বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও বাণিজ্য প্রটোকলে দ্বিতীয় সংযোজন

বাংলাদেশ-ভারত

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং বাণিজ্য প্রটোকলে দ্বিতীয় সংযোজন হয়েছে। গতকাল ঢাকায় ভারতের পক্ষে হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলী দাশ এবং বাংলাদেশের পক্ষে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও বাণিজ্য সম্পর্কিত প্রটোকলের দ্বিতীয় সংযোজনটি স্বাক্ষর করেন।

গতকাল ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের অভ্যন্তরীণ নৌপথ ব্যবহার করে ট্রানজিট এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত একটি দীর্ঘস্থায়ী ও কালোত্তীর্ণ প্রটোকল রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালে স্বাক্ষরিত এই প্রটোকল দুই দেশের মধ্যকার অভিন্ন ইতিহাস, বন্ধুত্ব, আস্থা এবং পারস্পরিক লাভজনক অংশীদারিত্বের প্রতিফলন। সর্বশেষ ২০১৫ সালে পাঁচ বছরের জন্য এই প্রটোকলটি নবায়ন করা হয়েছিল যাতে আরও পাঁচ বছর মেয়াদে এটির স্বয়ংক্রিয় পুনর্বীকরণের বিধান রাখা হয় বিভিন্ন অংশীদারদের দীর্ঘমেয়াদি আশ্বাস প্রদানের জন্য। প্রটোকল সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং নৌসচিব পর্যায়ের আলোচনা হলো প্রটোকলটিকে আরও কার্যকর করার জন্য দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশীর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। ২০১৮ সালের অক্টোবরে নয়াদিল্লিতে এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার বৈঠকে আলোচনার সময় দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করা, প্রটোকল রুট সম্প্রসারণ, নতুন রুটের অন্তর্ভুক্তি এবং কল অব পোর্ট ঘোষণার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। প্রটোকলটিতে দ্বিতীয় সংযোজন স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করা হয়েছে। উভয় পক্ষের দ্বারা সম্মত নির্দিষ্ট বিষয়গুলো হলো (ক) রুটসমূহ : ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল (আইবিপি) রুটের সংখ্যা ৮ থেকে বাড়িয়ে ১০ করা হচ্ছে এবং বিদ্যমান রুটে নতুন স্থানও যুক্ত করা হয়েছে : - ১. গোমতী নদীর সোনামুড়া-দাউদকান্দি (৯৩ কিমি) আইবিপির ৯ম ও ১০ম রুট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটি ত্রিপুরা এবং সংলগ্ন রাজ্যগুলোর সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর যোগাযোগ বৃদ্ধি করবে এবং উভয় দেশের নদী-দূরবর্তী অঞ্চলেও সহায়তা করবে। এই রুটটি ১ থেকে ৮ পর্যন্ত বিদ্যমান অকল আইবিপি রুটকে সংযুক্ত করবে। ২. রাজশাহী-ধুলিয়ান-রাজশাহী রুটগুলো পরিচালনা এবং আরিচা (২৭০ কিমি) পর্যন্ত সম্প্রসারণ বাংলাদেশের অবকাঠামো বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে কারণ এই পথ দিয়ে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পাথর পরিবহনসহ সামগ্রিক পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে। এ ছাড়াও এটি উভয় দেশের স্থলবন্দরগুলোর ওপর চাপ কমাবে। ৩.১ ও ২নং [কলকাতা-শিলঘাট-কলকাতা] রুটের পাশাপাশি ৩ ও ৪ নং [কলকাতা-করিমগঞ্জ-কলকাতা] রুটে ভারতের কোলাঘাট যুক্ত করা হয়েছে। ৪. ৩ ও ৪ নং [কলকাতা-করিমগঞ্জ-কলকাতা] এবং ৭ ও ৮ নং [করিমগঞ্জ-শিলঘাট-করিমগঞ্জ] রুট ভারতের বদরপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এই রুটে বাংলাদেশের ঘোড়াশালও যুক্ত হয়েছে। পোর্ট অব কলসমূহের মধ্যে বর্তমান প্রটোকলের অধীনে বিদ্যমান ছয়টি পোর্ট অব কল হলো : ভারতের কলকাতা, হলদিয়া, করিমগঞ্জ, পান্ডু, শিলঘাট এবং ধুবড়ি এবং বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ, খুলনা,  মোংলা, সিরাজগঞ্জ, আশুগঞ্জ ও পানগাঁও। ভারতের পক্ষ থেকে নতুন যুক্ত হওয়া পাঁচটি বন্দর হলো : ধুলিয়ান, মাইয়া, কোলাঘাট, সোনামুড়া এবং যোগিগোফা এবং বাংলাদেশের বন্দরগুলো হলো : রাজশাহী, সুলতানগঞ্জ, চিলমারী, দাউদকান্দি এবং বাহাদুরাবাদ। এ ছাড়াও এই সংযোজনের মাধ্যমে ভারতের ত্রিবেলি (ব্যান্ডেল) ও বদরপুর এবং বাংলাদেশের ঘোড়াশাল ও মুক্তারপুর এই দুটি বন্দর সম্প্রসারণের ফলে দুই দেশের পোর্ট অব কল ও সম্প্রসারিত পোর্ট অব কলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১১টি ও ২টিতে। নতুন পোর্ট অব কল হিসেবে যোগিগোফা (ভারত) এবং বাহাদুরাবাদ (বাংলাদেশ) এর অন্তর্ভুক্তি মেঘালয়, আসাম এবং ভুটানকে সংযুক্ত করবে। যোগিগোফাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ সেখানে একটি মাল্টিমোডাল লজিস্টিক পার্ক স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে। নতুন কল অব পোর্টগুলো ইন্দো-বাংলাদেশ প্রটোকল রুটে পরিবহন করা কার্গো লোডিং এবং আন লোডিং করতে সক্ষম হবে যা দুই দেশের অর্থনৈতিক বিকাশে গতিসঞ্চার করবে। অগভীর নৌযান চলাচল : উভয় পক্ষই চিলমারী (বাংলাদেশ) এবং ধুবড়ির (ভারত) মধ্যে অগভীর নৌযান ব্যবহারের মাধ্যমে বাণিজ্য প্রবর্তন করতে সম্মত হয়েছে, তবে প্রটোকলের ১.৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী নৌযানগুলো অভ্যন্তরীণ বাংলাদেশের নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৬ বা ভারতের ইনল্যান্ড ভ্যাসেলস অ্যাক্ট, ১৯১৭ এর অধীনে নিবন্ধিত হতে হবে এবং সুরক্ষার শর্ত পূরণ করতে হবে। এই উদ্যোগের ফলে পাথর এবং অন্যান্য ভুটানিজ ও উত্তর-পূর্ব কার্গো বাংলাদেশে রপ্তানি হবে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ব্যবসায়ীদের সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করে বাংলাদেশের স্থানীয় অর্থনীতি এবং আসামের নিম্নাঞ্চলে উন্নতি ঘটাবে।

কার্গো চলাচলের নতুন সুযোগ সুবিধা : এই প্রটোকলের আওতায় উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ নৌযানগুলো নির্ধারিত প্রটোকল রুটে চলাচল এবং দুই দেশের পোর্ট অব কলে নোঙর করে পণ্য ওঠানামা করতে পারে। প্রটোকল রুটে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ট্রানজিট কার্গো এবং বাংলাদেশে রপ্তানি কার্গো চলাচলে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। ভারতীয় ট্রানজিট কার্গোর পণ্যসমূহ হলো মূলত উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কয়লা, ফ্লাইঅ্যাশ, পিওএল এবং ওডিসি। চলাচলের অন্যান্য সম্ভাব্য কার্গো পণ্য হলো সার, সিমেন্ট, খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্য, কনটেইনার কার্গো ইত্যাদি। ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি কার্গো মূলত ফ্লাইঅ্যাশ যা প্রতি বছর ৩০ লাখ মে. টন। প্রায় ৬৩৮টি অভ্যন্তরীণ নৌযান (৬০০ বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজসহ) বার্ষিক প্রায় ৪০০০ যাত্রা সম্পন্ন করে।

সর্বশেষ খবর