বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

চার ধাপে লকডাউন শিথিল নিউইয়র্কে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

মৃতের সংখ্যা কমতে থাকার পাশাপাশি সংক্রমণের হার সর্বনি¤েœ আসা, হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে যাওয়া ও আইসিইউ শয্যা খালি হওয়ায় নিউইয়র্ক স্টেটের বেশ কটি এলাকা থেকে চার ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়া হচ্ছে। তবে নিউইয়র্ক সিটি, লং আইল্যান্ড এবং ওয়েস্টচেস্টার থেকে লকডাউন তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা এখনো করা হয়নি। এর মধ্যে প্রথম ধাপে চালু হবে কলকারখানা এবং নির্মাণ ব্যবসা, হোলসেল ট্রেড, কৃষি, বনায়ন, মৎস্য উৎপাদন, বন্যপ্রাণী শিকার ও লালন-পালন। স্টেট গভর্নর অ্যান্ড্রু ক্যুমো সোমবার নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংকালে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত নিউইয়র্ক স্টেটের করোনা পরিস্থিতি উপস্থাপনকালে বলেন, ফেডারেল গাইডলাইন মেনে এই স্টেটের নিজস্ব পরিকল্পনায় লকডাউন অবসানের পথ ক্রমান্বয়ে সুগম হচ্ছে। গভর্নর বলেন, গত দুই সপ্তাহের প্রতিদিনই করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমছে। রবিবার তা ১৬১-তে নেমে এসেছে। হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা হাজার থেকে ৪৮৮-তে নেমেছে। নাগরিকরা স্বাস্থ্যরীতি মেনে চলায় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি পর্যায়ক্রমে কমছে। তিনি বলেন, বাসার বাইরে জরুরি ছাড়া না যাওয়া, বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় এ অগ্রগতি হয়েছে। ১৯ মার্চ শুরু হয়েছে স্বাস্থ্যনীতির আলোকে লকডাউন। এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ১৫ মে। সেদিনই এই স্টেটের বেশ কটি কাউন্টিতে জনজীবন, ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহর অবস্থার প্রাথমিক ধাপ শুরু হবে। ১৫ মে পর্যন্ত সবকিছু ঠিকমতো চললেই করোনা-পরবর্তী নতুন সমাজে পদার্পণ কার্যক্রমের শুভ সূচনা ঘটবে বলেও উল্লেখ করেন গভর্নর। তিনি আবারও উল্লেখ করেন, রাজনৈতিক মতলব অথবা আবেগতাড়িত হয়ে নয়, বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাস্তবতার আলোকে হাঁটছি। ইতিমধ্যেই যারা জনজীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করেছেন, তারা যে ভুল করেছেন, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোচ্ছি। স্টেট গভর্নরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সাতটি ধাপ রয়েছে জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে দিতে। সব কটিতেই মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার রীতি বহাল থাকবে। অর্থাৎ অনির্দিষ্টকাল ধরেই এ দুটি রীতি বহাল রাখা হতে পারে।গভর্নর উল্লেখ করেছেন, নিউইয়র্ক সিটি, লং আইল্যান্ড এবং ওয়েস্টচেস্টারে এ সাত ধাপের মাত্র তিনটির বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে। অন্য এলাকায় সব কটি এগিয়ে চলেছে। গত ১৪ দিনের মনিটরিংয়ের মধ্য দিয়ে রি-ওপেনের প্রথম ধাপে যাচ্ছে এই স্টেট। শর্তগুলো হচ্ছে- হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়া, মৃতের হার কমা, হাসপাতালে নতুন রোগী ভর্তির হার স্বাভাবিক পর্যায়ে আসা, প্রতিটি হাসপাতালে ৩০ ভাগ শয্যা খালি থাকা, আইসিইউতে ৩০ ভাগ শয্যা খালি হওয়ার পাশাপাশি সব ডাক্তার ও নার্সের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জামের মজুদ থাকা, ডায়াগনস্টিক ও টেস্টিং নিয়ে কোনো সংকট না থাকা এবং করোনায় আক্রান্তের মধ্যে যারা সুস্থ হয়েছেন অথবা নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন তাদের গতিবিধি মনিটরিংয়ে রাখার যাবতীয় কার্যক্রম চালু থাকা। প্রথম ধাপে চালু হবে কলকারখানা এবং নির্মাণ ব্যবসা, হোলসেল ট্রেড, কৃষি, বনায়ন, মৎস্য উৎপাদন, বন্যপ্রাণী শিকার ও লালনপালন। ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে এই ধাপে যদি সংক্রমণ ও মৃতের হার না বাড়ে তা হলেই দ্বিতীয় ধাপে যাবে এসব অঞ্চল। দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে- অফিস-আদালত, খুচরা দোকান, প্রশাসনিক কর্মকান্ড ও রিয়েল এস্টেট এবং রেন্টাল/লিজিং কার্যক্রম চালু। এ প্রক্রিয়া গভীর পর্যবেক্ষণে থাকবে ১৪ দিন। এই সময়ে সংক্রমণ ও মৃতের হার কমলে অথবা নিয়ন্ত্রণে থাকলেই তৃতীয় ধাপে যাবে ওসব এলাকা। তৃতীয় ধাপে রেস্টুরেন্ট ও ফুডসার্ভিস চালু করা হবে। তবে একইভাবে রেস্টুরেন্টে সামাজিক দূরত্ব মানার পাশাপাশি কর্মচারীদের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। পর্যবেক্ষণে সুফল পাওয়া গেলে চতুর্থ ধাপে আর্টস, বিনোদন, রিক্রিয়েশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় রয়েছে দ্য ফিঙ্গার লেকস, সাউদার্ন টায়ার ও মহোক ভ্যালি অঞ্চল। নিউইয়র্ক সিটি থেকে এগুলো দুই শতাধিক মাইল দূরে অবস্থিত। এসব এলাকায়ও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ দক্ষিণ এশিয়ার নাগরিকের বসতি রয়েছে। গরু-ছাগলের খামার, শাক-সবজির খামার, মাছ উৎপাদনের পাশাপাশি বেশ কটি খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এসব এলাকায়।

সর্বশেষ খবর