বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সিমেন্টশিল্পে ঋণের সুদ মওকুফ চান ব্যবসায়ীরা

অগ্রিম আয়কর ও কাঁচামালের শুল্ক ছাড় চেয়ে অর্থমন্ত্রীকে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত সিমেন্টশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ওপর নির্ধারিত সুদ সম্পূর্ণরূপে মওকুফ চায় বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। সিমেন্ট খাতের উদ্যোক্তাদের এ সংগঠনটি আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর ছাড় চেয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে সম্প্রতি দেওয়া পত্রে এ দাবি করেছে বিসিএমএ। সংগঠনটির সভাপতি মো. আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সিমেন্ট উৎপাদনকারী শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা এ খাত থেকে সরকারি কোষাগারে শুল্ক করের মাধ্যমে জমা করা হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে সিমেন্ট বিদেশেও রপ্তানি হয়। পত্রে বলা হয়, বর্তমান প্রেক্ষাপট আমাদের সবাইকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নভেল করোনাভাইরাসের (কভিড-১৯) কমিউনিটি ট্রান্সমিশন দেখা দিয়েছে, যা দেশের ৬০ জেলায় ছড়িয়েছে। ফলে পুরো দেশকে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতর ‘ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা’ ঘোষণা করেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে দেশে লকডাউন চলছে। লকডাউনের কারণে দেশের প্রতিটি ব্যবসায়িক স্তরে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। এ ক্ষেত্রে সিমেন্টশিল্পও এর ব্যতিক্রম নয়। বিসিএমএ বলেছে, দেশে নির্মাণকাজ নেই বললেই চলে। ফলে সিমেন্টের উৎপাদন ৯০ শতাংশ বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে রয়েছে। অথচ শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা চালিয়ে যেতে হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য নিয়মিত খরচও প্রতিনিয়ত চালিয়ে যেতে হচ্ছে। অর্থাৎ পরিচালন খরচ কমেনি। সিমেন্টের কাঁচামাল শতভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় এ পর্যন্ত যত এলসি খোলা হয়েছে, সেগুলোও এখন আমাদের জন্য একটি বড় বোঝার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছোট-বড় সব ধরনের নির্মাণকাজের ৯০ ভাগই বন্ধ রয়েছে। ব্যাংক থেকে যে চলতি মূলধন নেওয়া হয়েছে, তার সুদ ও আসল চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। প্রজেক্ট মূলধনি যন্ত্রপাতির জন্য যে ব্যাংক ঋণ রয়েছে, সেগুলোরও খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকলেও অবচয় হিসাব বন্ধ থাকছে না।

বিসিএমএ আরও বলেছে, সিমেন্টশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাখ লাখ নির্মাণশ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তা জড়িত। কিন্তু এ শিল্পকারখানাগুলো চালু রাখা না গেলে সবাই বেকার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সরকার এ খাত থেকে যে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব পায়, তাও ব্যাহত হবে। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের ওপর সুদ সম্পূর্ণরূপে মওকুফের মাধ্যমে সিমেন্টশিল্পকে রক্ষা করতে অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।

এদিকে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দেওয়া আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বিসিএমএ বলেছে, করোনাভাইরাস শনাক্তের পর থেকে এ পর্যন্ত সিমেন্ট খাতে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। কারণ বন্ধ রয়েছে অবকাঠামোসহ নির্মাণ কার্যক্রম। ফলে সংকটে রয়েছে সিমেন্টশিল্প। চলমান পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় সিমেন্টশিল্পের সংকট উত্তরণে অগ্রিম আয়কর ও কাঁচামালে শুল্ক ছাড় চেয়েছে সংগঠনটি। বিসিএমএ বলেছে, আগামী বাজেটে কাঁচামালের আমদানি শুল্ক হ্রাস এবং অগ্রিম আয়করের অসামঞ্জস্যতা দূর করা হোক। সিমেন্টের প্রধান কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানির শুল্ক প্রতি টনে ৫০০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। বর্তমানে আমদানি পর্যায়ে ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর চূড়ান্ত দায় হিসেবে বিবেচনার বিধানটি পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর চূড়ান্ত দায় হিসেবে নিলে উৎপাদনকারীকে অধিক মুনাফা করতে হবে, যা বর্তমান পরিস্থিতিতে এ শিল্পে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এ ছাড়া বেশির ভাগ খাতে অগ্রিম আয়কর সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হলেও ব্যতিক্রম কেবল সিমেন্টশিল্প। বিষয়টি একই আইনের দ্বৈত প্রয়োগ, যা কোনোভাবেই ন্যায়সংগত নয়। তাই এটি সমন্বয়যোগ্য করার মাধ্যমে সবার জন্য আইনের সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর