সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না

শিক্ষা-সংশ্লিষ্টদের অভিমত

আকতারুজ্জামান

ধীরে ধীরে সবকিছু খুলে দিলেও করোনা পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া এবং সংক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই খুলে দেওয়া সঠিক হবে না। এমনটাই মনে করছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। বিচ্ছিন্নভাবে কেউ কেউ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় খোলার যে দাবি জানাচ্ছেন সেটিকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষাবিদরা বলছেন, করোনা সংক্রমণ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা যাবে না। কারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা একেবারেই অসম্ভব হবে। দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিকক্ষের যে অবকাঠামো এবং একেকটি শ্রেণিতে যতসংখ্যক শিক্ষার্থী, তাতে কোনোভাবেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে তো একেবারেই অসম্ভব। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি না করে যতটুকু সময় নেওয়া যায় সেটিই উত্তম হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে এবং শিক্ষার্থীদের জীবনকে শঙ্কায় না ফেলতে ১৭ মার্চ থেকে সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৩১ মে পর্যন্ত এই বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোও হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সময় নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শিক্ষাবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল-কলেজের একাডেমিক ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনলাইন ক্লাসে জোর দিতে বলেছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হওয়ার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ নেই। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার অনুপাতে শ্রেণিকক্ষের পরিমাপ পর্যাপ্ত বড় নয়। এ ছাড়া ক্লাসে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা যাবে না। একই অবস্থা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তথ্যপ্রযুুক্তির সাহায্যে অনলাইনে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক পাঠ এগিয়ে নেওয়া দরকার, যাতে করোনা স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রয়োজনীয় ক্লাস নিয়ে সেশনজট এড়ানো যায়। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু বলেন, কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ফাঁদে পড়ে মহামারীর এই সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে না। করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। কারণ স্কুল-কলেজ খুললে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দূরত্ব নিশ্চিত করা অসম্ভব হবে। তিনি বলেন, বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন ব্যয় নির্বাহ করে। তাই আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সব স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি মওকুফ করার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান। একই সঙ্গে শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত প্রণোদনারও দাবি জানিয়েছেন তিনি। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। তাই সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পরই স্কুল-কলেজে যাবে ছাত্র-ছাত্রীরা। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা মেনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।’

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের দুর্যোগ কেটে যাওয়ার আগেই যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠানো হয়, তবে উপসর্গ ছাড়াই অনেক শিক্ষার্থীর আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংক্রমণ ছড়ানোর পাশাপাশি আক্রান্ত শিক্ষার্থীরা বাড়িতে বাবা-মাসহ আত্মীয়স্বজনের মধ্যেও ছড়িয়ে দিতে পারে এ রোগ। তাদের মাধ্যমে রোগ বেশি ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। কারণ স্কুল-কলেজ খোলা রেখে কোনোভাবেই ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখার বিকল্প নেই এমনটাই মনে করেন তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সুরক্ষার দিকটাতে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি। তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চাই, কোনো শিক্ষার্থীর একাডেমিক পাঠ ক্ষতিগ্রস্ত না হোক।’

সর্বশেষ খবর