শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার প্রভাবে কমছে নতুন এডিপির আকার

মানিক মুনতাসির

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া কভিড-১৯-এর প্রভাবে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমিয়ে আনছে সরকার। আসছে বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৩ শতাংশের মতো বেশি। অথচ প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেট কমপক্ষে ১৫-১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। সেখানে এবার বাড়ছে মাত্র ৩ শতাংশ। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থ বিভাগসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে এডিপির এ আকার এখনই চূড়ান্ত নয়। এটা খসড়া হিসাব। অর্থ বিভাগ, এনবিআর ও পরিকল্পনা কমিশন বাজেট প্রণয়নের আগে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাহিদার ভিত্তিতে এডিপির জন্য একটি খসড়া কাঠামো তৈরি করে। এটি তারই অনুরূপ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এডিপির বাস্তবায়ন বাধার মুখে পড়েছে করোনাভাইরাস সংকটের কারণে। অর্থবছরের গত আট মাসে বাস্তবায়ন যা হয়েছে, তাকে ভিত্তি ধরেই আপাতত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাব্য হিসাব কষছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো। কেননা পরের চার মাস কভিড-১৯-এর প্রভাবে এডিপি বাস্তবায়ন প্রায় শূন্য। সে হিসাবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি অর্জন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বলছে, এটা ৩ শতাংশের বেশি হবে না। এডিবি অবশ্য বলেছে, এবার বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৭ শতাংশের বেশি। অবশ্য এডিবি যখন পূর্বাভাস দেয় তখনো কভিড-১৯-এর মহামারী প্রকোপ বাংলাদেশে শুরু হয়নি। এদিকে যেসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিপরীতে থাকা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল, কিন্তু কভিড-১৯-এর প্রভাবে তা অব্যয়িত রয়েছে, সে অর্থ ইতিমধ্যে কভিড-১৯ মোকাবিলায় খরচ করার জন্য কেটে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিবে মেগা প্রকল্পগুলোর কাজেও করোনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। যদিও সরকার বলছে, কভিড-১৯-এর কারণে আগামী বাজেটে মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ কমানো হবে না। তবে সার্বিকভাবে এডিপির আকার কমানো হবে তুলনামূলক। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ২ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকার সম্ভাব্য এডিপিকেও উচ্চাভিলাষী বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। কেননা এখন তো সারা বিশ্বের মানুষের জীবন-জীবিকাই হুমকির মুখে। বাঁচার জন্য লড়াই করছে মানুষ। যার ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশেও। এজন্য এখন এমন ঢাউস আকারের এডিপি না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। জানা গেছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মেগা প্রকল্পের বরাদ্দে করোনার কোনো প্রভাব পড়বে না। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অগ্রাধিকার প্রকল্পে চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা-পরবর্তীতে অর্থনীতির মোড় ঘোরাতে মেগা প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিবেচনায় দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনসূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আগামী অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার মূল এডিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। এর আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোয় চাহিদাপত্র চায় পরিকল্পনা কমিশন। সে চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দও কাটছাঁট করা হয়েছে। কিন্তু মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে উদারতার পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়নে বিঘ্নতা রোধে চাহিদামাফিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২০-২১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার কোটি টাকা, মেট্রোরেল লাইন ছয় প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা, পদ্মা রেল লিঙ্ক প্রকল্পে ৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেলসেতুতে ২ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুতের বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতে চার লেন প্রকল্পগুলোয় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এদিকে বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানান, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গেল আট মাসে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে এ হার ছিল ৩৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। প্রচলিত নিয়ম ও উন্নয়ন কাজের সিজন অনুযায়ী অর্থবছরের যে চার মাস সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়ন হয় এবার সে চার মাসই (মার্চ-জুন) হয়তো শূন্যের কোঠায় থাকবে। ফলে এ বছর এডিপি বাস্তবায়নের হার বহুবছরের মধ্যে সর্বনি¤েœ নেমে রেকর্ড সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এ খাতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নসহ চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মূল এডিপির আকার ধরা হয়েছিল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ ৯ হাজার ৮০০ কোটি কমিয়ে করা হচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা।

 

সর্বশেষ খবর