সোমবার, ১৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

জাহাজ কনটেইনার জটে বাড়ছে শঙ্কা

বহির্নোঙরে কনটেইনারবাহী ৪০ জাহাজসহ ৮৮টি, বার্থিংয়ে আরও ১২ জাহাজ

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

জাহাজ কনটেইনার জটে বাড়ছে শঙ্কা

করোনার ধাক্কা সামলে চট্টগ্রাম বন্দরকে জাহাজ ও কনটেইনার জটমুক্ত রাখতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। এ কারণে প্রায় ২০ দিন ধরে এর ইতিবাচক ফলও পেয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং এর ব্যবহারকারীরা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ও লকডাউন পরিস্থিতিতে মার্চের শুরু থেকে বন্দরে দেখা দেয় ভয়াবহ কনটেইনার জট। এপ্রিলে কনটেইনারের সঙ্গে যুক্ত হয় জাহাজজটও। এ অবস্থায় কনটেইনারের স্টোর রেন্ট শতভাগ মওকুফ এবং অফ ডকে সব ধরনের আমদানিপণ্যের কনটেইনার খালাসের সুযোগ দেওয়ায় জাহাজ ও কনটেইনার জট কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু যে পরিমাণ কনটেইনার ডেলিভারি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা প্রত্যাশা করেছিলেন, সে অনুপাতে কনটেইনার ডেলিভারি হয়নি বলে জানান। তার ওপর মার্চ-এপ্রিলের চেয়ে বর্তমানে আমদানির পরিমাণও বেড়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪৯ হাজার ২০০ টিইইউস কনটেইনার ধারণক্ষমতার স্থলে গতকাল কনটেইনার ছিল ৪৩ হাজার টিইইউস। এতে দু-এক দিনের মধ্যে আবারও কনটেইনার জট তীব্র আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঊন্দর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে কনটেইনার, কার্গো, গম, অয়েল ট্যাংকার, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ মোট জাহাজ ছিল ৮৮টি। এর মধ্যে কনটেইনারবাহী জাহাজ রয়েছে ৪০টি। এ ছাড়া বন্দরের বার্থিংয়ে কনটেইনার খালাসের জন্য রয়েছে ১২টি জাহাজ। সব মিলিয়ে জাহাজও বেড়েছে বন্দরের বার্থিং ও বহির্নোঙরে। এতে পণ্য খালাসের জন্য আসা জাহাজগুলোর গড় অবস্থানকালও বেড়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির হৃৎপি- খ্যাত এই বন্দরে করোনার কারণে গত এপ্রিলে সবচেয়ে কম কনটেইনার হ্যান্ডলিং ও ডেলিভারি হয়। তবে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে বন্দর ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের কারণে চলতি মে মাসের শুরু থেকে বন্দর স্বরূপে ফিরে আসতে শুরু করে। কিন্তু গত দু-এক দিন ধরে আমদানিপণ্যের কনটেইনার জমা হওয়া এবং সে অনুপাতে পুরনো কনটেইনার ডেলিভারি না হওয়ায় আবার জাহাজ ও কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। এই দুই জটে আবারও অচলাবস্থায় পড়তে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর।

এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে মার্চ থেকে টানা প্রায় দেড় মাস থমকে ছিল চট্টগ্রাম বন্দর। এ সময় কনটেইনার আর জাহাজ জটে পড়ে দেশের এই প্রধান বন্দর। তবে কনটেইনার জট কমানোর জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ তিন দফায় ১৬ মের সাধারণ ছুটি পর্যন্ত সব ধরনের কনটেইনারের স্টোর রেন্ট শতভাগ মওকুফ করে। এতে কনটেইনার ডেলিভারিতে গতি ফিরে আসে। বিজিএমইসহ দেশের প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ সুযোগ তৃতীয়বারের মতো ১৬ মে সাধারণ ছুটি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু সাধারণ ছুটি আগামী ৩০ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলেও কনটেইনারের স্টোর রেন্টের মেয়াদ আবারও বাড়ানো হবে কি না কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক।

তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আবারও প্রায় ৪৩ হাজার টিইইউস কনটেইনার জমা হয়ে আছে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে বন্দরের সব ধরনের কার্যক্রম মাত্র ৮ ঘণ্টার জন্য বন্ধ থাকলেও আমাদানিকারকদের কনটেইনার ডেলিভারি নিতে আবারও বলা হয়েছে। সরকারি সাধারণ ছুটির মেয়াদ বাড়ানো হলেও স্টোর রেন্ট মওকুফের বিষয়ে আর কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে এখন স্বাভাবিক সময়ের মতোই বন্দরের ইয়ার্ড থেকে ডেলিভারি হচ্ছে গড়ে প্রতিদিন ৪৫০০ টিইইউস (টোয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) পণ্যবাহী কনটেইনার, হ্যান্ডলিং হচ্ছে ছয় হাজারেরও বেশি টিইইউস কনটেইনার। কিন্তু আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কনটেইনার জট নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা করতে হচ্ছে।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, কনটেইনার ও জাহাজজট কমাতে ব্যবসায়ীদের বন্দর স্টোর চার্জ বাবদ মওকুফ করতে হয়েছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া অফ ডকে সব ধরনের কনটেইনার ডেলিভারির সুযোগসহ আরও অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসায়ীরা স্টোর রেন্ট মওকুফের সুযোগ পেয়েও অনেকে তা কাজে লাগাতে পারেনি। স্বাভাবিক সময়ে জাহাজ থেকে নামানোর পর চার দিন পর্যন্ত বিনা ভাড়ায় কনটেইনার রাখা যায় বন্দরে। এরপর প্রথম ধাপে প্রতিটি কনটেইনারে ৬ ডলার, দ্বিতীয় ধাপে ১২ ডলার এবং শেষ ধাপে ২৪ ডলার করে ভাড়া দিতে হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়ের সুবিধা দেওয়ায় সময়ভেদে একেকটি কনটেইনারে সর্বোচ্চ ৪০-৫০ হাজার টাকা ছাড় পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

বন্দর ব্যবহারকারী ফোরামের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বন্দর যে ধরনের সুযোগ দিয়েছে তা আগে কখনো দেয়নি। ইতিবাচক এসব সিদ্ধান্তের আলোকে বন্দরে বেশ গতিও ফিরে আসে। তবে এখন ব্যবসায়ীদের পণ্য খালাসের হার বাড়াতে হবে। পণ্য খালাস না করলে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি বন্দরও সমস্যায় পড়বেন। তিনি বলেন, এরই মধ্যে দেশে গার্মেন্টসহ অন্যান্য শিল্প-কারখানা পর্যায়ক্রমে খুলতে শুরু করেছে। এতে আমদানিও বেড়েছে। এ অবস্থায় বন্দর থেকে পুরনো কনটেইনার ডেলিভারি কম হলে আবারও কনটেইনার ও জাহাজজট দেখা দিতে পারে। যাদের আইসিডিতে (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) কনটেইনার নেওয়ার সুযোগ আছে, তারা যেন এগিয়ে আসে এই দুঃসময়ে বন্দর ব্যবস্থাপনায় সহায়তার জন্য।

সর্বশেষ খবর