শিরোনাম
বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বকেয়া বেতন ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে পোশাক শ্রমিকদের বিক্ষোভ-ভাঙচুর

প্রতিদিন ডেস্ক

বকেয়া বেতন ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের তিন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। অন্যদিকে গাজীপুরে শতভাগ বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে ফের পোশাকশ্রমিকরা বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও ভাঙচুর করেছেন। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

নারায়ণগঞ্জ : বকেয়া বেতন পরিশোধ ও ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছেন তিনটি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার দুই শতাধিক শ্রমিক। গতকাল দুপুর ১টায় শহরের বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) কার্যালয়ের সামনে ফকির গার্মেন্টস, ফাহিম অ্যাপারেলস ও আলপাইন নিট ফেব্রিক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা ওই সমাবেশ করেন। এর আগে বেলা ১১টায় চাষাঢ়া শহীদ মিনারে তিনটি গার্মেন্টের শ্রমিকরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে সেখান থেকে একটি মিছিল শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ঘুরে বিকেএমইএ কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়। ফকির গার্মেন্টসের আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, কোনো ঘোষণা ছাড়া ৬০ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। ফাহিম অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা জানান, ‘কারখানার ১২০ জন শ্রমিকের মধ্যে কিছু শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হলেও অর্ধেকের বেশি শ্রমিকের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। বেতন পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। আলপাইন নিট ফেব্রিক্স লিমিটেডের শ্রমিকরা জানান, ‘২৫০ থেকে ৩০০ শ্রমিকের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলের বেতন বকেয়া রয়েছে। দিই-দিচ্ছি করে মালিকপক্ষ বেতন পরিশোধ করছেন না। তাই বাধ্য হয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন।’ শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করা গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র নারায়ণগঞ্জ জেলা সভাপতি এম এ শাহীন বলেন, ‘ফকির গার্মেন্টসের ৬০ জন শ্রমিক ছাঁটাইয়ের বিষয়ে মালিকপক্ষ, শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের যৌথ বৈঠক চলছে। দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মালিকপক্ষ। এ ছাড়া ফাহিম অ্যাপারেলস ও আলপাইন নিট গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া বেতন আগামী বৃহস্পতিবার পরিশোধ করা হবে মর্মে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শিল্পপুলিশ আশ্বাস দিয়েছে। ফলে শ্রমিকরা বাসায় ফিরে গেছেন।’ এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রমিক জাগরণ মঞ্চের কেন্দ্রীয় ও জেলা সংগঠক জাহাঙ্গীর আলম গোলক, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সহসভাপতি অঞ্জন দাস প্রমুখ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ পরিদর্শক (ইনটেলিজেন্স) শেখ বশির আহমেদ বলেন, ফকির গার্মেন্টসে ছাঁটাইয়ের বিষয় সমাধানে বৈঠক চলছে। তিনি আরও বলেন, ফাহিম অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা এপ্রিলের বেতন দাবি করছেন। যেহেতু কারখানাটি মার্চ থেকে বন্ধ তাই মালিকপক্ষ বেতন দিতে পারবেন না জানিয়েছেন। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে। আর আলপাইন নিট গার্মেন্টস শ্রমিকদের মূলত মার্চের বেতন বকেয়া। এর মধ্যে ৯০ জন শ্রমিক মোবাইলে বেতন আজকেই পেয়ে যাবেন। অন্যরা বেতন বৃহস্পতিবারের মধ্যে পেয়ে যাবেন। এ আশ্বাসে শ্রমিকরা বাসায় ফিরে গেছেন। এ বিষয়ে জানতে ফাহিম অ্যাপারেলসের চেয়ারম্যান মো. শাহিন, আলপাইন নিট ফেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. দেলোয়ার ও ফকির গার্মেন্টসের নির্বাহী পরিচালক শ্যামলের মোবাইলে একাধিবার ফোন ও এসএমএস পাঠানো হলেও তাদের কেউ ফোন রিসিভ করেননি এবং এসএমএসের রিপ্লাই দেননি।

গাজীপুর : গাজীপুরে শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে গতকাল কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট করেছেন। এ সময় তারা কারখানায় ভাঙচুর ও কারখানার কয়েক কর্মকর্তাকে মারধর এবং তাদের অবরুদ্ধ করে রাখেন। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম রেজা ও কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুরের ময়েজ উদ্দিন টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিকরা কয়েকদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে শতভাগ বেতন পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন চলাকালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরকার-ঘোষিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের এপ্রিলের বেতনের ৬০ শতাংশ তাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নির্ধারিত তারিখ সোমবার পরিশোধ করে কর্তৃপক্ষ। এতে শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। এ কারখানায় প্রায় ২ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। গতকাল সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ দেন। কিছুক্ষণ পর তারা শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও তাদের কারখানার ভিতরে প্রবেশ করতে দেননি আন্দোলনরত শ্রমিকরা। একপর্যায়ে দাবি মেনে না নেওয়ায় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রমিকরা কারখানার গেট ভিতর থেকে বন্ধ করে তালা লাগিয়ে দেন। এরপর তারা কারখানায় তা-ব চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে মারধর করতে থাকেন। এ সময় পুলিশের হামলায় শ্রমিক নিহত হওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়লে কারখানার ভিতরে উত্তেজিত শ্রমিকদের সঙ্গে মালিকপক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও হাতাহাতি হয়। এতে অন্তত ১০-১২ জন আহত হন। গেট ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় পুলিশ চেষ্টা করেও কারখানায় প্রবেশ করতে পারেনি। ঘণ্টাখানেক পর মালিকপক্ষের কয়েকজন কর্মচারী কৌশলে গেট খুলে দিলে পুলিশ ভিতরে প্রবেশ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে আন্দোলনকারীরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করেন।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুশান্ত সরকার জানান, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতিতে উৎপাদন কাজ না থাকায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ইসলামপুরের টার্গেট ডেনিম অ্যান্ড ক্যাজুয়াল পোশাক কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের এপ্রিলের বেতন-ভাতা নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করা হয়। তবে কার্ড পাঞ্চ না করায় শখানেক শ্রমিকের বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয়নি। ইতিমধ্যে কারখানা লে-অফ ঘোষণার ৪৫ দিন পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাতে কর্তৃপক্ষ আবারও ৩১ মে পর্যন্ত কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। গতকাল শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে কারখানা বন্ধ দেখতে পান। এ সময় তারা কারখানা ছুটি ঘোষণার কথা জানতে পেরে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কারখানা খুলে দেওয়ার ও অবশিষ্ট শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে শ্রমিকরা কারখানা এলাকা ত্যাগ করেন। এ ছাড়া শতভাগ বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে লক্ষ্মীপুরার ইন্ট্রাম্যাক্স ও টঙ্গীর এটি মার্কস ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা এদিন বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি করেছেন।

এদিকে গাজীপুর শিল্পপুলিশের ইন্সপেক্টর ইসলাম হোসেন জানান, শ্রীপুর উপজেলার মাধখলা এলাকার কালার ফ্যাশন কারখানার শ্রমিকরা এপ্রিল ও মে মাসের বেতনসহ ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে গতকাল কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ করেছেন।

সর্বশেষ খবর