বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
বেতন-ভাতা দাবি

শ্রমিক বিক্ষোভ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আহত ১২

প্রতিদিন ডেস্ক

শ্রমিক বিক্ষোভ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া আহত ১২

গাজীপুরে গতকাল বেতনের দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

গাজীপুরে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং কাজে যোগ দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। এদিকে, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বকেয়া বেতনের দাবিতে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

গাজীপুর : গাজীপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধ এবং কাজে যোগ দেওয়ার দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ করেছেন। তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার ও স্থানীয়রা জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে যেসব কারখানায় শ্রমিকরা কাজ করতে পারেননি তাদের বেতনের ৬০ শতাংশ প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু গাছার সাইনবোর্ড এলাকার ব্যান্ডো ফ্যাশন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা ৬০ শতাংশ বেতনের পরিবর্তে শতভাগ বেতন পরিশোধের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান। এ ছাড়া স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে আংশিক শ্রমিক দিয়ে কারখানা চালু করার নির্দেশ দেওয়া হলেও সবাইকে কাজে নিয়োগের দাবি জানান শ্রমিকরা। শ্রমিকদের দাবি মেনে না নেওয়ায় তারা সকাল থেকে কারখানার গেটের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। ওই কর্মকর্তা জানান, সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার পাশের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপর অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন। এতে মহাসড়কের উভয় দিকে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ জটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু শ্রমিকরা নির্দেশ না মেনে তাদের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। দুপুরের দিকে তারা পাশের ইন্টারস্টপ পোশাক কারখানার সামনে গিয়ে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের আহ্বান জানালে তারা যোগ দেননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকরা মহাসড়কে গাড়ি ও ঢিল ছুড়ে ইন্টারস্টপ পোশাক কারখানা ভাঙচুর করেন। পুলিশ বাধা দিলে শ্রমিকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর ছুড়তে থাকেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শ্রমিকদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ২০-২২ রাউন্ড টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছোড়ে। প্রায় ৪ ঘণ্টা পর মহাসড়কে যানবাহন চলা শুরু হয়। এদিকে একই দাবিতে গতকাল তারগাছ এলাকাস্থিত এ্যাবা ফ্যাশন লিমিটেড নামের পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে আংশিক শ্রমিক দিয়ে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা ছুটির সময়ে ৬০ শতাংশ বেতনের পরিবর্তে শতভাগ বেতন প্রদান ও সব শ্রমিককে কাজে নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দাবি মেনে না নেওয়ায় মঙ্গলবার কিছু শ্রমিক কারখানায় কর্মরত অন্য শ্রমিকদের উসকানি দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। ফলে শ্রমিক অসন্তোষের আশঙ্কায় কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। সকালে কাজে যোগ দিতে গিয়ে শ্রমিকরা কারখানা বন্ধ দেখতে পেয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। কারখানার একাধিক শ্রমিক জানান, কারখানা খোলার পর থেকে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তার পরও কর্তৃপক্ষ বলছে ৬০ ভাগ বেতন দেবে। এতে আরও অভাবের মধ্যে পড়তে হবে। তাই পুরো বেতন দিতে হবে। শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর ইস্কান্দর হাবিবুর রহমান জানান, দুপুরে পুলিশের সঙ্গে কারখানা কর্তৃপক্ষের আলোচনা হয়। আলোচনা শেষে বিষয়টি নিয়ে বিজিএমইএর সঙ্গে আলোচনার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে বৃহস্পতিবার থেকে কারখানা খুলে দেওয়ার শর্তে আন্দোলন ত্যাগ করেন। এ ছাড়া শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাইনবোর্ড এলাকার গ্রিন সোয়েটার কারখানার শ্রমিকরা ফেব্রুয়ারি ও মার্চের বকেয়া বেতনের দাবিতে সকালে বিক্ষোভ শুরু করেন। আলোচনা শেষে শ্রমিকদের মার্চের বেতন-ভাতা ১১ মে দেওয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনরতরা সড়ক অবরোধ তুলে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। এদিকে শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম রেজা জানান, কালিয়াকৈরের মৌচাক সফিপুর এলাকার বে-ফুট কারখানার শ্রমিকরা চলতি মে মাসের ১৫ দিনেরসহ এপ্রিলের বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বেলা ১১টার দিকে কারখানার গেটে বিক্ষোভ শুরু করেন। বন্ধ ঘোষণা করা এ কারখানার ৩ সহস্রাধিক শ্রমিক রয়েছেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শ্রমিক প্রতিনিধি ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনা শেষে শ্রমিকদের পাওনা ৯ মে পরিশোধের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা মহাসড়কের অবরোধ তুলে নেওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অন্যদিকে শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর শহীদুল ইসলাম জানান, আংশিক শ্রমিক দিয়ে স্বল্পপরিসরে কাজ করানোর পরিবর্তে কারখানার সব শ্রমিককে কাজে নিয়োগ করার দাবিতে সকালে লক্ষ্মীপুরার মোহাম্মদীয়া ও স্টাইল ক্র্যাফ্ট নামের দুই পোশাক কারখানার শ্রমিকরা পৃথকভাবে বিক্ষোভ করেছেন।

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) : নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বকেয়া বেতনের দাবিতে ক্লাস্টন অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড নামে একটি রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার তারাবো হাটিপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষ্যদর্শী ও বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা জানান, হাটিপাড়ায় ক্লাস্টন অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডে প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করেন। তাদের মার্চ ও এপ্রিলে বেতন বকেয়া রয়েছে। বকেয়া পরিশোধ করা নিয়ে মালিকপক্ষ টালবাহানা করতে থাকে। গতকাল শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেয় মালিকপক্ষ। সকালে শ্রমিকরা কারখানায় গিয়ে দেখতে পান মালিকপক্ষ করোনা মহামারীর কারণে ৬ থেকে ১০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। বেতন পরিশোধ না করে কারখানা বন্ধ করে দেওয়ায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সুলতানা কামাল সেতুর তারাবো-যাত্রাবাড়ী প্রায় ১ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। পরে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ গিয়ে শ্রমিকদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ক্লাস্টন অ্যাপারেলস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম বলেন, ১০ মে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা হবে।

সর্বশেষ খবর