাইটে ছিলাম। সর্বক্ষণ স্যারের কথা মনে পড়েছে আর ভাবছি এই বুঝি স্যার ফোন দিল। ২৮তম স্প্যান স্থাপনের দিন আমাদের উদ্দেশে স্যারের শেষ লেখা ‘Stay safe, Stay well’। এখন মনে হচ্ছে এটি শেষ বিদায়ের কথা ছিল। এ সময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীর জন্য দোয়া করে বলেন ভালো থাকবেন স্যার। প্রকৌশলী কাদের আরও জানান, ৩০ এপ্রিল/২০২০ পর্যন্ত মূল সেতুর অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ, নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৭১ শতাংশ এবং সার্বিক অগ্রগতি ৭৯ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, কোনো ধরনের প্রণোদনার জন্য নয় এ কাজ দেশের, এ কাজ আমার। সেতু নিয়ে যত মানুষ উপকৃত হবেন, তাদের ভালোবাসার আশার জন্যও নয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর