শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ভিন্নভাবে উদযাপিত হলো ঈদ

সামাজিক দূরত্ব মেনে মসজিদে জামাত, ছিল না কোলাকুলি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিন্নভাবে উদযাপিত হলো ঈদ

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত আদায় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ছোঁয়া এড়াতে গিয়ে ময়দানে নামাজ না পড়ে, কোলাকুলি না করে, হাতে-হাত না মিলিয়ে গত সোমবার সারা দেশে ঈদ উদযাপন করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের ইতিহাসে এ রকম আর ঘটেনি। বাংলাদেশে যা ঘটেছে মুসলিম অন্যান্য দেশেও তা-ই। এবার ঈদগাহে না গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মসজিদে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে হয়েছে। অনেকে মসজিদে না গিয়ে ঘরেই আদায় করেছেন ঈদের সালাত। এবার ঢাকার ধানমন্ডিসহ অনেক ভবনের ছাদে সামাজিক দূরত্ব বাজায় রেখে ঈদের জামাতের আয়োজন করতে দেখা গেছে। তবে ঈদকে ঘিরে যে সামাজিক আনন্দ-উচ্ছ্বাস থাকার কথা এবার তা ম্লান করে দিয়েছে করোনা মহামারী। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনের দরবার হলে পরিবারের সদস্য ও সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেছেন। সাধারণত তিনি জাতীয় ঈদগাহে ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। এবার রাজধানীর হাই কোর্ট-সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হয়নি। শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও এবার হয়নি। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদের ৫টি জামাত হয়। প্রত্যেকটি জামাতেই মুসল্লিদের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। অনেকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। নামাজ শেষে করোনার গজব থেকে মুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। প্রতিটি জামাত ও খুতবা শেষে মোনাজাতের সময় আবেগে আপ্লুত মুসল্লিরা চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ক্ষমা ও সাহায্য প্রার্থনা করেন। করোনা দূর করে স্বাভাবিক জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে আর্জি জানান তারা। মোনাজাতে দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ কামনা করা হয়। এ ছাড়া দেশে ও বিশ্বে করোনায় আক্রান্তদের আরোগ্য কামনা করে দোয়া করা হয়। তবে এবার ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিদের কোলাকুলি ও হাত মেলানোর চিরাচরিত চিত্রটি দেখা যায়নি কোথাও। নামাজ শেষে যে যার মতো আনমনে বেরিয়ে গেছেন নিজেদের গন্তব্যে। ঈদের পর আত্মীয়-পরিজনের বাসায় যাওয়া, ঈদি দেওয়া-নেওয়া বা ঈদ আপ্যায়নের  চিরাচরিত কোনো আমেজ এই ঈদে লক্ষ্য করা যায়নি।

 

করোনা পরিস্থিতির কারণে ঈদ উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ে এবার কোনো অনুষ্ঠান হয়নি। তবে রাষ্ট্রপতি ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বঙ্গভবনের দরবার হল থেকে ঈদের নামাজ শেষে ভার্চুয়াল শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় তিনি বলেন, আমরা এমন একটি সময়ে ঈদ উদযাপন করছি, যখন সারা বিশ্ব কভিড-১৯ ভাইরাসে বিপর্যস্ত। বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এ কারণে এ বছরে ঈদ উদযাপিত হচ্ছে একটি ভিন্ন পরিবেশে। এ সময়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথাযথ সামাজিক দায়িত্ব পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে আমাদের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যা নিজের ও অপরের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। রাষ্ট্রপতি এ সময় মহামারী করোনা সংকটকালে এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র জনগণের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে করোনাভাইরাস এবং আম্ফানের আঘাতে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ এবং নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করে আক্রান্ত ও আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বরাবরের মতো গণভবনে এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে কোনো অনুষ্ঠান রাখেননি। আগের দিন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ও দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। ঈদের দিন রাজধানীর মোহাম্মদপুরের গজনবী রোডে (মুক্তিযাদ্ধা টাওয়ার-১) শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা পুনর্বাসন কেন্দ্রে বসবাসরত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের জন্য তিনি তাঁর শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান এবং দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাকে শুভেচ্ছা জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর