বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাকালে উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন

নিষিদ্ধ সুন্দরী গাছ কেটে বনবিভাগের ট্রলারেই পাচার

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট

করোনাকালে উজাড় হচ্ছে সুন্দরবন

বন বিভাগের ট্রলারেই পাচার হচ্ছে সুন্দরবনের গাছ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সুন্দরবন থেকে কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে পাচার করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে করোনাকালকে। আর এই পাচার কাজে বনবিভাগের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যবহার করা হচ্ছে বনবিভাগেরই ট্রলার। গতকাল এরকম পাচারের ঘটনা ধরাও পড়েছে। দেখা গেছে বনবিভাগের ট্রলারে করে সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ট্রলারে ছিলেন সুন্দরবনের চিহ্নিত তিন পাচারকারী। তারা এই প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন, বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঢাংমারী স্টেশনের অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খানের নির্দেশেই তারা এ গাছ পাচার করছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বনের ঘাগরামারী এলাকা থেকে সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ওই ট্রলারে থাকা তিন চিহ্নিত পাচারকারীর মধ্যে তরুণ নামে একজন এ প্রতিনিধিকে বলেন, ‘এ গাছ ঘাগরামারী থেকে কেটে আনতে ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার সাহেব অনুমতি দিয়েছেন।’ পরে এ বিষয়ে ঢাংমারী স্টেশনের স্টেশন অফিসার (এসও) মো. আনোয়ার হোসেন খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ঘাগরামারী টহল ফাঁড়ি থেকে এ গাছ আমাদের স্টেশনের (ঢাংমারী) স্থাপনা তৈরির কাজে আনা হচ্ছিল। এ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশনা আছে।’ তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন বিভাগের পতাকাবাহী ট্রলারে গাছ নেওয়ার সময় তিন পাচারকারী ছাড়া কোনো বনরক্ষী ছিলেন না। অভিযোগ পাওয়া গেছে, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে উজার করা হচ্ছে। বন বিভাগের ট্রলারে করেই পাচার করা হচ্ছে এসব গাছ। এ ব্যাপারে ঢাংমারী স্টেশন সংলগ্ন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মুজিবর রহমান, সাবেক ইউপি মেম্বর মো. আফসার আলী ও সঞ্জয় কুমার বর্মণ বলেন, ‘ঢাংমারী স্টেশন অফিসার আনোয়ার হোসেন এবং ঘাগরামারীর অফিসের কর্মকর্তা রউফ তাদের লোক (দালাল) দিয়ে সুন্দরবন থেকে প্রতিনিয়তই কর্তন নিষিদ্ধ সুন্দরী, কাঁকড়া ও বাইনসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ পাচার করে থাকেন। যারা এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করেন, তাদের বিরুদ্ধে তারা হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেন।’ তারা অভিযোগ করেন, ‘এই দুই কর্তার অনিয়মের সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন ভোজনখালী গ্রামের বাসিন্দা বাদল ও ট্রলার মাঝি রহিম। এই দুই বনকর্তার সহযোগী বাদল এবং রহিমের অত্যাচারে গ্রামের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ এখন অতিষ্ঠ। সুন্দরী ও কাঁকড়া গাছ কেটে পাচারের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ মানুষের নামে দেওয়া হয় হরিণ পাচারের মিথ্যা মামলা।’ গতকালের পাচার ঘটনার ব্যাপারে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. এনামুল হক বলেন, ‘এসও আনোয়ার জানিয়েছেন তাদের স্টেশনের জেটি নির্মাণের জন্য ওই গাছ নেওয়া হচ্ছিল। তবে ওই গাছ বন থেকে সদ্য কাটা কি নাÑ সেটি আমি বলতে পারব না।’ খুলনাঞ্চল বনবিভাগের বন সংরক্ষক (সিএফ) মো. মঈন খান বলেন, ‘সুন্দরবন থেকে সদ্য গাছ কেটে স্টেশনের কোনো স্থাপনা তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিনের জব্দকৃত গাছ দিয়ে এসব স্থাপনা করতে গেলেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতির প্রয়োজন। কোনো কর্মকর্তা বনের গাছ কেটে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর