মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বিশ্বে মৃত্যু বেড়ে ২ লাখ ৮৫ হাজার

চীনের সেই উহানে আবার করোনা

প্রতিদিন ডেস্ক

বিশ্বে মৃত্যু বেড়ে ২ লাখ ৮৫ হাজার

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে (কভিড-১৯) গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বে মৃতের সংখ্যা নতুন করে চার হাজার বেড়ে মোট সংখ্যা এখন দুই লাখ ৮৫ হাজার হয়েছে। আগের দিনও ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজার ছিল। গতকাল বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এদিকে চীন ও উহানে আবার করোনা ছড়িয়েছে। রাশিয়ায়ও রোগীর সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে করোনায় সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে রবিবার পর্যন্ত ১৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুর সংখ্যা ছিল অন্তত ৮১ হাজার। সবচেয়ে বিপর্যস্ত হয়ে আছে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য। সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩ লাখ মানুষ। মারা গেছেন অন্তত ২৭ হাজার মানুষ। করোনায় মৃতের দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পরই রয়েছে যুক্তরাজ্যের অবস্থান। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোগীর মধ্যে ৩১ হাজার ৯৩০ জন মারা গেছেন।

ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে সবার ওপরে আছে স্পেন। দেশটিতে রবিবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ২৬ হাজার ৬২১ জনের। করোনা সংকটের কারণে স্পেনে আরোপিত কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হলেও লকডাউনের মেয়াদ চতুর্থ দফায় আগামী ২৪ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ১৯ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছেন ৩০ হাজার ৫৬০ জন। মহামারী করোনা আক্রান্তের দিক দিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে রাশিয়া। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৬৮৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৯১৫ জনের।

লকডাউন শিথিলের পর জার্মানিতে বাড়ছে সংক্রমণ : জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল করোনা লকডাউন শিথিল করার কয়েকদিনের মধ্যেই দেশটিতে ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, দেশটিতে এখন প্রত্যেক আক্রান্ত ব্যক্তি দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার হার একের চেয়ে বেশি। এর অর্থ হলো দেশটিতে সংক্রমণ বাড়ছে। গত শনিবার লকডাউন প্রত্যাহারের দাবিতে কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভের পর এই তথ্য সামনে এলো। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে। জার্মানিতে  করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে সাত সহস্রাধিক মানুষের। 

রাশিয়ায় রোগী বাড়ছেই : রাশিয়ায় এখন প্রতিদিন ১০-১২ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। সংক্রমণের ধারা দেখে মনে হচ্ছে পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যায় অন্যদের টপকে যুক্তরাষ্ট্রের পরের অবস্থানে চলে আসবে রাশিয়া। যদিও  দেশটিতে মৃত্যু এখনো বেশ কম। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, করোনা মহামারীর শুরুতেই এটি প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়েছিল রাশিয়া। স্পুটনিকসহ দেশটির বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যমতে, গত ২৪ এপ্রিল রাশিয়া করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে পরীক্ষা কর্মসূচি শুরু করে। এর আগের দিন ২৩ জানুয়ারি চীনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। এক সপ্তাহ পর গত ৩০ জানুয়ারি  দেশটিতে প্রথম দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হন। তারা দুজনই অবশ্য চীনা নাগরিক। এর পরদিন ৩১ জানুয়ারি থেকে চীনা নাগরিকদের রাশিয়া ভ্রমণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আর ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে তো চীনা নাগরিকদের রাশিয়ায় প্রবেশ নিষিদ্ধই করা হয়। প্রথম শনাক্ত হওয়া দুই রোগীকে দ্রুত আলাদা করে চিকিৎসা শুরু করে রুশ কর্তৃপক্ষ। এর ফলে গত মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে আর রোগীর সংখ্যা বাড়েনি। কিন্তু ২ মার্চ  থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে দেশটিতে। ২৩ মার্চ থেকে পুরো বিশ্বের সঙ্গে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করে দেয় রাশিয়া। এর আগে ১৫ মার্চ থেকে নরওয়ে ও পোল্যান্ডের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় দেশটি। এ সময় থেকে রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানি ও ফ্রান্সের মধ্যে ট্রেন চলাচলও বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। মার্চের মধ্যেই মস্কোসহ রাশিয়ার বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন আরোপ করা হয়, জারি করা হয় ঘরে থাকার নির্দেশ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বন্ধ করে দেওয়া হয় বিনোদন কেন্দ্রগুলো।

করোনা মোকাবিলায় রাশিয়া পরীক্ষা কর্মসূচির ওপর ব্যাপক জোর দিয়েছিল। গত শনিবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৪ কোটি মানুষের দেশটিতে পরীক্ষা করা হয়েছে ৫৪ লাখ ৪৮ হাজারের বেশি মানুষকে। অর্থাৎ জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি ১০ লাখে পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৩৩৫ জনকে। এতকিছুর পরও শেষ রক্ষা হয়নি। গতকাল রাশিয়ায় শনাক্ত হওয়া করোনা  রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গতকাল দেশটিতে শনাক্ত হয়েছে ১১ হাজার ১২ জন। এ নিয়ে টানা ৮ দিন রাশিয়ায় দৈনিক ১০ হাজারের বেশি সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। দেশটিতে মোট রোগী রয়েছেন ২ লাখ ৯ হাজার ৬৮৮ জন। রাশিয়ার বেশির ভাগ রোগীই মস্কো বা এর আশপাশের এলাকার। এ কারণে দেশটিতে এরই মধ্যে কিছু এলাকায় লকডাউন শিথিল করা শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

রুশ কর্তৃপক্ষ জানায়, পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাশিয়ায় করোনায় মারা গেছেন ৮৮ জন। এ নিয়ে দেশটিতে ১ হাজার ৯১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারি হিসাবের চেয়ে রাশিয়ায় করোনায় মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে দাবি করেছে দেশটির বিরোধী দলসমর্থিত চিকিৎসকদের একটি সংগঠন।

চীন ও উহানে আবার করোনার ঢেউ : চীনে আবার দেখা দিয়েছে করোনার সংক্রমণ। গতকাল সে দেশে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে নতুন করে ১৭ জন সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এর মধ্যে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র উহান শহরে ৫ জন সংক্রমিত হয়েছেন। বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, চীনে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় করোনার নতুন সংক্রমণ দুই অঙ্কে পৌঁছল। এখানে উদ্বেগের বিষয় হলো যে, চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জিলিন প্রদেশের শুলান নগরে গুচ্ছাকারে করোনার সংক্রমণ ঘটছে। এএফপির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, চীনের উহান ছিল বিশ্বজুড়ে ভাইরাস ছড়ানোর কেন্দ্র। তবে গত মাসে সেখানে নতুন করে সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। সেখানে গত দুই দিন ধরে আবার সংক্রমণের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। এ ঘটনাকে করোনার সংক্রমণের আরেকটি তরঙ্গ বলে সতর্ক করা হচ্ছে। গতকাল চীনের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে আরও ৫ জনের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহে সেখানে ১১ জন লন্ড্রির কর্মীর সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। শুলান নামের শহরটি দ্রুত লকডাউন করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ। সেখানে প্রায় ৬৭ লাখ মানুষ বাস করেন। উহান থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়া চীনের উহান নগরে এক মাসেরও বেশি সময় পর আবার নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে। গত পাঁচ সপ্তাহের মধ্যে এই প্রথম শহরটিতে নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হলো। বিবিসি জানায়, নতুন শনাক্ত ব্যক্তির বয়স ৮৯ বছর। তার অবস্থা সংকটজনক বলে জানানো হচ্ছে। তিনি যে এলাকায় বাস করতেন সেখানে পুনরায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। 

তিন মাস পর খুলল সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ড : করোনাকে হারিয়ে ছন্দে ফিরছে চীন। বিধিনিষেধ থাকলেও বাড়ি থেকে বের হওয়ার অনুমতি পেয়েছেন চীনের বাসিন্দারা। তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় পুরনো ছন্দে ফেরাতে গতকাল থেকে খুলে গেছে সাংহাইয়ের ডিজনিল্যান্ড। তবে অবশ্যই বেশকিছু নিয়মকানুন মেনে মিলছে সেই পার্কে ঢোকার অনুমতি। জানা গেছে, খোলার প্রথমদিনের টিকিট বুকিং শুরু হতেই নিমিষে বিক্রি হয়ে যায় টিকিট। মূলত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রি-বুকিং হয়েছে। বিনোদন পার্কের মোট পর্যটকের মাত্র ৩০ শতাংশকে পার্কে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হয়। মানতে হয় বিবিধ নিয়মকানুন। নতুন বসানো লাউড স্পিকারে ঘন ঘন ঘোষণা করা হয়। বিনোদনমূলক রাইড হোক কিংবা লাইন, সর্বত্রই কড়াভাবে সামাজিক দূরত্ব কার্যকর করা হয়। মাস্কে মুখ ঢাকা বাধ্যতামূলক। পার্কে ঢোকার আগে শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। মাপা হয় তাপমাত্রা। তারপরই মেলে পার্কে ঢোকার ছাড়পত্র।

৫ ধাপে উঠছে যুক্তরাজ্যের লকডাউন : যুক্তরাজ্যে আগামী ১ জুন থেকে স্কুল, ১ জুলাই থেকে ক্যাফে-রেস্টুরেন্টগুলো চালু হতে শুরু করবে। ২০ জুলাই থেকে মসজিদে নামাজ আদায় ও সীমিত পরিসরে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে। ১০ আগস্ট থেকে উঠে যাবে সব বিধিনিষেধ। লকডাউন থেকে দেশকে বের করে আনতে এ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ১৮ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত পাঁচটি ধাপে এটি কার্যকর করা হবে। গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই পরিকল্পনা জাতির সামনে তুলে ধরেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ১৮ মে প্রথম ধাপে আউটডোর ওয়ার্কার  যেমন বিল্ডার, গার্ডেনার ও কিছু রিটেইল খুলে দেওয়া হবে। লোকজন সর্বোচ্চ চারজন বন্ধু ও আত্মীয়ের সঙ্গে বাইরে মিলিত হতে পারবেন। তবে মেনে চলতে হবে সামাজিক দূরত্ব। ১ জুন দ্বিতীয় ধাপে স্কুল খুলবে। ওয়ার্কাররা কাজে ফিরতে পারবেন। কর্মক্ষেত্রে থাকতে হবে দুই মিটার দূরত্বের সুযোগ। হোম ভিজিট করতে পারবেন সীমিত সময়ের জন্য। তবে ৪ জনের বেশি একসঙ্গে দেখা করতে পারবে না।  তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। রেস্টুরেন্ট মালিকদের পরিচ্ছন্নতায় আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ২০ জুলাই চতুর্থ ধাপে মসজিদ, চার্চসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। সীমিত পরিসরে বিয়ের আয়োজনে কোনো বাধা থাকবে না। হোটেল, পর্যটন কেন্দ্রগুলো খুলে দেওয়া হবে। তবে হার্ড ড্রিঙ্কসের বারগুলো বন্ধ থাকবে।

সর্বশেষ খবর