শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মহামারী থেকে বাঁচতে মসজিদে মসজিদে দোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী থেকে বাঁচতে মসজিদে মসজিদে দোয়া

সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই গতকাল বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সরকার বিধিনিষেধ শিথিল করায় এক মাস পর বিপুলসংখ্যক মুসল্লির অংশগ্রহণে সারা দেশের মসজিদগুলোতে আদায় হলো জুমার জামাত। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দেশের সব মসজিদেই ছিল সুরক্ষার ব্যবস্থা। মুসল্লিরা নিয়ম মেনে নিজের জায়নামাজে এক মিটার দূরত্বে বসেন। এরপরও মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন তারা। গতকাল জুমার নামাজ আদায় করতে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর প্রতিটি মসজিদে বিপুলসংখ্যক মুসল্লি অংশ নেন। একই চিত্র ছিল সারা দেশের মসজিদগুলোতে। মসজিদে করোনাভাইরাস মহামারী থেকে সবাইকে রক্ষায় বিশেষ মোনাজাত হয়েছে। এছাড়া খুতবায় ইমামরা করোনাভাইরাসসহ মহামারীতে জীবন রক্ষায় মানুষের করণীয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনা তুলে ধরেন। একই সঙ্গে খুতবায় আপাতত গণজমায়েত এড়িয়ে চলাফেরার মাধ্যমে করোনাভাইরাস  থেকে নিরাপদ থাকতে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সরকার ৬ এপ্রিল থেকে মসজিদে জুমা ও পাঞ্জেগানা নামাজে সাধারণ মুসল্লিদের অংশ নেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেয়। একই সঙ্গে ২৩ এপ্রিল তারাবির নামাজে ১২ জনের বেশি মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন না বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর ৭ মে জোহর থেকে ১২টি শর্ত দিয়ে মুসল্লিদের মসজিদে জামাতে নামাজ আদায়ের অনুমতি দিয়েছে সরকার। বায়তুল মোকাররমে আজানের সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেওয়া হয় মসজিদের প্রধান ফটক। এর আগে মসজিদের প্রবেশদ্বারে ছিল মুসল্লিদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। প্রবেশের আগে মুসল্লিদের জীবাণুনাশক ¯েপ্র করা হয়। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় পর মসজিদে প্রবেশ করতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করেন মুসল্লিরা। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ বলেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছি। মোটামুটি সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই চলেছেন। তারপরও কিছু ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটে। বয়স্করাও আসতে চান মসজিদে। মহাপরিচালক বলেন, সারা দেশে প্রায় দুই লাখ ৬৮ হাজার মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জুমা আদায়ের খবর পেয়েছি। এদিকে মসজিদে নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি মুসল্লিরাও। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, বায়তুল মোকাররমসহ সাতটি মসজিদ রয়েছে। প্রতিটি মসজিদে নামাজের আগে ইমামদের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে বৈঠক হয়েছে। প্রায় সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জুমার নামাজ আদায় করেছেন বলে মনে হয়েছে। পুরান ঢাকার বাসিন্দা রাশেদুল ইসলাম জুমার নামাজ আদায় করেছেন নারিন্দার একটি মসজিদে। তিনি বলেন, শুকরিয়া, সুন্দরভাবে সবাই দূরে দূরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছি। এভাবে সবাই সচেতন হলে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক কমে যাবে। নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম জানান, স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চট্টগ্রামের মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা আদায় করেন জুুমার নামাজ। এ সময় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবসহ দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত করা হয়। দুপুর ১২টা থেকেই নগরী ও জেলার বিভিন্ন মসজিদে আসতে থাকেন মুসল্লিরা। খুতবা শুরু হওয়ার আগেই নগরীর অন্যতম প্রধান মসজিদ আন্দরকিল্লাহ শাহী মসজিদ, জমিয়তুল ফালাহ জামে মসজিদ, চন্দনপুরা জামে মসজিদ, দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম বায়তুল করিম জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, জোরারগঞ্জ তাজমহল জামে মসজিদ, আগ্রাবাদ সিডিএ জামে মসজিদ, মেহেদীবাগ জামে মসজিদ, চান্দগাঁও আবাসিক জামে মসজিদ, আল জামেয়া আল ইসলামীয়া জামে মসজিদ মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে যায়।

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের মধ্যেও নিয়ম মেনে মসজিদে প্রথম জুমার নামাজ পড়েছেন রংপুরের মুসল্লিরা।

মসজিদ কমিটির সদস্যরা জানান, করোনাভাইরাস থেকে রক্ষায় মসজিদে কার্পেট বিছানো হয়নি। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। মুসল্লিরা নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে এসেছেন। মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান-পানিসহ হাত ধোয়ার ব্যবস্থা ছিল এবং আগত মুসল্লিদের অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে এসেছেন।

সর্বশেষ খবর