মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

নাইকোসহ জ্বালানি খাতে দুর্নীতিবাজদের বিচার চায় জাতীয় কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

নাইকোসহ জ্বালানি খাতের দুর্নীতিবাজদের বিচার চেয়েছে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। জাতীয় কমিটির সদস্যরা জানান, নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ মামলায় বাংলাদেশ সরকার যে অর্থ দাবি করেছে, তা ক্ষতির ২৫ ভাগের ১ ভাগেরও কম। তারা আরও বলেন, মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে পাওনা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায়ে বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক এবং আওয়ামী লীগসহ কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারের আমলে জ্বালানি খাতে সংঘটিত সব দুর্নীতি, অনিয়ম ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী চুক্তির ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানান জাতীয় কমিটির সদস্যরা। গতকাল জাতীয় কমিটির পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বিবৃতিতে বলেন, ‘টেংরাটিলা নামে পরিচিত ছাতক গ্যাসফিল্ডে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন পরপর দুটি বিস্ফোরণ ঘটে। এই গ্যাসফিল্ড নিয়ে কানাডীয় কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে চুক্তির প্রক্রিয়াটিই ছিল বেআইনি ও দুর্নীতিযুক্ত। তাদের অদক্ষতা ও দায়িত্বহীনতার জন্যই এই ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল। পুরো গ্যাসক্ষেত্র নষ্ট হওয়ার কারণে পেট্রোবাংলার প্রতিবেদনমতে ৩০৫.৫ বিসিএফ আর বাপেক্স-নাইকোর রিপোর্টমতে, ২৬৮ বিসিএফ পরিমাণ গ্যাস হারাবে বাংলাদেশ। এই পরিমাণ গ্যাসের তৎকালীন আন্তর্জাতিক বাজারদর এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিবেশের ক্ষতির পরিমাপ করে ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্য আমরা বারবার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি। অথচ ক্ষতিপূরণ মামলায় বাংলাদেশ সরকার দাবি করেছে, এর ২৫ ভাগের ১ ভাগেরও কম। এমনকি সেই মামলায় প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল ও তথ্যযুক্তি প্রদানে একের পর এক গাফিলতি করে। এতে কানাডার আদালতে দুর্নীতির দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত হয়েও বহু বছর নাইকো বাংলাদেশের কাছে তার দায় পুরোপুরি অস্বীকার করে এবং উল্টো অর্থ দাবি করে। ফলে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অক্সিডেন্টাল কোম্পানির অধীনে ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন সিলেটের ১৪ নম্বর ব্লকের সুরমা বেসিনে মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপ খননকালে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে তদন্ত কমিটির রক্ষণশীল হিসাবেও গ্যাস সম্পদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৪৫ বিসিএফ বা বিলিয়ন ঘনফুট। এ ছাড়া পরিবেশের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা দীর্ঘ মেয়াদের এবং পুরোটা পরিমাপযোগ্য নয়। ১৯৯৯ সালে ইউনোকল নামে আরেকটি মার্কিন কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা কার্যক্রম বিনিময় করে অক্সিডেন্টাল চলে যায়। আর মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো ফয়সালা না করেই পরবর্তী সময়ে ইউনোকলের ব্যবসা গ্রহণ করে আরেকটি মার্কিন কোম্পানি শেভরন। এখন এই কোম্পানির কাছ থেকেই আমাদের পাওনা আদায় করতে হবে।’ জাতীয় কমিটির সদস্যরা বলেন, ‘গড় হিসাব বিবেচনা করলে মাগুরছড়া ও ছাতক টেংরাটিলার বিস্ফোরণগুলোতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত প্রমাণিত সর্বমোট গ্যাস মজুদের মধ্যে কমপক্ষে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস ধ্বংস হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের গড় দাম বিবেচনায় মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস সম্পদসহ ক্ষতির হিসাবে মার্কিন ও কানাডার কোম্পানির কাছে আমাদের পাওনা দাঁড়ায় কমপক্ষে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ এসব কোম্পানি থেকে আদায় করতে হবে অথবা সমপরিমাণ গ্যাস সম্পদ জোগান দিতে তাদের বাধ্য করতে হবে। এ ছাড়া মার্কিন কোম্পানি শেভরনের কাছ থেকে পাওনা বিপুল পরিমাণ ক্ষতিপূরণ আদায় করতে বিএনপি, তত্ত্বাবধায়ক এবং আওয়ামী লীগ কোনো সরকারই উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। উল্টো এখনো তাদের নানা রকম ছাড়, ভর্তুকি ও সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসবের পেছনে বিভিন্ন সরকারের কমিশনভোগী ব্যক্তিরাই যে ভূমিকা রাখেন তাতে সন্দেহ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর