শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

চর দখলে নিতে ২৬ বাড়িতে আগুন পুড়ে মরল নারী

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারের চকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের (খাসজমি) জায়গা দখল নিতে সশস্ত্র একদল দুর্বৃত্ত ২৬টি বসতবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। লুট করে নিয়েছে নগদ টাকা, গবাদিপশু, মূল্যবান মালামালসহ অন্তত কোটি টাকার সম্পদ। এ সময় আগুনে পুড়ে মনোয়ারা বেগম (৫৫) নামে এক নারী মারা যান। গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের এলোপাতাড়ি কোপে আহত হয়েছেন বৃদ্ধ, নারী-পুরুষসহ অন্তত ২০ জন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক এলাকায় বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোররাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া মনোয়ারা বেগম ওই গ্রামের মোজাহের আহমদের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে খিলছাদক গ্রামের বেশ কিছু পরিবারের ব্যাপক ঘরবাড়ি-জমি মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তবে কয়েকবছর ধরে নদীতে তলিয়ে যাওয়া সেই জায়গা দিনদিন নতুন করে জেগে উঠেছে। যাদের জায়গা জেগে উঠে তারা সেই জায়গায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু নদীর ওপাড় তথা পার্শ¦বর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের সশস্ত্র লোকজন এপাড়ে এসে বার বার জেগে ওঠা জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে আসছিলেন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোররাতে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা এসে একযোগে এপাড়ের খিলছাদক গ্রামের ২৬টি বসতবাড়িতে একযোগে হামলা, লুটপাট চালায় এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। এতে সব বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এ সময় ফাঁকা গুলি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি হামলা চালানো হয়।

ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হাবিবুর রহমান, উপজেলা ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাছান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম, এসআই অপু বড়ুয়া, বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার,  কৈয়ারবিল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মক্কী ইকবাল হোসেন প্রমুখ।

চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান জানান, কৈয়ারবিলের খিলছাদক অংশে মাতামুহুরী নদী তীরে জেগে ওঠা চরের জায়গার দখল নিতে এই নারকীয় তা-ব চালিয়েছে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একদল গ্রামবাসী। যারা এই তা-বের ঘটনায় জড়িত রয়েছে তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। ঘটনার সময় এক নারী আগুনে পুড়ে মারা যাওয়াসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ আহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে ওসি বলেন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ জানান, অমানবিক এই ধ্বংসযজ্ঞে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা  তৈরি করে জমা দিতে এর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে এসব পরিবারকে সরকারিভাবে সার্বিক সহায়তা দিয়ে পুনর্বাসন করা যায়। এ ছাড়াও প্রাথমিকভাবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে সহায়তা দেওয়া হবে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম জানান, ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে এক বস্তা করে চাল, দুই বান্ডিল ঢেউটিন ও সরকারিভাবে আরও দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন প্রদান করা হয়েছে। যাতে তাদের খাদ্য ও বাসস্থান নিশ্চিত হয়। তাছাড়া সরকারিভাবেও তাদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে। আর যারাই এই নারকীয় তা-বে জড়িত তাদের খুঁজে বের করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর