বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বৈরালি মাছের পোনা উৎপাদন

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

বৈরালি মাছের পোনা উৎপাদন

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর মধ্যে মৎস্য খাতে সুখবর দিল ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা দেশে প্রথমবারের মতো বিলুপ্তপ্রায় বৈরালি মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি হিসাবে ঘোষণা করে। দুই বছর ধরে সৈয়দপুরস্থ স্বাদুপানি উপকেন্দ্র গবেষণা পরিচালনা করে এ সফলতা পায়। গবেষক দলে ছিলেন উপকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শওকত আহম্মেদ। ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, সুস্বাদু বৈরালি মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে বৈরালি মাছকে চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং মাছটিকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। জানা যায়, বৈরালি মাছের আরও পাঁচটি প্রজাতি রয়েছে। এক সময় এ মাছটি বৃহত্তর সিলেট, নেত্রকোনা ও রংপুর অঞ্চলে পাওয়া যেত। বর্তমানে রংপুর বিভাগের কয়েকটি নদী ও খালের স্বচ্ছ পানিতে সীমিত আকারে বৈরালি মাছ পাওয়া যায়। দেশের বাইরে ভারত, নেপাল ও মিয়ানমারেও এ মাছের বিস্তৃতি রয়েছে। মাছটি খেতে সুস্বাদু এবং বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়। এর দেহ লম্বাটে ও সরু এবং পার্শ¦ীয়ভাবে সামান্য চাপা। এর দেহে আন্তপেশীয় কোনো কাঁটা নেই। মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক নানা কারণে এ মাছ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ড. খোন্দকার রশীদুল হাসান জানান, গবেষণায় দেখা গেছে একটি পরিপক্ক (১৫-২৫ গ্রাম ওজনের) বৈরালি মাছের ডিম ধারণক্ষমতা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ মাছের প্রজননকাল নভেম্বর থেকে মার্চ। তবে সর্বোচ্চ প্রজননকাল হচ্ছে জানুয়ারি মাস। প্রজনন মৌসুমে গবেষণা পুকুর থেকে সুস্থ সবল পরিপক্ক পুরুষ ও স্ত্রী মাছকে হ্যাচারিতে অক্সিজেন প্রবাহসহ কৃত্রিম ঝরনায় ৬-৮ ঘণ্টা রাখা হয়। পরে ওভোহোম হরমোন প্রয়োগ করে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হয়। তাপমাত্রা ভেদে ৮০-১৪০ ঘণ্টা পর এ মাছের ডিম হতে রেণু উৎপন্ন হয়। হাপাতে ৭২ ঘণ্টা রাখার পর রেণু পোনাকে পূর্ব প্রস্তুতকৃত নার্সারি পুকুরে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৪০-৫০ দিনের মধ্যেই পুকুরে মজুদ উপযুক্ত পোনা তৈরি হয়। এ সাফল্যের ফলে পর্যায়ক্রমে এ মাছের সব প্রজাতিকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আরেক বিজ্ঞানী শওকত আহম্মেদ জানান।

সর্বশেষ খবর