শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

কৃষকের মুখে হাসি হাওরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কৃষকের মুখে হাসি হাওরে

হাওরের ঘরে ঘরে নতুন ধান নিয়ে ব্যস্ততা। কিশোরগঞ্জ থেকে তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শঙ্কা থাকলেও হাওরে স্বস্তি ফিরেছে। একমাত্র ফসল বোরো ধানের সিংহভাগই কাটা হয়ে গেছে। কৃষকের মুখে হাসি ফিরেছে। এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ছাড়িয়ে গেছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। হাওরজুড়ে এখন কেবলই স্বস্তির নিঃশ্বাস।

বোরো ধান হাওরের একমাত্র ফসল। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করেই কৃষককে এ ধান ঘরে তুলতে হয়। বরাবরের মতো এবারও ছিল আগাম বন্যার পূর্বাভাস। এর সঙ্গে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছিল মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। পাশাপাশি সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজারসহ দেশের বিস্তীর্ণ হাওরাঞ্চলের কোথাও ছিল না ধান কাটার শ্রমিক। সাধারণত দেশের উত্তরাঞ্চলের শ্রমিক হাওরাঞ্চলের ধান কাটে। এবার দেশজুড়ে লকলাউন থাকায় শ্রমিকদের যাতায়াতের কোনো সুযোগ ছিল না। এ ছাড়া তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ছিল। এ কারণে শ্রমিকরা কাজে আগ্রহী ছিল না। এর মধ্যে ছিল আগাম বন্যার পূর্বাভাস। স্বাভাবিকভাবেই হাওরের কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। কারণ ধানই তাদের অর্থকরী ফসল। আবার দেশের সিংহভাগ ধান উৎপন্ন হয় হাওরে। এই ফসলহানি হলে দেশে খাদ্যাভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় কৃষকদের সহায়তায় এগিয়ে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রশাসনের সহায়তায় সারা দেশ থেকে হাওরে শ্রমিক পাঠানো হয়। কৃষি বিভাগ কৃষকদের কাছে স্বল্পমূল্যে ‘হারভেস্টার মেশিন’ বিতরণ করে। ছাত্রলীগ, কৃষক লীগসহ দেশের যুব সম্প্রদায় এবং কোথাও কোথাও পুলিশ ও আনসার বাহিনী কৃষকদের ধান কেটে দেয়। কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক হাওরাঞ্চলের জেলাগুলো সফল করে কৃষকদের ধান কাটা সরাসরি তত্ত্বাবধান করেন। ফলে এরই মধ্যে হাওরের ৯৫ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। দু-এক দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা হয়ে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, হাওরাঞ্চলের চার জেলা নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে ৫ লাখ ৬২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। এতে প্রায় ৩৫ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন। আমাদের নেত্রকোনা প্রতিনিধি আল্পনা বেগম জানান, নেত্রকোনায় এবার করোনার প্রভাবে দেখা দেয় মারাত্মক শ্রমিক সংকট। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েন কৃষক। জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পুলিশ প্রশাসন হাওরের ফসল রক্ষায় এগিয়ে আসে। সরকারের ভর্তুকিতে হারভেস্টার মেশিন পাওয়ায় এবং বাইরের জেলার শ্রমিক আনায় ধান কাটার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।

ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গে হাওর থেকেই দাদন ব্যবসায়ীদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিয়েছেন কৃষকরা। অনেকেই ঋণ করে ফসল করায় ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হয়। তাই ৫০০ টাকা মণ দরে অনেক কৃষক ধান বিক্রি করেছেন। যে সব এলাকায় রাস্তা নেই সে সব স্থানে পানির দরেই ধান বিক্রি হচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক হাবিবুর রহমান জানান, এ বছর জেলায় ১ লাক ৮৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে আবাদ হয় ৪০ হাজার ৮৬৫ হেক্টর। হাওরাঞ্চলের ধানের ৯৯ ভাগ অর্থাৎ ৪০ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। একেবারে কাঁচা থাকায় ২০০ হেক্টর জমির ধান কাটা সম্ভব হয়নি। সমতলে ২৭ ভাগ অর্থাৎ ৩৯ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। সার্বিকভাবে বললে ৪৩ ভাগ অর্থাৎ হাওরেরসহ মোট ৮০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা হয়ে গেছে। তিনি জানান, হাওরের জন্য প্রায় আড়াই হাজার শ্রমিক আনা হয়েছিল বাইরের জেলা থেকে। তারা সবাই চলেও গেছে। পরের ধাপে আরও সাতশ শ্রমিক ছিল। তাদেরকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে জেলায় শ্রমিক কাজ করেছে প্রায় ৩০ হাজার। এর সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দুই ধাপে হাওরে ৬৫টি হারভেস্টার মেশিন নামানো হয়েছিল। শ্রমিক ছিল হাওরে ১২ হাজার।

হাবিবুর রহমান আরও জানান, ধানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে শুধু মাত্র হাওরে আড়াই লাখ মেট্রিক টন ধান হয়েছে। জেলায় চালের চাহিদা রয়েছে ৩ লাখ মেট্রিক টন। জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া আক্তার জানান, জেলায় এ বছর কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ হাজার ৬৮০ মেট্রিক টন ধান এবং মিলারদের কাছ থেকে ৩৬ হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন চাল কিনবে সরকার।

জেলা প্রশাসক মঈনউল ইসলাম জানান, আশা করা হচ্ছে, বাকি ধানগুলোও কেটে ফেলা সম্ভব হবে। তবে এবার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকরা খুশি বলে জানান তিনি। পুলিশ সুপার মো. আকবর আলী মুনসী জানান, এ বছর সংকট মোকাবিলায় নিয়ম মেনেই বাইরের জেলার শ্রমিকদের আমরা এলাকায় ঢুকতে দিয়েছি। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তদারকির মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

আমাদের সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি মাসুম হেলাল জানান, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে দেশে ১৩ লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি ধান জোগান দিতে যাচ্ছে হাওর অধ্যুষিত জেলা সুনামগঞ্জ। ইতিমধ্যে জেলায় ৭৮ ভাগ বোরো ফসল ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। এবার ধান কাটতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ছিল। লকডাউন থাকায় শুরুর দিকে সংকট ছিল ধানকাটা শ্রমিকের। সংকট দূর করতে বাইরের জেলা থেকে নিয়ে আসা হয় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার শ্রমিক। কৃষি বিভাগ জানায়, সুনামগঞ্জে এবার দুই লাখ ১৯ হাজার তিনশ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন বাম্পার হওয়ায় আরও এক লাখ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, এই মৌসুমে আগাম বন্যার পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু তা কেটে গেছে। অনুকূল আবহাওয়া ও সরকারের কৃষিবান্ধব উদ্যোগের ফলে এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার প্রত্যাশা করছি। হাওরে কাটা হয়েছে ৯১ ভাগ ধান। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে হাওরের শতভাগ ফসল কেটে নিয়ে আসা সম্ভব।

করোনা পরিস্থিতির মাঝে হাওরের ধান কৃষক যাতে নির্বিঘ্নে ঘরে তুলতে পারেন সেই লক্ষ্যে প্রশাসন নানামুখী উদ্যোগ নেয়। করোনাকালে হাওরে ধান কাটলে ত্রাণ মিলবে- এমন ঘোষণা দেয় জেলা প্রশাসন। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ধান কাটা শ্রমিক যাতে অবস্থান করতে পারেন সেজন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগাম বন্যার পূর্বাভাসের জারি হওয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটার উদ্বুদ্ধ করা হয় কৃষকদের। জেলায় ভর্তুকি মূল্যে ৪৮টি হারভেস্টার মেশিন কৃষকের কাছে বিতরণ করা হয়।

গত সপ্তাহে ধান কাটার অগ্রগতি দেখতে সুনামগঞ্জ সফর করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা বলেছে, করোনার প্রভাবে পৃথিবীর অনেক দেশে খাদ্য উৎপাদন হ্রাস পাবে। সে কারণে খাদ্য সংকট তৈরির পাশাপাশি কোনো কোনো দেশে দুর্ভিক্ষও দেখা দিতে পারে। এ বিবেচনায় সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষি খাতে সর্বোচ্চ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। কৃষি ঋণের সুদের হার শতকরা ৯ ভাগ থেকে ৪ ভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমি যেন পতিত না থাকে। আমরা ধান-চালে উদ্বৃত্ত রয়েছি। সংকটকালে সেই উদ্বৃত্ত খাবার পৃথিবীর অনাহারী মানুষের মুখে তুলে দিতে চাই।

আমাদের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন জানান, কিশোরগঞ্জের হাওরে শ্রমিক সংকটের যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, তা কেটে গেছে প্রশাসন ও স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের ভূমিকায়। হাওরের ২৪টি ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধান কাটায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। হাওরে ধান কাটা এখন শেষপর্যায়ে। কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, হাওরে এবার বোরো আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে বুধবার পর্যন্ত ৯২ ভাগ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। হাওরে ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৭১ মেট্রিক টন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সাইফুল আলম জানান, দ্রুততার সঙ্গে ধান কাটার জন্য সরকারিভাবে জেলায় ৩১টি হার্ভেস্টার যন্ত্র কৃষকদেরকে দেওয়া হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক হাওরে আনা হয়। তিনি জানান, ফলন ভালো হওয়া, কীটপতঙ্গের আক্রমণ না হওয়া এবং সঠিক সময়ে ধান কাটতে পারায় এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক এমপি বলেন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দিয়ে ২৪টি ইউনিয়নে ধান কাটায় কমিটি করে দিয়েছি। এ ছাড়া যুবলীগ, কৃষক লীগের নেতা-কর্মীরাও আমার সঙ্গে ধান কাটছেন।

আমাদের মৌলভীবাজার প্রতিনিধি সৈয়দ বয়তুল আলী জানান, গ্রামের কিষান-কিষানিদের এখন ব্যস্ত সময়। তাদের দম ফেলার সময় নেই। ধান কাটার ধুম পড়েছে। এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র সম্পদ হাওর। এখানকার মানুষের নির্ভরশীলতা হাওরের ফসলের ওপর। সারা বছরের খোরাকি এবং সব ব্যয় চলে ধান দিয়ে। কৃষকরা ধার-দেনাও মেটান ধান বিক্রি করে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয়েছে। হাকালুকি হাওর পাড়ের ভুকশিমইল ইউনিয়নের কৃষক হায়দর আলী, জিতু মিয়া ও গিয়াস মিয়া বলেন, সময়মতো পানি দিতে না পারায় অর্ধেক ধানে ছিটা পড়েছে। বোরো চাষাবাদ করে এবার বড় ধরনের লোকসান গুনতে হচ্ছে। স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রমতে, জেলায় ছয়টি হাওর রয়েছে। হাওরগুলোর মধ্যে হাকালুকি হাওরে ২৬ হাজার ৭৫৪ হেক্টর, হাইল হাওরে ১২ হাজার ৫২৪ হেক্টর, কাউয়াদীঘি হাওরে ৭ হাজার ৫৪৫ হেক্টর, বড় হাওরে ১ হাজার ২৯০ হেক্টর, কেওলা হাওরে ৪৫০ হেক্টর, করাইয়া হাওরে ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে।

মৌলভীবাজার কৃষি অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী লুৎফুল বারি বলেন, এ বছর তাদের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর। এর মধ্যে হ্ওারে ৪৮ হাজার ৪২৩ হেক্টর ও বাকিগুলো উঁচু জায়গাতে আবাদ হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশ্রিদুন এলাকায় শিলা বৃষ্টিতে প্রায় ২০০ কৃষকের ধান নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের আমন চাষাবাদের জন্য ৫ কেজি করে বীজ দেওয়া হয়। যে সব কৃষকের ধানে ছিটা ধরে নষ্ট হয়েছে তাদের কোনো সহায়তা দেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে খারাপ হয়েছে, এটা বলা যাবে না। তবে কিছু জমিতে ছিটা ধরেছে। এটা আমাদের চোখে পড়েছে। আর এই চিত্র সবসময় থাকে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবেন।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর