বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বকেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হামলায় আহত ১০

চট্টগ্রামে গাড়িভাড়া কমানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ শ্রমিকদের

প্রতিদিন ডেস্ক

বকেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হামলায় আহত ১০

নিয়মিত বেতন না হওয়ায় গাড়িভাড়া কমানোর দাবিতে গতকাল চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবিতে ঢাকার আশুলিয়া ও নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এরমধ্যে নারায়ণগঞ্জে শ্রমিকদের ওপর মালিকপক্ষের হামলায় অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে, ২০ মের মধ্যে মার্চ-এপ্রিলের বকেয়া বেতন, চলতি মাসের অর্ধেক মজুরি ও ঈদ বোনাস দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র। প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য।

সাভার : ঢাকার আশুলিয়ার নরসিংহপুরের আদিয়াত অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা দুই মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না। এর মধ্যে গতকাল কর্তৃপক্ষ এক নোটিসে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ করে ২০ মে বেতন পরিশোধের ঘোষণা দেয়। খবর পেয়ে সকাল ১০টায় শ্রমিকরা কারখানার সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে তারা কারখানার মূল ফটকের সামনে ও ভিতরের সিঁড়িতে অবস্থান নেন। এ সময় তারা বকেয়া বেতন ও কারখানা খোলার দাবি জানান। শ্রমিকরা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ২৮ মার্চ তাদের কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর আর কারখানা খোলেনি। কারখানা বন্ধ থাকা অবস্থায় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দিনে মুঠোফোনে শ্রমিকদের ডেকে এনে মার্চের বেতনের অর্ধেক পরিশোধ করেছে। এরপর বিভিন্ন তারিখে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বেতন পরিশোধ না করে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে মূল ফটকে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়।

শিল্প পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। যন্ত্র বিক্রি করে হলেও ২০ মে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : শতভাগ বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা পোস্ট অফিস রোডের ‘শাহ ফতেহ উল্লাহ টেক্সটাইল মিল ও জালাল হাজী স্পিনিং মিল’ নামে দুটি কারখানার সামনে শতাধিক শ্রমিক বিক্ষোভ করেছেন। সকালে মালিকপক্ষ ৬০ ভাগ বেতন পরিশোধ করবে এমন ঘোষণা দিয়ে স্লিপ দেয়। এতে শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়ে শতভাগ বেতন ও ঈদ বোনাস দাবি করেন। এ নিয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে শ্রমিকদের বাকবিত া হয়। এতে শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান ফটকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে মালিকপক্ষের লোকজন হামলা চালালে ৮-১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন বলে তারা দাবি করেন। তাদের স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন শ্রমিকরা। আহত শ্রমিক ইমন বলেন, ‘রাতের শিফটে কাজ শেষে সকাল ৬টায় কারখানা থেকে বের হওয়ার সময় মালিকপক্ষের লোকজন পিছন থেকে রড দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। একই ভাবে অন্য শ্রমিকদেরও মারধর করে। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ জন আহত হন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কারখানা মাত্র ১৮ দিন বন্ধ ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ এখন আমাদের ৬০ ভাগ বেতন দেবে কিন্তু ঈদ বোনাস দেবে না ঘোষণা দেয়। যার জন্য শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে মালিকপক্ষের লোকজন শ্রমিকদের মারধর করে।’ জালাল হাজী স্পিনিং মিলের শ্রমিকরাও শতভাগ বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তবে এতে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। অপরদিকে বকেয়া বেতন পরিশোধ ও কারখানার উৎপাদন চালুর দাবিতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে প্যারাডাইজ কেবলস্ লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা। এতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। গতকাল দুপুর ১২টায় সদর উপজেলার শিবুমার্কেট এলাকায় শ্রমিকরা ওই বিক্ষোভ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা পর শিল্প পুলিশ ও ফতুল্লা থানা পুলিশ যৌথভাবে শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জের পরিদর্শক (গোয়েন্দা) শেখ বশির আহমেদ বলেন, ‘কারখানাটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। তাই শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যে মালিকপক্ষ এক মাস বা দুই মাস করে বেতন পরিশোধ করছে। যার ধারাবাহিকতায় ৩০ এপ্রিল বেতন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মালিকপক্ষ সেটা দিতে পারেনি। যার জন্য শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে। মালিকপক্ষ বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা শান্ত হয়ে বাসায় ফিরেন।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, তিনটি কারখানার মালিকপক্ষ বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ২০ মের মধ্যে মার্চ-এপ্রিলের বকেয়া ও চলতি মাসের অর্ধেক মজুরি এবং বেসিকের সমান ঈদ বোনাস পরিশোধের দাবিতে আলটিমেটাম দিয়েছেন দেশের পোশাক শ্রমিকরা। একই সঙ্গে সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক করোনাকালে সব কারখানায় ছাঁটাইকরা শ্রমিকদের পুনর্বহাল, স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং কর্মরত অবস্থায় করোনা সংক্রমিত হলে সুচিকিৎসা ও উপযুক্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। গতকাল এক বিবৃতিতে এই দাবি করেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ ও সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।

কেইপিজেড শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ : কর্ণফুলী থানাধীন কেইপিজেডের (কোরিয়ান ইপিজেড) শ্রমিকরা তাদের বহন করা গাড়ির ভাড়া কমানোর দাবিতে পিএবি (পটিয়া আনোয়ারা বাঁশখালী) সড়কের ক্রসিং এলাকায় অবরোধ করেছেন।

গতকাল সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে কোরিয়ান ইপিজেডের নারী শ্রমিকরা বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি ও কর্ণফুলী থানা পুলিশ গিয়ে শ্রমিক ও গাড়িচালকদের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে পরিস্থিতি সামাল দেয়। কেইপিজেড-সূত্রে জানা গেছে, ইপিজেডের নারী শ্রমিকরা মাসিক হারে নির্দিষ্ট কিছু বাসে করে কর্মস্থলে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তারা পটিয়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া থেকে কর্মস্থলে আসেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে অন্যান্য ইপিজেডের মতো আনোয়ারা-কর্ণফুলীর এই কোরিয়ান ইপিজেডও কিছুদিন বন্ধ থাকার পর পুনরায় চালু করা হয়। এ সময় শ্রমিকরা পুরোপুরি বেতন না পাওয়ায় চালকদের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে গাড়ি ভাড়াও অর্ধেকে নামিয়ে আনে। কেউ আগে প্রতি মাসে ১ হাজার ২০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিলে তিনি মার্চ-এপ্রিলে ৬০০ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু চালকরা চলতি মাসে আগের মতো সম্পূর্ণ ভাড়া পরিশোধের কথা বললে শ্রমিকরা খেপে গিয়ে সড়ক অবরোধ করেন।

কেইপিজেডের প্রতিনিধি আবদুল কাদের জানান, এটা শ্রমিকদের গাড়ি ভাড়া নিয়ে চালকদের সঙ্গে মতবিরোধের ফলে হয়েছে। এর সঙ্গে কোনো কারখানার বিষয় জড়িত নেই। তার পরও ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে তাদের কারও যেন এই করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতি না হয়, সেভাবে মীমাংসা করা হয়েছে। শ্রমিকরা মাসহারা ভিত্তিতে কিছু ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন- এ আশ্বাসের ভিত্তিতে পুনরায় গাড়ি চলা শুরু করে।

সর্বশেষ খবর