শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আম্ফানের পর কালবৈশাখীর তাণ্ডব

মৃত্যু ছয়জনের, আম্ফানে ফল-ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, দিশাহারা কৃষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

আম্ফানের পর কালবৈশাখীর তাণ্ডব

ঝড়ে দিনাজপুরে উপড়ে পড়েছে গাছ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর গত রবি ও মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখীর তান্ডব বয়ে যায়। অসংখ্য ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। ঝড়ে গাছচাপা পড়ে বিভিন্ন স্থানে অন্তত ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে জয়পুরহাটে একই পরিবারের ৩ জনসহ ৪ জন মারা গেছেন। লন্ডভন্ড হয়ে গেছে অনেক জনপদ। ভেঙে গেছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। ধানসহ শাকসবজি, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টিতে আম ও লিচুসহ মৌসুমি ফলের ক্ষতি হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর : জয়পুরহাট : গত রবি এবং মঙ্গলবার রাতে টর্নেডোর তান্ডবে গতকালও লন্ডভন্ড হয়ে আছে জয়পুরহাট জেলার ৪টি উপজেলার প্রায় শতাধিক গ্রাম। বাড়ির ওপর গাছচাপা পড়ে মারা গেছে একই পরিবারের ৩ জনসহ মোট ৪ জন। ৪৮ ঘণ্টাতেও স্বাভাবিক হয়নি বিদ্যুৎ সংযোগ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ক্ষেতলালে মুরগি খামারের শেড ভেঙে মারা গেছে প্রায় ৪০ হাজার মুরগি। প্রায় দুই হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের টিনের চালা উড়ে গেছে। শত শত গাছ ও বিদ্যুতের শতাধিক খুঁটি উপড়ে গেছে। ধানসহ শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রবল বেগের ঘূর্ণিঝড়ে বাড়ির ওপর গাছ ভেঙে পড়লে দেয়াল চাপায় একই পরিবারের মাসহ দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এরা হলেন- ক্ষেতলাল উপজেলার খলিশাগাড়ি গ্রামের দিনমজুর জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী শিল্পী বেগম (২৮) তার দুই ছেলে সন্তান নেওয়াজ (৮) ও নিয়ামুল (৩)। এ ছাড়া কালাই উপজেলার হারুঞ্জা আকন্দপাড়া গ্রামে ঘর ভেঙে পড়ে মৃত সালামত আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৭০) মারা যান। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক স ম মেফতাহুল বারি জানান, দুইবার ঝড়ে জেলার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির ধানসহ শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক কোটি টাকা বলে জানান।

নীলফামারী : দুই দফা ঝড়ে নীলফামারীতে একজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও সহস্রাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। রবিবার রাত ১০টার দিকে প্রথম ঝড়ে জেলার ডোমার উপজেলার মির্জাগঞ্জ বাজারের একটি কাপড়ের দোকানের ওপর গাছ উপড়ে পড়ে মোসলেম উদ্দিন (৫৫) মারা যান।

ভোলা : ভোলায় লালমোহন ও চরফ্যাশন উপজেলায় বুধবার রাতের আকস্মিক ঘূর্ণিঝড় ও টর্নেডোর আঘাতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। অনেকের ঘরের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। বিধ্বস্ত হয়েছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো হচ্ছে, লালমোহনের গজারিয়া, লর্ডহার্ডিঞ্জ ও চরউমেদ ইউনিয়ন এবং চরফ্যাশনের নূরাবাদ, নীলকমল ও ওসমানগঞ্জ ইউনিয়ন।

বাগেরহাট : বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার কুমারখালীসহ আশপাশ এলাকায় বুধবার রাতে আকস্মিক ঝড়ে অটো রাইস মিলের চাল, দেয়াল, গোডাউন, কাঠ-টিনের অনেক ঘরবাড়িসহ অসংখ্য গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। গত দুই দিন ধরে মোংলা বন্দরসহ-সংলগ্ন সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে। আর এ ঝড়-বৃষ্টি আরও দুই-একদিন ধরে অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

দিনাজপুর : দিনাজপুরে প্রচন্ড ঝড়সহ বৃষ্টিতে আম ও লিচুসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বড় বড় আমগাছ ও লিচুর গাছসহ বিভিন্ন গাছ উপড়ে পড়েছে। অনেক গাছের ডালপালা ভেঙে গেছে। ঝড়ে ১৫ শতাংশ আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কীভাবে পুষিয়ে নেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আম-লিচুর বাগান মালিকরা।

বগুড়া : বগুড়ায় কালবৈশাখী ঝড়ে ঘুমন্ত অবস্থায় গাছের চাপায় মারা গেলেন নজিবর রহমান নজির (৭০)। তিনি কাহালু উপজেলার কালাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন।

বগুড়ার কাহালু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জিয়া লতিফুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাতে উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ভোরের দিকে ঝড়ে নজিবর রহমান নজিরের ঘরের ওপরে গাছ ভেঙে পড়ে। এতে তার মাটির ঘর ধসে যায়। এ সময় গাছচাপা পড়ে ঘুমন্ত নজিবর রহমান নজির মারা যান।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার ছয়টি গ্রাম কালবৈশাখী ঝড়ে ল-ভ- হয়ে গিয়েছে। উপজেলার ভেমটিয়া, বিরহলী, ভেলাতৈড়, চাপোড়, মালঞ্চাসহ ছয়টি গ্রামে ভেঙে পড়েছে শত শত গাছপালা, বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য কাঁচা ও আধাপাকা বাড়িঘর। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সোমবার ঈদুল ফিতরের ভোরে ওই ছয় গ্রামের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটে।

লালমনিরহাট : কয়েক মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড উত্তরের জেলা লালমনিরহাট। সোমবার ভোরে হঠাৎ করে ব্যাপক ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও হয়। মিনিটখানেকের ঝড়ে প্রায় লন্ডভন্ড হয় জেলার অনেক গ্রাম। বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে বেশকিছু বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিদুৎ সরবরাহ। ফলে অন্ধকারে ডুবে যায় অনেক এলাকা।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে প্রচন্ড ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে জেলার কয়েক উপজেলার খেতের পাকা ধানসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার ৯ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ও বুধবার এ ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সদর, নাগেশ্বরী, রাজারহাট, ভুরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ী উপজেলাসহ ৫ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক।

সর্বশেষ খবর