শিরোনাম
বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সাঈদীপুত্রের সঙ্গে বৈঠক করা সেই রকি গ্রেফতার

পালাতে গিয়ে লাফিয়ে আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

বিদেশি পিস্তল, দামি মদ ও রক্ষিতাসহ যুদ্ধাপরাধে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্রের সঙ্গে বৈঠক করা বিতর্কিত সেই রকি বড়ুয়াকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৭। সোমবার দিবাগত রাতের শেষ প্রহরে সাহরির সময় নগরের পাঁচলাইশ এলাকার একটি বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় রকি বড়ুয়ার এক রক্ষিতাসহ আরও চার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-এমপিসহ দুই দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে তার অসংখ্য ছবি, তাদের সিল, প্যাড এবং সাঈদী পুত্র মাসুদ সাঈদী, বিতর্কিত ইসলামী বক্তা তারেক মনোয়ার ছাড়াও হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকের ছবি ও বিভিন্ন প্রমাণাদি। এদিকে ভোররাতে র‌্যাবের অভিযান সম্পর্কে টের পেয়ে পাঁচলাইশের যে বাড়িতে অবস্থান করছিলেন রকি বড়–য়া সেই বিল্ডিংয়ের তিনতলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন রকি বড়ুয়া। কিন্তু লাফ দিয়ে নিচে পড়ে তার দুটি পা-ই ভেঙে যায়। এ অবস্থায় উদ্ধার ও গ্রেফতারের পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশের একটি বাসায় ডেরা বানিয়ে রক্ষিতা নিয়ে থাকতেন  দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্রের সঙ্গে বৈঠক করা বিতর্কিত সেই রকি বড়ুয়া। র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান জুয়েল বলেন, রকি বড়ুয়াকে নগরের পাঁচলাইশ এলাকার একটি বাসা থেকে  গ্রেফতার করেছি আমরা। একই অভিযানে তার আরও চার সহযোগী গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে একজন নারীও আছেন। তিনি বলেন, র‌্যাবের উপস্থিতি টের  পেয়ে রকি বড়ুয়া তিনতলার ছাদ থেকে লাফ দিয়েছিলেন। ছাদ থেকে পড়ে তার পা ভেঙেও গেছে। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, রকি বড়ুয়ার কাছ  থেকে বিদেশি পিস্তল, বিদেশি মদ পাওয়া গেছে। সে যে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করে, সে সম্পর্কিত বিভিন্ন ডকুমেন্টস, ভান্তে সাজার গেরুয়া রঙের কাপড়সহ আরও অনেক কিছু পেয়েছি। জানা গেছে, অভিযানে রকি বড়ুয়ার সহযোগী হিসেবে যে নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি রকি বড়ুয়ার স্ত্রী নন, তিনি একজন মুসলিম পরিবারের মেয়ে। তার আইডি কার্ডের তথ্য অনুযায়ী তার নাম আমেনা। উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল মধ্যরাতে লকডাউন পরিস্থিতিতে  লোহাগাড়ার চরম্বা ইউনিয়নের বিবিবিলা বড়ুয়া পাড়ায় এসে রকি বড়ুয়ার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন যুদ্ধাপরাধে যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পুত্র মাসুদ সাঈদী, মাওলানা তারেক মনোয়ার ও কয়েকজন জামায়াত নেতা। বিতর্কিত ইসলামী বক্তা, সাঈদীর যোগ্য উত্তরসূরি খ্যাত তারেক মনোয়ার ও আজহারী ইতিপূর্বে বহুবার ওয়াজ মাহফিল করে বলেছেন, ‘ঘরে ঘরে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বেরিয়ে আসবে। এখন আর তীর ধনুকের যুগ নেই, এখন একে  ফোরটি সেভেনের যুগ।’ -তাদের এ ধরনের বক্তব্যকে প্রকাশ্যে হুমকি দাবি করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংসদ অধিবেশনে এ নিয়ে কথা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তৃতা দেন এক সংসদ সদস্য। একই কারণে ২০১৯ সালের নভেম্বরে কুমিল্লায় তারেক মনোয়ারের ওয়াজ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই বিতর্কিত তারেক মনোয়ার এবং সাঈদী পুত্রের সঙ্গে সাঈদীর মুক্তির বিষয়ে রাতভর  বৈঠক করেন রকি বড়ুয়া। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহায়তায় সাঈদীকে কারাগার থেকে মুক্ত করার আশ্বাস দেন রকি বড়–য়া। সেই রাতে সাঈদী পুত্রসহ অন্য ‘মেহমান’রা রকির বাড়িতে রাতে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং বৈঠক শেষে সকাল ৮টায় সড়ক পথে ঢাকা ফিরে যান। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সঙ্গে তোলা বৈঠকের ছবি পোস্ট দেন রকি বড়ুয়া। এ নিয়ে স্থানীয়দের মনে শুরু হয় নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল। দুই লাখ টাকার কম হলে তারেক মনোয়ার যেখানে ওয়াজ করতে যান না বলে বেড়ান,  সেখানে লকডাউন ভেঙে রকি বড়ুয়ার বাড়িতে তারেক মনোয়ার ও সাঈদী পুত্র মাসুদ সাঈদীর কাজ কী? স্থানীয়দের এমন কৌতূহলের জবাবে রকি বড়ুয়া বলে বেড়ান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সহযোগিতায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে  জেল থেকে বের করার জন্য এই বৈঠক। এ জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করতে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার কথা হয়েছে বলেও স্থানীয়দের কাছে বলে বেড়ান রকি বড়ুয়া। শুধু তাই নয়, যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মুক্তির জন্য যুদ্ধাপরাধীদের সুহৃদ, সতীর্থদের সঙ্গে  বৈঠকের ছবিও প্রচার করে সাধারণ মানুষের মাঝে নিজের ক্ষমতা বোঝানোর চেষ্টা করেন রকি বড়ুয়া।

সর্বশেষ খবর