বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনায় সামাজিক সহিংসতা কেন

মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে

-অধ্যাপক জিনাত হুদা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মনস্তাত্ত্বিক জটিলতা তৈরি হচ্ছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেছেন, একটি সমাজ যখনই কোনো অস্বাভাবিক সময়ের মধ্য দিয়ে পাড়ি দেয় তখনই সমাজে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে এখন শুধু একটি সমাজই নয় গোটা বিশ্ব অস্বাভাবিক সময় পার করছে। করোনা সংকটে আমাদের মনস্তাত্ত্বিক সংকট তৈরি হচ্ছে। আমরা আগেও দেখেছি যে সমাজ যখন কোনো বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় বা হঠাৎ করে ধন সম্পদ হয়ে যায় তখনো সমাজে কিছু অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটে। আর করোনা আমাদের জন্য একটি নতুন সংকট। এর সঙ্গে আমরা বৈশ্বিক, জাতীয় বা স্থানীয় কোনোভাবেই পরিচিত ছিলাম না। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।  অধ্যাপক জিনাত হুদা বলেন, আমরা এখন অভিনব ও অস্বাভাবিক একটা সময় পার করছি। এ জন্য সমাজের ভিতরও অনেক অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে দেখছি। আমরা কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। পরিচিতদের কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কিনা তা নিয়ে সন্দেহ করছি। এ ব্যাপারে আমরা পরস্পর পরস্পরকে অবিশ্বাস করছি এবং সন্দেহের চোখে দেখছি। আর এটা এতটাই এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে করোনা সন্দেহে বৃদ্ধ মাকেও সন্তানরা জঙ্গলে ফেলে রেখে যাচ্ছে। আবার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা প্রধান সড়কে টহল দিচ্ছে তারাও খুব একটা স্বস্তিতে নেই। কারণ তারা সড়কে যেসব যাত্রী ও পথচারীদের থামাচ্ছেন তাদের মাধ্যমেও যে করোনায় সংক্রমিত হতে পারেন এই আশঙ্কা দূর হচ্ছে না।

অর্থাৎ মনস্তাত্ত্বিকভাবে আমদের সামাজিক সম্পর্কগুলোর মধ্যেও প্রভাব পড়ছে। এর ফলে আমাদের মা-বাবা, পরিবারের সদস্য, সহকর্মী, প্রতিবেশী সবার মধ্যেই এক ধরনের অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। আর এই ধরনের পরিস্থিতিতে অপরাধীরা সবসময়ই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। অপরাধীরা সময়ের সুযোগ নিয়ে একটি লক্ষ্য ঠিক করে। এর ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ডাকাতি, ধর্ষণ এবং নানা ধরনের খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যারা অপরাধী তারা মনে করছে যে এই সময়টার সুযোগ তাদের নিতে হবে এবং এই সুযোগটিকে অপরাধীরা কাজেও লাগাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে এখন সমাজবহির্ভূত নতুন নতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।

এ অধ্যাপক বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে প্রচারণা। করোনা নিয়ে আমাদের ভয় আছে নিশ্চয়ই কিন্তু একে আমাদের জয়ও করতে হবে। এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। সংকটের এ সময় ঘরে বেনামে যাতে অন্য কেউ ঢুকে যেতে না পারে এ জন্য বাসার গেট বন্ধ করে রাখতে হবে। এ বিষয়ে আমাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কারণ, এ মুহূর্তে প্রতিরোধ ছাড়া আমাদের ভালো কোনো উপায় নেই। এই পরিস্থিতিতে নারীরাও অনেক ঝুঁকিতে থাকেন। এ জন্য এ সময় পরিচিত কোনো পুরুষ যদি কোনো নারীকে সাহায্য করার কথা বলে অতিরিক্ত আগ্রহ দেখায় এবং অবেলায় কোনো নারীর ঘরের দরজায় উপস্থিত হয় তবে সেই পুরুষকে এড়িয়ে চলতে হবে। যেহেতু সমাজে অপরাধের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এ জন্য এ ধরনের অপরাধের ব্যাপারেও আমাদের সচেতন হতে হবে।

সর্বশেষ খবর