শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অর্ধাহারে-অনাহারে কাঁটাবন মার্কেটের বাহারি পশুপাখি

মোস্তফা কাজল

অর্ধাহারে-অনাহারে কাঁটাবন মার্কেটের বাহারি পশুপাখি

রাজধানীর কাঁটাবনের ফিশ অ্যান্ড অ্যানিমেল মার্কেটের প্রায় দেড় হাজার বাহারি পশু-পাখির দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। এ মার্কেটের ১১২ দোকানের খাঁচায় বন্দী অবস্থায় আছে এসব পশু-পাখি। রাজধানীসহ সারা দেশে চলছে অঘোষিত লকডাউন। ফলে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে প্রায় দেড় মাস ধরে। এ মার্কেটের দোকানগুলো আকারে বেশ ছোট। ফলে এ মার্কেটের বন্ধ দোকানের খাঁচায় বন্দী পশু-পাখি তাদের মালিকদের মতোই স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে এখন প্রহর গুনছে। ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় সংলগ্ন কাঁটাবনের সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় চোখে পড়ে নানা রংবেরঙের মাছ কিংবা বাহারি রঙিন পশু-পাখির কিচিরমিচির কলতান। নানারকম পশু-পাখিতে ভরা এটি কোনো বন নয়। বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মার্কেটে গড়ে ওঠা পোষা প্রাণীর এক জমজমাট বিক্রয় কেন্দ্র। শৌখিন মানুষের আগ্রহকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে এ পোষা পাখি-প্রাণীর বাজার। মার্কেটটি কাঁটাবন সিগন্যাল থেকে নীলক্ষেত এবং ধানমন্ডি থানা পর্যন্ত দীর্ঘ। নীলক্ষেত মোড় থেকে কাঁটাবন সিগন্যাল পর্যন্ত দীর্ঘ এই মার্কেটটির গঠন ধনুকের মতো বাঁকা। কয়েক দিন আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ মার্কেট ঘুরে ব্যবসায়ী, পাখি ও প্রাণীদের অবস্থা দেখে গেছেন। এ মার্কেটটিতে সাধারণ সামুদ্রিক মাছ ছাড়াও দুর্লভ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী যেমন কচ্ছপ, শামুক, কাঁকড়া, তারামাছ প্রভৃতি পাওয়া যায়। পোষা প্রাণীর এ বাজারে রংবেরঙের বিভিন্ন মাছের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি থাকে। কাঁটাবনের এ শৌখিন মার্কেটে মাছের মধ্যে ১০০-১২০ প্রজাতির অলংকারী মাছ রয়েছে। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে গোল্ডফিশ, ফাইটারফিশ, হাইফিনপ্লাটি, রেমিরোজি, গঙ্গাসফিশ ও রুইকিং ইত্যাদি। এখানে বাহারি রঙিন পাখি যেমন ঘুঘু, মুনিয়া, ময়না, টিয়া, কোয়েল, তোতা, কবুতর, হাঁস-মুরগির অসংখ্য প্রজাতি রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান পাখি লাভবার্ড রয়েছে।

আরও রয়েছে লক্ষ্যা, সিরাজী, গোলা, গিরিবাজসহ অসংখ্য প্রজাতির কবুতর। এ ছাড়াও ভারতীয় পাখি স্ট্রবেরি, পাকিস্তানি পাখি ককাটেল, ম্যাকাও, গ্রেভার্ডসহ রয়েছে নানা প্রজাতির বিদেশি পাখি। মূলত ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও চীন থেকে এসব পাখি আমদানি করা হয়। এখানে দেশি-বিদেশি ও দুর্লভ প্রজাতির কুকুর পাওয়া যায়। এর মধ্যে জার্মানির শেফার্ড, স্পেজ, ডোবার মেন, লেভরা ডগ, গোল্ডেন রিট্রিউভার ও ডালমাসিয়ানপার্ক অন্যতম। কাঁটাবনের খাঁচার বাসিন্দাদের বেড়ে ওঠা লাইট ফ্যান আর এসির বাতাসে। খায় প্যাকেটের খাবার। এক খাঁচা থেকে অন্য খাঁচায় তাদের জীবন কেটে যায়। আবার অনেক সময় খাঁচা থেকে গলায় শিকল পরে কোনো আলিশান বাসার বারান্দা কিংবা ড্রয়িং রুমেই শেষ হয় এদের জীবন। শেকলবন্দী থাকলেও ওদের আদর যতেœর অভাব হয় কমই। পশু প্রেম অথবা ব্যবসার খাতিরে এসব পাখি ও প্রাণীদের যতেœই রাখেন কাঁটাবনের ব্যবসায়ীরা। তবে করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে অবরুদ্ধ গোটা ঢাকা শহর। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে কাঁটাবন মার্কেটও। গেল এক মাস ঘরবন্দী এসব পশু-পাখি। আলো-বাতাস আর খাবারের অভাবে জীবন সংকটে দোকানে আবদ্ধ থাকা পশু-পাখিরা। খাঁচায়বন্দী এসব পশু-পাখির খাবার দিতে দিনে অন্তত দুবেলা দোকান খুলতে হয় মালিকদের। দোকান খুললেই আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ব্যবসা নয়, পশু-পাখিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতেই কিছু সময়ের জন্য হলেও মার্কেট খোলা রাখাটা জরুরি বলছেন দোকান মালিকরা। কাঁটাবন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে সীমিত আকারে পশু-পাখি বিক্রির জন্য কিছু দোকান খোলা হয়। আবার কেউ কেউ পাখি ও প্রাণীদের পরিচর্যা ও খাবার দেওয়ার জন্য দোকান খুলেছেন। যাদের বাসায় পোষা প্রাণী আছে তাদের অনেকেই খাবার এখান থেকে সংগ্রহ করেন। বিকালের আগেই এ মার্কেটের সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। তখন দোকানের বাইরে থেকে পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়। দোকানের শাটারের নিচের ভেন্টিলেটর রাখা হয়েছে বাতাস পাওয়ার জন্য। হাশেম ফিশ অ্যান্ড পেট অ্যানিমেল দোকানের মালিক আবুল হাশেম বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় দোকান বন্ধ রাখলে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ও খাবার পায় না পাখি ও প্রাণীগুলো। এই গরমে পশু-পাখিগুলোর বেশি পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। গরমে এসব বোবা প্রাণীদের পানির পিপাসা লাগে। পশু ও পাখিরা যেন পানি এবং খাবারের অভাবে মারা না যায় খেয়াল রাখা দরকার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর