সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

কুসংস্কারের শিকার হালদার ডলফিন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কুসংস্কারের শিকার হালদার ডলফিন

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ২০১৮ সালে করা জরিপে ডলফিন ছিল প্রায় ১৭০টি। কিন্তু আড়াই বছর সময়ের মধ্যে ২৪টি ডলফিন হত্যা করা হয়। কুসংস্কারের শিকার হয়েছে হালদার ডলফিন।    

গত ২১ মার্চ রাউজান অংশের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের আজিমের ঘাট এলাকায় একটি মৃত ডলফিন পাওয়া যায়। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাউজান উপজেলার উরকিরচর ইউনিয়নের জিয়া বাজার এলাকার ছায়ারচর স্থান থেকে কাটা অবস্থায় একটি প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে ডলফিন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এটিকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। ডলফিনটির দৈর্ঘ্য পাঁচ ফুট দুই ইঞ্চি ও ওজন প্রায় ৫২ কেজি। তবে অতীতে অধিকাংশ ডলফিন ইঞ্জিনচালিত বোট বা বালু উত্তোলনকারী ড্রেজারের আঘাতে মারা গেলেও এবারেরটির চিত্র ভিন্ন। এটির মাথা বরাবর আড়াআড়িভাবে এবং ঘাড় থেকে লেজ পর্যন্ত কেটে হত্যা করা হয়। সেই সঙ্গে ডলফিনের চর্বিও কেটে নেওয়া হয়। প্রাণিবিদ্যা গবেষকদের ধারণা, ডলফিনের শরীরে প্রচুর পরিমাণ চর্বি থাকে। এ চর্বি থেকে এক ধরনের তেল তৈরি করে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার একটা প্রথা আছে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ডলফিন থেকে পাঁচ থেকে সাত কেজি চর্বি পাওয়া যায়। মিথ্যা ধারণা এবং কুসংস্কারের কবলেই পড়েছে হালদার ডলফিন। এটিকে ডাঙায় তুলে কেটে চর্বি নিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, অতীতে ইঞ্জিনচালিত বোট বা ড্রেজারের আঘাতে ডলফিনের মৃত্যু হলেও এবারেরটিকে হত্যাই করা হয়েছে। এভাবে কাটা অবস্থায় এটিই প্রথম। ধারণা করছি, ডলফিন থেকে চর্বি নিয়ে এক ধরনের তেল তৈরি করে ভেষজ ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করবে। এটি একটি মিথ্যা ধারণা এবং কুসংস্কার। মিথ্যা ধারণার কবলেই পড়েছে হালদার ডলফিন। এবারের ঘটনাটি হালদা নদীর ডলফিন সংরক্ষণে একটি অশনি সংকেত। এটা অত্যন্ত নৃশংস ঘটনা। ফলে হালদার ডলফিন রক্ষা কঠিন হবে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, বারবার হালদা নদী থেকে ডলফিন উদ্ধার খুবই দুঃখজনক। অথচ গত দেড় বছরে প্রায় ১০০ অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ড্রেজার বন্ধ, জরিমানা, কারাদন্ডসহ বিভিন্নভাবে সাজা দেওয়া হয়। তবুও ঘটনা ঘটেছে। জানা যায়, হালদা নদীতে যে ডলফিনের দেখা মেলে, তা গাঙ্গেয় ডলফিন প্রজাতির। ইংরেজিতে একে বলা হয় গেঞ্জেস রিভার ডলফিন, বৈজ্ঞানিক নাম ‘প্লাটানিস্টা গেনজেটিকা’। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় হুতুম বা ?শুশুক।  ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) গাঙ্গেয় ডলফিনকে বিপন্ন হিসেবে লাল তালিকায় রেখেছে। এ প্রজাতির ডলফিন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের নদীতে দেখা যায়। এর মধ্যে ভারতের গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র, বাংলাদেশের পদ্মা, সুন্দরবনের আশপাশের নদী এবং চট্টগ্রামের হালদা ও কর্ণফুলী এর বিচরণ ক্ষেত্র।

সর্বশেষ খবর