মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পাল্টে গেছে ওদের জীবনও

মাহবুব মমতাজী

পাল্টে গেছে ওদের জীবনও

লকডাউনে খাবারের অভাবে বিপাকে পড়েছে পুরান ঢাকার বানর। এতে কমে গেছে তাদের বিচিত্র সব কান্ড আর   ছোটাছুটি। চোখে পড়ে না দেয়ালে কিংবা ছাদে দার্শনিকের মতো ঝিমানোর দৃশ্য। নেই দুষ্ট বালকের মতো দোল খাওয়া। লাজুক এই প্রাণী বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদে কিংবা কার্নিশের আড়ালে নিজেদের রাখত। খাবারের অভাবে মন ভালো নেই তাদের। এখন একে অপরের মাথার উকুন বেছে মারে না, হাত পা নেড়ে বিচিত্র কোনো কান্ড দেখায় না। নেই সাধনা ঔষধালয়ের প্রধান ফটকে দর্শকের উপস্থিতি। তাই হারিয়ে গেছে বানরের সেই চাঞ্চল্যতা। অসহায় হয়ে এখন বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঢুকে পড়েছে তারা। এমনকি খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় বিপত্তি আরও বেড়েছে তাদের।

অথচ ঢাকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সরাসরি মিশে আছে এসব বানর। লকডাউনের শুরুতে পুরান ঢাকার অলিগলি ঘুরে ১৫০টি বানরের মুখে খাবার তুলে দেয় কিছু স্বেচ্ছাসেবী। খাদ্যাভাবের কারণে এর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। জানা গেছে, পুরান ঢাকায় বসবাসরত বানর প্রজাতির নাম রেসাস ম্যাকাস। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে পুরান ঢাকার ওয়ারী, বনগ্রাম, সুরিটোলা, কলতাবাজার, শাঁখারীবাজার, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, রাধিকা বসাক লেন, মিলব্যারাক, স্বামীবাগ এলাকায় বানরের বসবাস রয়েছে। ১৯১৪ সালে গেন্ডারিয়ার দীননাথ সেন রোডের সাধনা ঔষধালয়ের কারখানা এবং গোডাউনে বানরের নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ ড. যোগেশ চন্দ্র ঘোষ। সেই সঙ্গে বানরের জন্য সকাল-বিকাল খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করেন। এটি তাদের আবাসস্থল হলেও বেশিরভাগ বিচরণ থাকে পাশের কবরস্থানে। দিনের বেশিরভাগ সময় এখানকার গাছগাছালিতে সময় কাটে তাদের। কলা, ছোলা আর গাজর খেয়ে দিন চলে যেত। সাধনা ঔষধালয়ের নিরাপত্তাকর্মী সমীর দাস জানান, তাদের চত্বরে অন্তত ১২০/১৩০ বানর রয়েছে। এখন তারা সবাই খাবারের অভাবে অনেক কষ্টে আছে। আগে মানুষ এসব বানর দেখতে এসে কিছু খাবার দিয়ে যেত। এখন কেউ দেখতেও আসে না, খাবারও দেয় না। এমনকি তারা আগে সকাল-বিকাল বানরের খাবারের জন্য ছোলা দিত। এখন সাধনার গাড়ি আসা বন্ধ আছে। তাই তারাও খাবার খেতে পারছে না। গেন্ডারিয়ার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নব্বইয়ের দশকে এখানে প্রায় ২০০ বানর ছিল। এ ছাড়া এখানে শিয়াল, সাপ, বেজিসহ অন্যান্য প্রাণীও দেখা যেত। বর্তমানে খাবার ও বাসস্থানের অভাবে বানর এখান থেকে চলে যাচ্ছে। কিছুদিন সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে খাবার দেওয়া হলেও তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাবার না পাওয়ার কারণে বানরগুলো শুকিয়ে হালকা হয়ে গেছে। সাধনা ঔষধালয়ের আরেক কর্মচারী জানান, তারা বানরের জন্য প্রতিদিন পাঁচ কেজি ছোলা দিতেন। খাবার সংকটের কারণে বানর মানুষের বাসাবাড়িতে খাবার আনতে যায়। বেশিরভাগ বাসাবাড়ি বন্ধ থাকায় খাবার নিতে পারছে না তারা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বানর গবেষক তানিয়া ইসলাম বলেন, লকডাউন পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হলে খাবারের অভাবে পুরান ঢাকার বানরের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়বে না। কিন্তু দীর্ঘায়িত হলে বানর মারা যেতে পারে কিংবা অন্যত্র চলে যাবে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর