বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

ব্রিটেনে বাংলার টম দবির চাচা

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনে বাংলার টম দবির চাচা

বয়স ১০০ বছর কবি দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর। বলেছিলেন রোজা রেখে হাঁটবেন ১০০ পা। শতবর্ষেও তরুণ বলা চলে ব্রিটিশ বাংলাদেশি দবিরুল ইসলাম চৌধুরীকে। লম্বা গড়নের মায়াবী হাসির এই প্রবীণ মানুষটি যে মনমেজাজে তরুণ। তারই প্রমাণ দিলেন এই রমজানে ইস্ট লন্ডনে বাসার বিশাল এস্টেট গার্ডেনে ১০০ পা হাঁটার কর্মসূচি ঘোষণা করে। তবে উদ্যোগটা নিয়েছিলেন শতবর্ষী ব্রিটিশ কর্নেল টমকে দেখে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বীরসেনানী তিনি। করোনার দুর্যোগকালে যিনি ২৯ মিলিয়ন পাউন্ড সংগ্রহ করে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) ফান্ডে জমা দিয়েছেন। সেই টমকে নিয়ে আলোচনায় ছিল বিশ্ব মিডিয়া, আজ আমাদের গর্ব দবিরুল ইসলাম চৌধুরী যিনি ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়ার কল্যাণে আজ ব্রিটেনের জাতীয় চাচা! সবাই এক নামে ডাকে দবির চাচা! চ্যানেল এস রামাদান ফ্যামিলি কমিটমেন্ট (আরএফসি)-এর ভিত্তিতে রোজা রেখেই পুরো গার্ডেনের একপাশ থেকে অন্য পাশে হাঁটার যাত্রা শুরু করেন ২৬ এপ্রিল। মাত্র ১ হাজার পাউন্ডের টার্গেট নিয়ে তার সূচনা হলেও ৬ মে পর্যন্ত ১০ দিনের মাথায় তিনি প্রায় ৭৫ হাজার পাউন্ড সংগ্রহ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের বেশি ডোনার সহায়তা করেছেন। দবির চৌধুরী এখনো প্রতিদিন হাঁটছেন। যদিও প্রায় দুই মাস ধরে লকডাউন যাপিত জীবন তার। তিনি হৃদয়বান দাতাদের বলছেন, ‘আমি হাঁটতেই থাকব, প্রয়োজনে ১০০ বারেরও বেশি। এটা আমার স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো, আর বিনিময়ে সবাই যেভাবে ১০/২০/৫০ কিংবা ১০০ পাউন্ড করে দান করে আমার ক্যাম্পেইনকে শক্তিশালী করছেন ব্যাপারটি এই বয়সেও আমায় দারুণ আনন্দ দিচ্ছে। কোনো অসুস্থতা ও রোগবালাই নেই তার। শক্ত শারীরিক গঠন। আর তাই চ্যারিটির মাধ্যমে করোনায় বিপর্যস্ত মানবতার পাশে দাঁড়াতে চান তিনি। তহবিল সংগ্রহ অভিযানের দিকে মানুষকে আগ্রহ করে তুলতেই তার এই হাঁটাহাঁটি। তিনি হাঁটতে হাঁটতেই এই প্রতিবেদককে বলেন, এই ফান্ড বাংলাদেশ ও ব্রিটেনে করোনা আক্রান্তদের জন্য খরচ করা হবে। শুরুতে ১ হাজার পাউন্ডের টার্গেট থাকলেও মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় এখন তিনি ১০০ হাজার পাউন্ডের স্বপ্ন দেখছেন। বিবিসি তাকে নিয়ে বিশেষ রিপোর্ট করেছে। গার্ডিয়ান, মেট্রোসহ ব্রিটিশ মূলধারার পত্রিকাগুলো শতবর্ষী এই কীর্তিমান বাংলাদেশির মানবিক গুণাবলি তুলে ধরছে। আগ্রহ তৈরি হয়েছে ব্রিটিশদেরও, অনেকেই দবির চাচার অনলাইন ফান্ড রেইজে ডোনেশন করছেন। বারবারাহ নামের এক ব্রিটিশ মহিলা ডোনেশন করে লিখেছেন, ‘আপনি আমাদের অনুপ্রেরণা!’ কেটি নামের আরেকজন লিখেছেন, ছোট ডোনেশন, তবুও আপনার উদ্যোগ দেখে হাত বাড়াতে মন চাইল! এমন ছোট ছোট হাজার কমেন্টে ভরপুর দবির চাচার ফান্ড রেইজিং পেজ। চাকরি, ব্যবসা ও সমাজসেবা সবকিছুতেই অগ্রসর ছিলেন দবির চৌধুরী। সব সময়ই সাহসী ও উদ্যোমী। ষাটের দশকে চালকের আসনে বসে গাড়ি চালিয়ে লন্ডন থেকে সিলেট গিয়েছিলেন। তরুণ বয়সে সিলেটের এমসি কলেজে ভর্তি হতে নিজ গ্রাম দিরাই থেকে আসেন ঘোড়ায় চড়ে। দেখেছেন চার প্রজন্ম ব্রিটিশ-ভারত, পাকিস্তান আমল, বাংলাদেশ এবং আবারও ব্রিটিশ। বললেন, জীবনে কত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি, কিন্তু করোনার মতো অজানা বিপদ দেখেননি কখনো। তিনি আরও বলেন, আমি নিজে গাড়ি চালিয়ে অন্যান্য নেতাদের নিয়ে ’৭১ সালে প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পেইনের জন্য এখানে-ওখানে ছুটে বেড়িয়েছি। আজ করোনাভাইরাসের এই যুদ্ধে আবারও মাঠে আছি, পাশে চাই আপনাদের। চ্যানেল এস-এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল বলেন, দবির চৌধুরীর উদ্যোগ বড় মনের পরিচয়। তার সাহস আমাদের অনুপ্রাণিত করে। আর তাকে সম্মান জানানো, উৎসাহ দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সবার।

আরএফসির সমন্বয়ক এবং চ্যানেল এস-এর হেড অব প্রোগ্রামস ফারহান মাসুদ খান বলেন, আমরা সমাজের নানা পর্যায়ের সফল এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের আরএফসি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে পেয়েছি, কিন্তু এক অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন আমাদের প্রবীণ মুরব্বি দবির চৌধুরী। আরএফসির জন্য তার ফান্ড রেইজিং ক্যাম্পেইন বিশেষ সফলতা পাবে এটি আমাদের প্রবল আশা।

দবিরুল ইসলাম চৌধুরীর ছেলে ব্যবসায়ী আতিক চৌধুরী তার বাবার পক্ষে জাস্টগিভিং ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তিনি বলেন, তাতে সবাই দান করলে মূলত উপকৃত হবে আরএফসি।

সর্বশেষ খবর