সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ওরা শেষ যাত্রার সঙ্গী

ভয়কে জয় করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করাদের জানাজা ও দাফন

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে মারাত্মক ছোঁয়াচে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যাচ্ছেন, ইচ্ছা থাকলেও তাদের শেষ বিদায়ের সময় থাকতে পারছেন না স্বজনরা। স্বজনদের এই অপারগতায় মৃতদেহ সৎকারে ঝুঁকি নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন কিছু স্বেচ্ছাসেবক। ঢাকার আল মারকাজুল ইসলামী নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১৫ জনের একটি দল একের পর এক করে যাচ্ছে জানাজা ও দাফন। নারায়ণগঞ্জের মৃতদেহগুলো সেখানকার কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ ও তার দল দাফন করেছেন। এ ছাড়া চট্টগ্রামসহ অন্যান্য স্থানে পুলিশসহ ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা দাফন করেছেন। এর বাইরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও মৃতদেহ দাফনে একটি টিম গঠন করা হয়। এ ছাড়া বাহিনী হিসেবে পুলিশ এবং ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে দাফন টিমে অংশ নেয়। পরবর্তীকালে পাথওয়ে নামে আরও একটি বেসরকারি সংগঠনও এগিয়ে আসে করোনায় মৃতদের দাফনে। মহামারীতে প্রাণ হারানো এসব হতভাগার শেষ যাত্রার সঙ্গী হচ্ছেন এ স্বেচ্ছাসেবকরাই।

জানা যায়, কভিড-১৯ মৃতদের সৎকারে কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে আল মারকাজুল ইসলামী। পুরো দলটি মোহাম্মদপুরে সংগঠনের প্রধান কার্যালয়ে থাকছে এখন। মৃতদেহ সৎকারে প্রথমদিকে ঢাকার বাইরে কিশোরগঞ্জ এবং মানিকগঞ্জে সংগঠনের দুটি দল থাকলেও যেহেতু ঢাকায় মৃত্যুর হার বেশি, তাই তাদের সবাইকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছে। বর্তমানে সংস্থাটি ঢাকা ও আশপাশের অঞ্চলেই কাজ করছে। এর বাইরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকেও মৃতদেহ দাফনে একটি টিম গঠন করা হয়। এ ছাড়া বাহিনী হিসেবে পুলিশ এবং ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকে দাফন টিমে অংশ নেয়। পরবর্তীকালে পাথওয়ে নামে আরও একটি বেসরকারি সংগঠনও এগিয়ে আসে করোনায় মৃতদের দাফনে।

আল মারকাজুল ইসলামের চেয়ারম্যান হামজা শহিদুল বলেন, শনিবার পর্যন্ত আল মারকাজুল ইসলাম ১৬০ জনের মৃতদেহ ঢাকায় দাফন করেছে। এর মধ্যে ২৫ জন ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আর সব মিলে ঢাকা শহরে ২২০ জনের দাফন হয়েছে মারকাজুলের মাধ্যমে। ঢাকার বাইরে কোনো দাফন কাজে অংশ নেয়নি সংগঠনটি। ১৬০ জনের বাইরে যাদের দাফন করা হয়েছে তারা করোনা উপসর্গ অথবা করোনাভাইরাসের ভয়ে তাদের মৃতদেহ কেউ নিচ্ছিল না অথবা কোনো আত্মীয়স্বজন আসেননি। তিনি বলেন, সব প্রকার ইকুইপমেন্ট স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। তবে তারা এখন পর্যন্ত কোনো ফান্ড দেয়নি। নিজেদের যানবাহনে চলছে সব কাজ। ১৮ জনের টিমে তিনজন নারী ও ১৫ জন পুরুষ রয়েছেন। তারা সবাই দীর্ঘদিন ধরে ঘরবাড়ি ছাড়া। সবাই পরিবার ছেড়ে মানবতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। তারা সবাই ভালো আছেন। সংগঠনের অফিসেই তাদের খাওয়া-দাওয়া ও থাকা চলছে।

করোনাভাইরাসের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে এগিয়ে আসে রহমতে আলম সমাজসেবা সংস্থা। এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করেছে সংস্থাটি। রহমতে আলম সমাজসেবা সংস্থার চেয়ারম্যান এবং সাবেক সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আতাউর রহমান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিয়েই আমরা করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করছি। করোনা সংক্রমণের ভয়ে একজন মৃত ব্যক্তির আত্মীয় তার কাছে যেতে পারছে না আবার এই লাশগুলোর জানাজা ভালোভাবে হচ্ছে না। হিন্দু লাশগুলোর সৎকার হচ্ছে না। এ পর্যন্ত শুধু মারকাজুল ইসলামী ছাড়া এই কাজে কোনো সংস্থাকে এগিয়েও আসতে  দেখিনি। আর সংস্থাটির একার পক্ষেও এই কাজ করা কষ্টকর।  মুসলমান হিসেবে বিবেকের কারণেই আমরা এই সংকটময় পরিস্থিতিতে করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির লাশ দাফনে এগিয়ে আসি। দেখা যায় যে, একটি লাশ সাত-আট ঘণ্টা ধরে মাটিতে পড়ে থাকলেও এর কাছে কেউ আসে না। আর আমাদের কাছে সংশ্লিষ্ট জায়গা থেকে ফোন এলে আমরা লাশগুলো সংগ্রহ করি। আতাউর রহমান বলেন, আমরা ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে এই লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছি। আমাদের ১৪ জনের দুটো গ্রুপ কাজ করে। সকালে একটি এবং বিকালে আরেকটি গ্রুপ কাজ করে। আর লাশ দাফনের জন্য মৃত ব্যক্তির জানাজার কাপড়, দাফনকারী ব্যক্তির জন্য একবার ব্যবহারযোগ্য পিপিইসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রীর খরচ আমাদের প্রতিষ্ঠানই বহন করে। গড়ে একটি লাশ দাফন করতে আমাদের ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়। ব্যক্তিগত ফান্ডসহ বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের আর্থিক সহযোগিতায় দাফনের কাজ হচ্ছে। আর আমাদের প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে এ কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছে। রহমতে আলম সমাজসেবা সংস্থার চেয়ারম্যান বলেন, দীর্ঘ চাকরিজীবন শেষে কল্যাণমূলক কাজ করার ইচ্ছা থেকেই গত এক বছর আগে এই সংগঠনটি গড়ে তোলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর