শিরোনাম
রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

শ্রমিক বিক্ষোভ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, টিয়ার শেল

প্রতিদিন ডেস্ক

শ্রমিক বিক্ষোভ পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, টিয়ার শেল

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ছয়দানা এলাকা এবং আশুলিয়া কাশিমপুরের জিরানী এলাকায় গতকাল পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ ঘটে এবং পুলিশ এক পর্যায়ে টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট বর্ষণ করে। শতভাগ বেতন প্রদানের দাবি ছাড়াও পুলিশের লাঠিচার্জে শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজবকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা এ বিক্ষোভে অংশ নেন।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন জানান, শতভাগ বেতনের দাবিতে সিটি করপোরেশনের শরীফপুর এলাকার লুইটেক্স কারখানার শ্রমিকরা গত বৃহস্পতিবার আন্দোলন, ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করলে কর্তৃপক্ষ কারখানাটি দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে দেন। ওইদিন আন্দোলন-বিক্ষোভ চলার সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে কয়েক শ্রমিক হতাহতের গুজব তুলে এবং শতভাগ বেতনের দাবিতে আবারও গতকাল সকালে শ্রমিকরা কারখানার ফটকের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ সৃষ্টি এবং গাড়ির পুরাতন টায়ারে অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরকে লক্ষ্য করে শ্রমিকরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধের ফলে ওই সড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিলে বেলা ১২টার দিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, সকাল ৭টার দিকে জিরানী এলাকার ডরিন গ্রুপের কয়েক হাজার শ্রমিক ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তারা এপ্রিল মাসের শত ভাগ বেতন ও কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বেধে যায়। পরে কাঁদুনে গ্যাস ও লাঠিপেটা করে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর তারা পাশের আশুলিয়া এলাকার কয়েকটি কারখানায় বাইরে থেকে হামলা করে ভাঙচুর করেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার কয়েকটি কারখানা ও জামগড়ার ছয়তলা এলাকার এনভয় গ্রুপ, এএম ডিজাইনসহ আশুলিয়ার অন্তত ১০টি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে আসেন। এরপর তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কসহ আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে শ্রমিকরা পাল্টা ধাওয়া দেন। এ সময় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিলে শ্রমিকরা চলে যান।

শ্রমিকরা বলেন, সরকার তাদের এপ্রিল মাসের বেতনের ৬৫ শতাংশ দিচ্ছে। কারখানার মালিকদের ৩৫ শতাংশ দিয়ে তাদের শত ভাগ বেতন পরিশোধ করতে হবে। কারখানার মালিকদের তা দেওয়ার সামর্থ্য আছে। মালিকপক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন।

কারখানার আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তাদের দিয়ে কাজ করানোর পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ শতভাগ বেতন-ভাতা দেবে না- জানতে পেরে বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ তাদের উপর চড়াও হয়ে গুলি ছুড়ে লাঠিচার্জ করে। এতে তাদের এক শ্রমিক নিহত এবং আরও কয়েকজন আহত হন বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এরই জের ধরে শ্রমিকরা গতকাল সকালে কারখানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা গুজবমাত্র। সরকার করোনা সংকটে যারা কাজে যোগ দিতে পারেনি তাদের জন্য ৬০ ভাগ বেতন প্রদানের নির্দেশ দিলেও তারা তা না মেনে শতভাগ বেতন দাবি করছেন।

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, একই (শতভাগ বেতনের) দাবিতে শুক্রবার জিরানী এলাকার ডরিন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও আন্দোলন করেন। পরে কারখানা কর্তৃপক্ষ গতকাল থেকে লে-অফ ঘোষণার নোটিস টানিয়ে দেন। সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধ দেখে বিক্ষোভ শুরু করেন। এক পর্যায়ে তারা আশপাশে বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে বিক্ষোভ ও শ্রমিকদের তাদের আন্দোলনে শরিক হতে আহ্বান জানান এবং সহকর্মীদের নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে পুলিশ শটগানের কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দুপুরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। 

এনভয় গ্রুপের মালিক ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, গতকাল সকালে তার কারখানার আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে সড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে এবং লাঠিপেটা করে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা তার কারখানায় বাইওে থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার পাশাপাশি ভাঙচুর করেন। এ অবস্থায় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তার কারখানার শ্রমিকদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। এর কয়েক ঘণ্টা পর বেশকিছু শ্রমিক পুনরায় কাজে যোগ দেন।

এদিকে ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ডিইপিজেড) এ  ওয়ান বিডি লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল ১১ বারের মতো রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এসব শ্রমিক গত জানুয়ারি মাস থেকে বেতন পাচ্ছেন না। সকাল ১০টার দিকে এ ওয়ানের শ্রমিকরা ডিইপিজেডের সামনে থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিল করে তারা ওই সড়কের বাইপাইল স্ট্যান্ডে গিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানান। পরে দুপুর ১২টার দিকে মিছিল করে পুনরায় ডিইপিজেডে গিয়ে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করেন। পুলিশের বাধার কারণে তারা আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ করেন।

শ্রমিকরা বলেন, চার মাস ধরে তারা বেতন পাচ্ছেন না। বেতন না পেয়ে তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। নিরুপায় হয়ে তারা বারবার বিক্ষোভ করছেন। এর পরও তাদের বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর