বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রণোদনা প্যাকেজের কৌশল তৈরি

করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের কাছে আজ প্রস্তাব দেবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে অর্থনীতির ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন, তা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কীভাবে পৌঁছানো হবে, সে বিষয়ে সরকারের কাছে আজ প্রস্তাব জমা দেবে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো। প্রণোদনার এ কৌশলপত্র চূড়ান্ত করতে সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে আজ ভার্চুয়াল সভায় বসতে যাচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। সূত্রগুলো জানান, প্রণোদনার জন্য ঘোষিত অর্থের মধ্যে কোন ব্যাংক কত বিতরণ করতে পারবে, তারা কীভাবে সে অর্থ বা ঋণ বিতরণ করবে- প্রাথমিকভাবে প্রস্তাবে সে বিষয়টি জানতে চাওয়া হবে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কেও ধারণা নেওয়া হবে। জানা গেছে, এরই মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক তাদের প্রণোদনাসংক্রান্ত কৌশলপত্র তৈরি করেছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক তাদের প্রস্তাব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তারা জানান, প্রণোদনা প্যাকেজের চলতি মূলধন বা ইডিএফ সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো তাদের অ্যাকাউন্টধারীদের অগ্রাধিকার দেবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রণোদনা সুবিধার জন্য আবেদন করা হলে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের আবেদন পৃথকভাবে যাচাই করবে। ঋণ কার্যক্রমের মতোই প্রণোদনা সুবিধার ক্ষেত্রেও ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের বিষয়টিই গুরুত্ব পাবে। তবে গ্রাহক নয়, এমন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের প্রণোদনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নির্দেশনা মেনেই প্যাকেজ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান ব্যাংকাররা। রূপালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা এরই মধ্যে একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন। তারা হিসাব করে দেখেছেন, মোট প্রণোদনার ২ থেকে ৩ শতাংশ অর্থ রূপালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ হবে। তিনি বলেন, ‘৬০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যারা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করবে, তার মধ্যে গার্মেন্ট শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন বাবদ ১২৫ কোটি টাকা এবং ৩০ হাজার কোটি টাকার চলতি মূলধনের ৩ শতাংশ অর্থ বাবদ আরও ৫০০ কোটি টাকা সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে।’ তবে বাংলাদেশ ব্যাংক-ঘোষিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ)সহ অন্য প্রণোদনাগুলো এ হিসাবের বাইরে রয়েছে বলে জানান ব্যাংকটির এমডি ও সিইও। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ এপ্রিল করোনার কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবিলায় ৬৭ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এর আগে রপ্তানি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মোট পাঁচটি প্যাকেজে সরকারের আর্থিক সহায়তার পরিমাণ ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা, যা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্যে করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৯ শতাংশ সুদে ৩০ হাজার কোটি টাকা ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল বা চলতি মূলধন এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে (এসএমই) চলতি মূলধনের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা দেওয়া হবে। প্রথম ক্ষেত্রে সাড়ে ৪ শতাংশ ঋণগ্রহীতা এবং বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সুদ সরকার ভর্তুকি দেবে। পরেরটিতে গ্রাহক ৪ শতাংশ এবং সরকার ৫ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেবে। রপ্তানিমুখী শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার একটি আপৎকালীন প্রণোদনা প্যাকেজ রয়েছে, যা থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ মাশুল দিয়ে রপ্তানিমুখী সচল কারখানাগুলো শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে এ ঋণ নিতে পারবে। পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার বাড়িয়ে ৫০০ কোটি ডলার ও সুদহার ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রি-শিপমেন্ট ক্রেডিট রিফাইন্যান্স স্কিম নামে ৫ হাজার কোটি টাকার একটি নতুন ঋণ সুবিধা চালু হবে; যার সুদের হার হবে ৭ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্মসচিব মো. শুকুর আলী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং কমিটি কাজ করছে। তারা তফসিলি ব্যাংকগুলোর জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দেশনা জারি করছে। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে- সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সমন্বয় তৈরি করে যাতে সঠিকভাবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রণোদনার অর্থ বিতরণ করা যায় তা নিশ্চিত করা। এজন্য আমরা রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছি, তারা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে কী ধরনের কৌশল গ্রহণ করছে তা জানতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের সভাপতিত্বে আজ ভার্চুয়াল সভা হবে। এ ছাড়া প্যাকেজ বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকলে তাও চিহ্নিত করা হবে।’

সর্বশেষ খবর