বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সংকটে নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষকরা

আকতারুজ্জামান

সংকটে নন-এমপিও বেসরকারি শিক্ষকরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যে আরও সংকটে দিন কাটছে নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয়করণ না হওয়া বেসরকারি প্রাথমিক, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের। জাতীয়করণ অথবা এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারের কাছে এমনিতেই কোনো বেতন-ভাতা পান না এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। তাই বেতন না পাওয়া এই শিক্ষকরা শিক্ষকতার পাশাপাশি নানা পেশায় জড়িয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের সে উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে ছাত্রছাত্রীদের মাসিক বেতন, টিউশন ফি সংগ্রহ করেই শিক্ষকদের বেতন-ভাতা দেওয়া হতো। এখন স্কুল বন্ধ থাকায় টিউশন ফিও নিতে পারছে না। সব মিলে বিপাকে পড়েছেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী। তারাও বাঁচার তাগিদে প্রণোদনা চান সরকারের কাছে।

অবশ্য সরকার সম্প্রতি ২ হাজার ৬১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে এমপিও কোডসহ বিধি মোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রদানের জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু আরও প্রায় ৩ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়ে গেছে নন-এমপিও হিসেবেই। এ শিক্ষকরা চরম অর্থকষ্টে রয়েছেন।

সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রায় ৩৫০টি এমপিওভুক্ত ডিগ্রি কলেজে নন-এমপিও অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের প্রায় ৫ হাজার শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন। এই শিক্ষকদের বার্ষিক বেতন-ভাতা বাবদ খরচ হবে ১৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় দীর্ঘ ২৮ বছরেও জনবল কাঠামো তৈরি না করায় অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। ফলে এই শিক্ষক-কর্মচারীরা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। বাংলাদেশ বেসরকারি কলেজ অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক নেকবর হোসাইন বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এই শিক্ষকরা অত্যন্ত অমানবিক জীবন-যাপন করছেন। এ পরিস্থিতিতে আমরা সরকারের কাছে প্রণোদনা চাই আর এমপিওভুক্তির আগ পর্যন্ত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ফান্ড থেকে বেতন-ভাতা চাই।

জাতীয়করণ তালিকা থেকে বাদ পড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো সরকারের কাছে কোনো বেতন-ভাতা পান না। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এই শিক্ষকরা অনেক বিপাকের সম্মুখীন হচ্ছেন। বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. মামুনুর রশিদ খোকন বলেন, এই শিক্ষকরা স্ত্রী-সন্তান, পরিবার-পরিজন নিয়ে মহাবিপদে পড়েছেন। তাদের অনেককে অর্ধাহারে-অনাহারে ঘরে থাকতে হচ্ছে। করোনার সময়ে বিশেষ প্রণোদনার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি তাদের। করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে দেশে প্রায় ২৫ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান গোলাম নবী বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯৫ শতাংশ ভাড়া বাসায় পরিচালিত হয়। তাছাড়া এ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পায় না। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও প্রতিষ্ঠানের ভাতা পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে প্রণোদনা ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো বাঁচিয়ে রাখা কষ্টকর। দেশের স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও সংকটে রয়েছেন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ শিক্ষক কোনো বেতন পান না। অল্প কিছু শিক্ষক নামকাওয়াস্তে কিছু টাকা পান সরকারের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন-ভাতার আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রহস্যজনক কারণে এ প্রক্রিয়া থেমে গেছে। করোনা সংকটে বিশেষ প্রণোদনা চান এসব ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা, গণপরিবহন বন্ধ থাকা আর জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন প্রাইভেট টিউটররাও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, অভাবের তাড়নায় ঢাকায় দুটি টিউশনি করে পড়াশোনা চালাতাম, জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন টিউশনিও বন্ধ। চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু বলেন, নন-এমপিও শিক্ষকদের দুর্দশা লাঘবে সরকারি ছুটির মধ্যেও অফিস খুলে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওর জিও ইস্যু করার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি প্রাথমিক, নন-এমপিও শিক্ষক-কর্মচারী, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি এবং নন-এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এখন অমানবিক জীবনযাপন করছেন। শিক্ষকতা পেশার জড়িত আছেন বিধায় তারা লোকলজ্জার ভয়ে কারও কাছে হাত পাততেও পারছেন না, অথচ তাদের অনেকের বাসায় চুলাও জ্বলছে না। এমতাবস্থায় তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ প্রণোদনার দাবি জানাই সরকারের কাছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর