মঙ্গলবার, ১২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ছেলের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মামলা দায়ের মায়ের

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাদকের টাকা না দেওয়াই ছিল মা নুরুন্নাহার রুনুর (৫১) অপরাধ। অতীতের মতো নিজের সন্তানই মেরে রক্তাক্ত করল গর্ভধারিণী মাকে। অভাগিনী এই মায়ের প্রতি মুহূর্তের আতঙ্ক এখন তারই গর্ভজাত সন্তান খান মিল্লাত হোসেন (২৫)। বিশ্ব মা দিবসে পৃথিবীর সব সন্তান যখন সারাটি জীবন মায়েদের ত্যাগ ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে, ঠিক এই সময়ে এক দুঃখিনী মা তাঁর বখে যাওয়া সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি জানিয়েছেন। আর সহ্য করতে না পেরে এবং কোনো উপায় না পেয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন থানা পুলিশের। তবে গত পাঁচ দিনেও ছেলে গ্রেফতার না হওয়ায় মায়ের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। ঘটনাটি রাজধানীর গ্রিন রোডের সরকারি আবাসিক এলাকার।

জানা গেছে, সরকারি কর্মকর্তা মেয়ের নামে বরাদ্দকৃত একটি সরকারি ডরমেটরিতে ছেলে মিল্লাতকে নিয়ে থাকেন মা নুরুন্নাহার রুনু। তার গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। স্বামী কয়েক বছর আগে মারা যান। মেয়ে লেখাপড়া শিখে ভালো চাকরি করলেও দুই সন্তানের মধ্যে ছেলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেই উচ্ছন্নে যায়। জড়িয়ে পড়ে মাদক সেবন-ব্যবসাসহ নানা অপরাধে। মাঝেমধ্যেই মাদকের টাকার জন্য সে হামলে পড়ে অভাগিনী মায়ের ওপর। ভাঙচুর করে ঘরের সব দামি আসবাবপত্র। ৭ মে মধ্যরাতে মা রুনুকে মাদকের টাকার জন্য মেরে রক্তাক্ত করে মিল্লাত। সহ্য না করতে পেরে ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তার পরামর্শে পরদিন দুপুরে কলাবাগান থানায় ছেলের নামে মামলা করেন মা। নম্বর ০১/৪৬। বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন অভাগিনী মা। একপর্যায়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘৭ মে মধ্যরাতে মাদক কেনার টাকার জন্য প্রথমে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, এরপর কাঠের একটি লাঠি দিয়ে মারধর করে। আমি মাথায় ও কানে আঘাত পাই। আমি মেঝেতে পড়ে গেলে আমাকে লাথি মেরে ঘর থেকে জিনিসপত্র ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ভবিষ্যতে মাদকের টাকা না পেলে সে আমাকে আবার জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘মিল্লাত অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। এর পরই সে বখে যায়। পাড়ার খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মিশে মাদক সেবন করে। সে মাদকের টাকার জন্য প্রায়ই ঘরে ভাঙচুর ও আমাকে মারধর করে। তাকে ভালো করার জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছে। মাদকাসক্তি পুনর্বাসন কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাকে ভালো করা যায়নি। ২০১৭ সালে ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে সে।’

ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে অভাগিনী মা বলছিলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম ওই রাতে আমাকে খুনই করে ফেলবে মিল্লাত। প্রায় দুই ঘণ্টা আমাকে বেদম পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে রাত পৌনে ১টার দিকে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে দরজা খুলে দৌড়ে নিচে যাই। নিচতলার ফ্ল্যাটের লোকজন পুলিশে খবর দেন।’

নুরুন্নাহার বলছিলেন, ‘মৃত্যুর আগেই আমি আজরাইলকে দেখেছি। এর পর থেকে আমি এক মুহূর্তও ঘুমাতে পারিনি। এই বুঝি জানালার গ্রিল কেটে বাসায় ঢুকে আমার খাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মিল্লাত। যেদিন মামলা করেছি, সেদিন সন্ধ্যায় এসেই হুমকি দিয়ে গেছে, আামকে আবার এসে খুন করবে।’

এ বিষয়ে কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিতোষ চন্দ্র বাংলাদশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওই বখাটেকে গ্রেফতারের জন্য থানার একটি টিমসহ ডিবিও কাজ করছে। একই সঙ্গে মায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট বিটের অফিসারকে বলা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর