বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাঙচুর অশনিসংকেত

উদ্বেগ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঈদ সামনে রেখে বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কারখানা ভাঙচুরের ঘটনায় তৈরি পোশাকশিল্পে গভীর উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। ভাঙচুরে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠন দুটি বলেছে, একটি স্পর্শকাতর সময়ে শ্রমিকদের সরলতার সুযোগ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল পোশাকশিল্পে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির তৎপরতায়  লিপ্ত। এই শ্রমিক আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরাও রয়েছেন বলে অতীতের মতো আবারও দাবি করেছে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। গতকাল গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)-এর সভাপতি ড. রুবানা হক এবং বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)-এর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান এমপি। এ দুই নেতা স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, ছোট ও মাঝারি কারখানার পাশাপাশি বড় বড় কমপ্লায়েন্ট পোশাক কারখানা, যাদের কর্মপরিবেশ ভালো, বেতন-ভাতাও নিয়মিত পরিশোধ করা হয়, সেগুলোও আন্দোলনের নামে ভাঙচুর করে শিল্পের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বর্তমান সংকটময় মুহূর্তে বেতন-বোনাস ইস্যুতে কারখানা ভাঙচুর করার যৌক্তিকতা নেই। সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সিদ্ধান্তের আলোকে কারখানাগুলো সংকটের মধ্যে থেকেই আপ্রাণ চেষ্টা করে বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে। কিছু কিছু কারখানায় অবশ্য ব্যত্যয় ঘটছে। কারণ, এ কারখানাগুলোর অনেকেরই হাতে এখন কোনো কাজ নেই। কিন্তু আশঙ্কার বিষয় হলো, ত্রিপক্ষীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা সত্ত্বেও অনেক কারখানা ভাঙচুরের সম্মুখীন হচ্ছে, যা শিল্পের জন্য একটি অশনিসংকেত। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলেছে, প্রধানমন্ত্রী-ঘোষিত সহজ শর্তে ৫ হাজার কোটি টাকার ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলেও অনেক উদ্যোক্তা আবেদন করেও এ ঋণ পাননি। ঋণ আবেদনের জন্য গতকাল পর্যন্ত বিজিএমইএ’র সনদ নিয়েছে ১ হাজার ৩৭৭টি কারখানা আর বিকেএমইএ’র কাছ থেকে সনদ নিয়েছে ৫১৯টি কারখানা। সংগঠন দুটি মনে করে, শিল্প ও শ্রমিক একে অন্যের পরিপূরক। শ্রমিক তার জীবিকার উৎস ধ্বংস হতে দেবে না, এটাই কাম্য। গতকাল পর্যন্ত ডিবিএল, ওপেক্স, মেডলার, ইমপ্রেস, ভিশন, ডিজাইনটেক্স, সেনটেক্স, সিভিক অ্যাপারেলস লি., ফকির নিটওয়্যারসহ অনেক পোশাক কারখানা ভাঙচুর করা হয়েছে। বেলিসিমা ও সিভিক অ্যাপারেলস লিমিটেডের মালিকদের সরাসরি অপদস্থও করা হয়েছে। এসব আইনবহির্ভূত ঘটনায় বহিরাগতদেরও উসকানি রয়েছে। এসব ঘটনার উপযুক্ত ছবি, তথ্য ও পর্যাপ্ত প্রমাণ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ’র কাছে আছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি চলমান থাকলে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি ও ভাঙচুরের কারণে কারখানা ও ব্যবসা বন্ধ হলে মালিক-শ্রমিক উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিশেষ করে লাখো লাখো শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বেন। এতে সার্বিকভাবে অর্থনীতি পিছিয়ে পড়বে। সামাজিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ বলেছে, জাতীয় অর্থনীতি নিয়ে ছিনিমিনি খেলায় লিপ্ত দুষ্কৃতিকারীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে কঠিন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছ থেকেও জোরালো পদক্ষেপ আশা করা হচ্ছে। কোনো কারণে তৈরি পোশাক খাত ধ্বংস হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা। তারা কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব, এমন কোনো খাত এখনো গড়ে ওঠেনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর