শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বসুন্ধরায় তিন সপ্তাহেই তৈরি হলো দেশের বৃহত্তম কভিড হাসপাতাল

বিবিসির প্রতিবেদন

নিজস্ব প্রতিবেদক

কভিড আক্রান্তের চিকিৎসায় উহানে ১০ দিনে হাসপাতাল তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে চীনের কর্তৃপক্ষ। লন্ডনের এক্সেল এক্সিবিশন সেন্টারকে করা হয়েছে ‘নাইটিঙ্গেল হাসপাতাল’। মাদ্রিদের আইএফইএমএ কনভেনশন সেন্টারটিও রূপান্তরিত হয়েছে হাসপাতালে। কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জরুরি সেবা দিতে এমন অস্থায়ী হাসপাতাল তৈরি করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। কনভেনশন সেন্টারকে রূপান্তরিত করে বাংলাদেশেও তৈরি হয়েছে কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল। ঢাকার বসুন্ধরা কনভেনশন সিটিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ অস্থায়ী হাসপাতালটি তৈরি হয়েছে একুশ দিনে। গতকাল বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার পাশে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) চারটি কনভেনশন সেন্টার এবং একটি প্রদর্শনী তাঁবুতে গড়ে উঠেছে দেশের সবেচেয়ে বড় এই কভিড-১৯ হাসপাতাল। হাসপাতালের অবকাঠামো আগেই বানানো ছিল। শুধু বসানো হয়েছে শয্যা ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। বেসরকারি উদ্যোগ বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের জমি ও অবকাঠামো ব্যবহার করতে দিলেও হাসপাতাল বানানোর মূল কাজটি সরকারই করছে। বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর বিবিসিকে জানান, এই হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রায় আড়াই লাখ বর্গফুট জায়গা তারা সরকারকে অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুবই জনবহুল একটা দেশ। যদি এটি (কভিড-১৯) ভয়াবহ রূপ ধারণ করে, এটাকে সামলানোর মতো অবকাঠামো বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নেই। তাই আমরা চিন্তা করলাম, আমাদের কনভেনশন সেন্টারকে অস্থায়ী (চিকিৎসা) সেন্টার হিসেবে কেন ব্যবহার করি না? এখানে বেডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সিলিং ফ্যান আছে। ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্থায়ী এই হাসপাতালে কভিড-১৯ রোগীদের জন্য এখন পর্যন্ত দুই হাজার ১৩টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতালের নানা সুবিধা প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মোল্লা বিবিসিকে বলেন, এখানে রোগীকে আইসোলেশন করে রাখা এবং পোর্টেবল অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই বেডের মাঝখান দিয়ে বিদ্যুতের লাইন টেনে দিয়েছি, প্রতিটা বেডের পাশে সকেট আছে। কোনো রোগীর পোর্টেবল অক্সিজেন বা বৈদ্যুতিক অন্য কিছু লাগলে বেডের পাশ থেকেই বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে। চিকিৎসকরা যাতে নিজ কক্ষে বসে প্রত্যেকটা রোগীকে দেখতে পারেন সেজন্য সিসিটিভির ব্যবস্থা করেছি। হাসপাতালটিতে ৪৫ হাজার স্কয়ার ফুট জায়গা আইসিইউ-এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মনিরুজ্জামান মোল্লা বলেন, আইসিইউ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু এটা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাইনি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেলে, যেদিন নির্দেশনা পাব, তার থেকে ১০ দিনের মধ্যে কার্যকর করে ফেলতে পারব। এখানে অক্সিজেন, কম্প্রেসড এয়ার এবং ভ্যাকুয়াম থাকবে যা দিয়ে ভেন্টিলেটর চালাতে পারব। ভেন্টিলেটরের জন্য পোর্ট থাকবে, পোর্টে লাগিয়ে দিলেই ওটা কার্যকর হয়ে যাবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আট ঘণ্টা করে তিন শিফটে এ হাসপাতাল পরিচালনায় প্রয়োজন হবে ৩১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ৬৩০ জন মেডিকেল অফিসার, ১ হাজার ২৬০ জন সিনিয়র নার্স ও ২ হাজার ৫২০ জন স্টাফ নার্স। এই বিপুল সংখ্যক ডাক্তার-নার্সের জোগান দেবে কে- এমন প্রশ্নে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ডাক্তার এবং নার্সের দায়িত্ব সরকারের, এটা আমাদের দায়িত্ব না। আমাদের দায়িত্ব ছিল জায়গাটা দেওয়া। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে। গ্যাস, বিদ্যুৎসহ সব ধরনের বন্দোবস্ত আছে। ডাক্তার, নার্স আর মেডিকেল যন্ত্রপাতি ছাড়া সবই আছে। বাণিজ্যিক একটি প্রতিষ্ঠান হয়েও হাসপাতাল করার পেছনে কারণ জানতে চাইলে বিবিসিকে সায়েম সোবহান বলেন, দুনিয়াতে এখন একটা সংকট চলছে। একটা বড় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই মুহূর্তে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করা আমাদের দায়িত্ব। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এটা করা। প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য একজন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য কর্মচারী নিয়োগ হলেই শুরু হয়ে যাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই অস্থায়ী হাসপাতালের কার্যক্রম।

সর্বশেষ খবর