রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ওষুধ দোকানির হাতে চিকিৎসক লাঞ্ছিত

নিজস্ব প্রতিবেদক ও সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

সাতক্ষীরায় সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসারকে এক ওষুধ দোকানি লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোগীকে প্রেসক্রিপশনের ওষুধ না দিয়ে অন্য ওষুধ দিয়েছিলেন ওই দোকানি। দোকানিকে চিকিৎসক নির্ধারিত ওষুধ দেওয়ার কথা বললে তাকে লাঞ্ছিত করেন বলে ডা. তৈয়বুর রহমান গালিব অভিযোগ করেছেন।

ঘটনায় পুলিশ দোকানদার মনিরুল সরদারকে আটক করলেও পরবর্তীতে ডাক্তারদের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ইমার্জেন্সিতে দায়িত্বরত ছিলাম। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আমার পোস্টিং। টানা আঠারো ঘণ্টা ডিউটি ছিল। বিকাল ৩টা থেকে পরদিন সকাল ৯টা। এক রোগী এসে বললেন, স্যার একটা ওষুধ লিখেছে, দোকানি আরেকটা দিয়েছে। নার্সরা পরিবর্তন করে আনতে বলছে। পরিবর্তন করতে গেলে দোকানি বলেছে, বিক্রি জিনিস ফেরত হয় না। আমি বললাম, আবার গিয়ে বলেন ইমার্জেন্সি ডাক্তার বলছেন। ওই দরিদ্র রোগী আবার গিয়েও ওষুধ পরিবর্তন বা টাকা ফেরত পেল না। আমি মানুষটার দিকে তাকালাম। নিতান্ত দরিদ্র মানুষ। আমি বললাম, এটা তো ঠিক না। চলেন দেখি। হাসপাতালের উল্টো পাশেই দোকান। ইমার্জেন্সিতে একজনকে বসিয়ে ওই দোকানে গেলাম। দোকানে একজন লম্বা মানুষ। পাশে আরেকজন। জিজ্ঞেস করলাম, ওষুধটা সম্ভব হলে বদল করে দেন। দোকানের মালিক বললেন, বিক্রি জিনিস আমরা ফেরত নেই না। আমি বললাম, দেখেন গরিব মানুষ। আর যে ওষুধ লিখেছে, ওটা তো দেন নাই। দোকানি ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন, আপনি কে? আমি পরিচয় দিলে তাচ্ছিল্য করে বলল, ও কমিশন খেতে এসেছেন? আমি বললাম, দোকানে ওই ওষুধ না থাকলে উনার টাকা ফেরত দেন। দোকানি চিৎকার করে বললেন, বাড়ি কই আপনার? আমি বললাম, ফরিদপুর। ফরিদপুর থেকে সাতক্ষীরায় রংবাজি করেন! বলেই আমাকে বুকে একটা ধাক্কা দিলেন। এরপর বললেন, আমাকে চিনেন? যান যান। ক্যাশে টাকা নাই। আমি বললাম, এত বড় দোকানের ক্যাশে টাকা নেই? দ্বিতীয়বার ধাক্কা দেওয়ায় আমার একটা শার্টের বোতাম ছিঁড়ে গেল। আমি আর কথা না বাড়িয়ে বৃদ্ধকে বললাম চলেন যাই। তখন বাজে বিকাল ৫টা। আমি ইমার্জেন্সিতে এসে সাড়ে ৫টায় সিভিল সার্জনকে ফোন দিলাম। উনি বললেন, ইফতার শেষে কথা বলবেন। ইফতার শেষে আবার ফোন দিলাম, উনি বললেন, দোকানি বেশ ক্ষমতাশালী। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তাকে বললাম, তাই বলে আমাকে মারবে? উনি বললেন, তুমি থাক। আমি দেখছি। আমি এরপর আরও কয়েকবার তাকে ফোন দিয়েছি। কিন্তু ৯টায় আমার ইভিনিং ডিউটি শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি আমাকে দেখতে আসেননি। আমার প্রতিষ্ঠানের আরএমও হাসপাতালেই ছিলেন। তিনিও একবার আমাকে দেখতে আসেননি। আমি আহত হৃদয়ে ইমার্জেন্সি থেকে ৯টায় বের হয়ে আসি। খেয়াল করলাম, জামার দুইটা বোতাম ছিঁড়ে গেছে।’

সাতক্ষীরা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান জানান, চিকিৎসকের সঙ্গে দোকানদারের বাকবিত-া ও লাঞ্ছিত করার অভিযোগের ভিত্তিতে দোকানদারকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু সিভিল সার্জন ও মেডিকেল অফিসার ডা. তৈয়েবুর রহমান গালিবের পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. হুসাইন সাফায়ত বলেন, ডা. তৈয়েবুর রহমান গালিবের ওপর কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। ভুল বোঝাবুঝির কারণে বাকবিত-া হয়েছিল মাত্র। তাই দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে মিটমাট করে নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর