শিরোনাম
রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অর্থকষ্টে বেসরকারি স্কুল কলেজ ভার্সিটি শিক্ষকরা

করোনার অজুহাতে নামমাত্র বেতন

আকতারুজ্জামান

করোনাভাইরাস সংক্রমণের এ পরিস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীদের নামমাত্র বেতন দিচ্ছে বেশিরভাগ বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদালয়। এতে তারা চরম অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের বিনাবেতনে ছুটি কাটাতে বলেছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষরা বলছেন- শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি সংগ্রহ করা যায়নি, তাই পুরো বেতন দিতে পারেননি তারা।

জানা গেছে, রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী নামমাত্র বেতনও পাননি। আর বাকিদের দেওয়া হয়েছে আংশিক বেতন। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. গোলাম মোস্তফা প্রতিবেদককে বলেন, বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী টিউশন ফি পরিশোধ না করায় বেশ কয়েকজনকে আংশিক বেতন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বাকি বেতন পরে পরিশোধ করা হবে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে লায়ন্স অগ্রগামী বিদ্যানিকেতন স্কুলেও গত মার্চ মাসে বিভিন্ন শিক্ষক শতভাগ বেতন পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও শিক্ষকদের শতভাগ বেতন দেয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক অভিযোগ করেন যে, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষক মার্চ মাসের আংশিক বেতন পেয়েছেন। ছাত্র-ছাত্রীদের দফায় দফায় তাগিদ দিয়ে টিউশন ফি সংগ্রহ করলেও শিক্ষকদের পুরো বেতন দেয়নি এ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দেশে এখন ১০৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের গড় আয় ৩ হাজার ৮৫১ লাখ টাকা। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গড় ব্যয় ছিল ৩ লাখ ৬৯১ লাখ টাকা। ইউজিসি বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয় ক্রমে বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা যেন কাক্সিক্ষত একাডেমিক শিক্ষা পায় সেদিকে নজর রাখা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদর্শিক ও নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করে ইউজিসি।

বার্ষিক প্রতিবেদনে ব্যয়ের থেকে আয়ের পরিমাণ বেশি দেখা গেলেও বেশিরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গ বেতন দেয়নি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের।

জানা গেছে, আংশিক বেতন পরিশোধের এ তালিকায় আরও রয়েছে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব গ্লোবাল ভিলেজ বরিশাল, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বরিশাল, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক বেতন পরিশোধ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইউরোপিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ বেতন পরিশোধ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি সংগ্রহ করে শিক্ষকদের বাকি বেতন পরিশোধ করা হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক অভিযোগ করেন, তাকে মার্চ মাসের আংশিক বেতন দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে বিনাবেতনে ছুটি কাটাতে বলা হয়েছে। শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ বেতন না দেওয়ার ব্যাপারে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ছাত্র-ছাত্রীদের টিউশন ফি সংগ্রহ করে শিক্ষকদের বেতনের পাশাপাশি অনেক ব্যয় নির্বাহ করা হয়। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরাও এতে সহযোগিতা করেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সবাই সমস্যায় পড়েছেন। তিনি বলেন, বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের কাছে টিউশন ফি সংগ্রহ করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এ টিউশন ফি সংগ্রহ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তাই শিক্ষকদের আংশিক বেতন পরিশোধ করেছে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়। শেখ কবির হোসেন আরও বলেন, করোনাভাইরাসের এ অবস্থায় সরকারের কাছে ফেরত প্রদান সাপেক্ষে আর্থিক প্রণোদনার দাবি জানাই।

সর্বশেষ খবর