মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

রমনার সবুজে বাহারি টিয়া

মোস্তফা কাজল

রমনার সবুজে বাহারি টিয়া

রমনা পার্কের সবুজ প্রকৃতির নতুন অলঙ্কার বাহারি টিয়া পাখির দল। অসংখ্য টিয়া পাখির নতুন আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে ঢাকার ‘ফুসফুস’ হিসেবে পরিচিত এ রমনা পার্ক। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ পার্কে টিয়াসহ অগণিত পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন ভরিয়ে দেয়। সরকারি এ পার্কে রয়েছে ঘন ঘাস, লতাগুল্ম, ছোট ও মাঝারি গাছ ও মৌসুমি ফুল। এখানে অতি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে অচেনা নান্দনিক পাখির সমাহার। এসব পাখির কলকাকলিতে প্রশান্তি খুঁজে পাওয়ার সুযোগ আছে এ পার্কে। অট্টালিকাবদ্ধ এ রাজধানীর দুই সিটিতে দুই কোটি মানুষের বসবাস। রাজধানীর ঢাকার অন্যতম একটি বিনোদন কেন্দ্র ও মুক্ত জায়গা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এ পার্কটি। এ ছাড়া পার্কে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে অসংখ্য স্বাস্থ্য সচেতন পুরুষ ও মহিলা ব্যায়াম করেন। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে সব ধরনের দর্শনার্থীর প্রবেশ বন্ধ রয়েছে। এ পার্কে ফুল ও নান্দনিক গাছের বদলে বনজ ও ফলদ গাছের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। জাতীয় ফুল শাপলাসহ বিভিন্ন জলজ ফুল শোভা পাচ্ছে এ পার্কের লেকে। রমনা লেকটি জলজ ফুল দিয়ে শোভিত করায় দেশের ঐতিহ্য ও এখানকার জীববৈচিত্র্য অনেকটা রক্ষা করছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া পার্কের শতবর্ষী ও ঐতিহ্যবাহী গাছগুলোরও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। এসব বড় বড় গাছে বসবাস করছে নানা প্রজাতির টিয়া পাখির দল। এসব পাখি দেখতে সবুজ, লাল ও কচি কলাপাতা রঙের। আরও আছে কাঠবিড়ালী, বক, ময়না, চড়ই, মুনিয়া ও কোকিল পাখি। পাখি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রায় দুই মাস ধরে সারা দেশে চলছে সরকারি নির্দেশে সাধারণ ছুটি। ফলে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। দেশজ ঐতিহ্যবাহী নান্দনিক ও ফুলজ গাছ রমনা পার্কে রোপণ করায় প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা পাচ্ছে। এতে পার্ক হিসেবে রমনা আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। পরিবেশবাদীরা এ জন্যই রমনা পার্কের নাম দিয়েছেন রাজধানীর ফুসফুস। রমনা পার্ক শুধু ঢাকা শহরের নয়, বরং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী একটি পার্ক। এটি বর্তমানে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে। পার্কের বর্তমান আয়তন ৬৮ দশমিক ৫ একর। এর লেকের আয়তন ৮ দশমিক ৭৬ একর। ১৬১০ সালে ঢাকায় মোগলদের শাসন পাকাপোক্ত হওয়ার পর বাগানের অনুরাগী মোগলরা এ উদ্যান তৈরি করেছিলেন। তখন এর নাম ছিল বাগ-ই-বাদশাহি। এখনকার ইস্কাটন থেকে নীলক্ষেত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সচিবালয় পুরো এলাকাই ছিল রমনা পার্কের চারপাশে। কোম্পানি আমলে রমনার দক্ষিণের একটি অংশে রেসকোর্স প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট চার্লস ডস। পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার গাছ আছে রমনা পার্কে। এর মধ্যে ৭১ প্রজাতির ফুল, ৩৬ প্রজাতির ফল, ৩৩ প্রজাতির ঔষধি গাছ, ৪১ প্রজাতির বনায়ন এবং ১১ অন্যান্য প্রজাতির গাছ আছে। দেশীয় নানা প্রজাতির পরিচিত গাছ ছাড়াও রয়েছে পলাশ, পীতপাটলা, কাউয়াতুতি, আগর, জ্যাকারান্ডা, তমাল, বাওবাব, গিরিসিডিয়া, কর্পূর, স্কারলেট কর্ডিয়া, লালসোনাইল, মাধবী, মালতী, টিউলিপ, অশোক, পাখিফুল, উদয়পদ্ম, গোল্ডেন শাওয়ার, পালাম, ঝুমকো, লতাপারুল, স্থলপদ্ম ছাড়া আরও নাম না জানা কিছু গাছও দেখা যায়। বিভিন্ন প্রকারের ফুল থাকার ফলে সারা বছরই কোনো না কোনো ফুল দেখা যায় রমনা পার্কে। এখানে অসংখ্য ছোট-বড় গাছ থাকায় হরেক রকমের পাখি বাস করে। যারা প্রকৃতিপ্রেমী বা সবুজ অরণ্য ভালোবাসেন রমনা পার্কে গেলে পাখির কলকাকলিতে তাদের প্রাণ নেচে ওঠে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর