শনিবার, ৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কা

অর্থাভাবে থমকে যেতে পারে অনেক প্রকল্প, মেগা প্রকল্প ছাড়া অন্যান্য প্রকল্পে বরাদ্দ নিয়ে অনিশ্চয়তা

নিজামুল হক বিপুল ও মানিক মুনতাসির

প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে শঙ্কা

করোনাভাইরাসের মহামারীতে দেশে চলমান ছোট-বড় উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় সবগুলোর কাজই থমকে গেছে। শুধু পদ্মা সেতু ছাড়া আর কোনো প্রকল্পেই এখন কাজ চলছে না। সাধারণ ছুটির কারণে শ্রমিকরা চলে যাওয়ায় মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ অন্যান্য প্রকল্পের কাজ এমনিতেই বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় এসব প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অবস্থা স্বাভাবিক হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সব প্রকল্পের কাজ কি আগের মতোই চলবে নাকি কিছু কিছু প্রকল্পে অর্থের অপ্রতুলতার কারণে থেমে যাবে। ইতিমধ্যে সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে অর্থ কাটছাঁট করা হবে। মানুষের জন্য ব্যয় করা হবে। যাতে মহামারীর কারণে মানুষের খাবারের অভাব না হয়।

তবে আশার কথা হচ্ছে, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে যেসব মেগা প্রকল্প রয়েছে সেগুলো অর্থের বরাদ্দ থাকছে আগামী বাজেটে। মহামারীর কারণে আগামী বাজেটে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দের পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা কমবে।

গত কয়েক বছর ধরেই দেশে অবকঠামোগত উন্নয়ন বিশেষ করে রাস্তাঘাট, সেতু, শিল্প-কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, গ্রামীণ অবকাঠামোসহ বিভিন্ন পর্যায়ে উন্নয়ন কর্মকা  চলছেই। কিন্তু সেই উন্নয়ন জোয়ারে হঠাৎ করেই আঘাত হেনেছে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস (কভিড-১৯)। গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই এক ধরনের ভয় ও আতঙ্ক তৈরি হয়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ২৩ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তারপর থেকে ধাপে ধাপে সেই ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১৬ মে পর্যন্ত চলবে এ ছুটি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ছুটি আগামী ঈদ পর্যন্ত চলবে। এ ছুটির কারণে গত প্রায় দুই মাসে থমকে গেছে দেশের সব উন্নয়ন কর্মকা । গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন কর্মকা  থেকে শুরু করে বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ থেমে গেছে। সাধারণ ছুটির প্রথম সপ্তাহে চলমান মেগা প্রকল্প বিশেষ করে মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (বিআরটি), বিভিন্ন বিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পসহ অন্য সব প্রকল্পের কাজ চললেও এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্প। এ প্রকল্পে এখন কাজ চলমান। শ্রমিকদের প্রকল্প এলাকায় রেখে সেতুর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। এদিকে থেমে যাওয়া এসব প্রকল্পের কাজসহ অন্য প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মহামারীর পর চলমান এসব প্রকল্পের সবগুলো কি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে? নাকি প্রকল্পগুলোর অর্থ বরাদ্দ কমে যাবে? তবে কিছু কিছু প্রকল্প যে অর্থ সংকটে থমকে যাবে বা কাজে ধীরগতি চলে আসবে এ নিয়ে এখনই শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন শঙ্কার কারণ হচ্ছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার কমিয়ে আনছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশন ও অর্থবিভাগ সূত্র বলছে, আসছে বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ রাখা হতে পারে দুই লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের তুলনায় ৩ শতাংশের মতো বেশি। অথচ প্রতি বছর উন্নয়ন বাজেট কমপক্ষে ১৫-১৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। তবে এডিপির এ আকার এখনই চূড়ান্ত নয়। এটা খসড়া হিসাব। সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে চলমান মেগা প্রকল্পের বরাদ্দে করোনার কোনো প্রভাব পড়বে না। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলসহ অগ্রাধিকার প্রকল্পে চাহিদা অনুসারে বরাদ্দ নিশ্চিত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা পরবর্তীসময়ে অর্থনীতির মোড় ঘুরাতে মেগা প্রকল্প বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এ বিবেচনায় দ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে আগামী অর্থ বছরের জন্য দুই লাখ পাঁচ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার মূল এডিপি প্রণয়নের কাজ চলছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো যে চাহিদাপত্র দিয়েছে সেগুলো থেকে বরাদ্দ কাটছাঁট করা হয়েছে। কিন্তু মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরকার উদারতার পরিচয় দিচ্ছে। যাতে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা, মেট্রোরেল লাইন ছয় প্রকল্পে চার হাজার ২০০ কোটি টাকা, পদ্মা রেল লিংক প্রকল্পে তিন হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে দুই হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা, দোহাজারী-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্পে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী টানেল, বিদ্যুতের বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতে চার লেন প্রকল্পগুলোতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। তবে বড় প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হলে দেশে চলমান অনেক উন্নয়ন প্রকল্প থেকেই অর্থ কাটছাঁট করা হবে। যার ফলে অনেক প্রল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর