শুক্রবার, ২৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস আজ

সেবা ও ত্যাগের স্বীকৃতি বিশ্বজুড়ে

বিশেষ প্রতিনিধি

আজ ২৯ মে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বশান্তি রক্ষায় ৭২ বছর ধরে সেবা ও ত্যাগের অনন্য নিদর্শন হিসেবে জাতিসংঘের হয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশের শান্তিরক্ষীরা। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ১৯৮৮ সাল থেকে ৩২ বছর ধরে বিশ্বশান্তি রক্ষায় নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় নিজেদের অবদান রেখে চলেছে। দেশে দেশে জাতিগত সংঘাত, সন্ত্রাস, হানাহানি রোধে কাজ করছে দৃঢ়তার সঙ্গে। তাদের নিষ্ঠা ও একাগ্রতায় অনেক অশান্ত জনপদে শান্তি ফিরিয়ে এনেছেন। এসব প্রেক্ষাপটে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় এ বছর দিবসটি উদযাপন করা হবে। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সীমিত আয়োজনে বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তিরক্ষীদের অসামান্য অবদানকে স্মরণ করা হবে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। দিবসটি উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এবার শান্তিরক্ষী দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘শান্তিরক্ষার চাবিকাঠি নারী শান্তিরক্ষী।’  

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ১৯৪৮ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে। আর ১৯৮৮ সালে ইরাকে সামরিক পর্যবেক্ষক পাঠিয়ে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেই থেকে শুরু শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে লাল-সবুজের বাংলাদেশের যাত্রা। আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় এর পর নিয়মিতই নতুন নতুন সাফল্যের পালক যুক্ত হয়েছে, যা বিশ্বে বাংলাদেশকে নতুন এক মর্যাদায় নিয়ে গেছে। নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী শান্তিরক্ষী মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। আর পুলিশ নামিবিয়া মিশনের মধ্য দিয়ে ১৯৮৯ সালে শান্তিরক্ষী মিশনে যাত্রা শুরু করে। সংঘাতময় পরিস্থিতি ও জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ১৫০ জন শান্তিরক্ষী নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। গত তিন দশকে বিশ্বের ৪০টি দেশের ৫৪টি মিশনে ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে আটটি মিশনে ৬ হাজার ৪৩৪ জন (৩০ এপ্রিল পর্যন্ত) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। এরই মধ্যে দেড় হাজারের বেশি নারী শান্তিরক্ষী সাফল্যের সঙ্গে তাদের দায়িত্ব সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে ২১৪ জন নারী শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত। দিবসটি উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমাদের শান্তিরক্ষী সদস্যরা আগামী দিনগুলোতেও বিশ্বশান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার এই ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে। তিনি বলেন, পেশাদারিত্বের পাশাপাশি অর্পিত দায়িত্বের প্রতি একনিষ্ঠতা বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সাফল্য অর্জনে ভূমিকা রেখেছে। জাতিসংঘের আহ্বানে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সাড়া দিতে পারেন সেজন্য সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিতে পারে, সে জন্য সরকারের সকল প্রয়াস অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ‘আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২০’ উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের প্রতি আমি আমার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি। জাতিসংঘ মিশন এবং বহুজাতিক বাহিনীতে শান্তিরক্ষীদের অনন্য অবদান বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে এবং এদেশকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাসম্পন্ন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস তার বাণীতে বলেন, বিশ্বজুড়ে আজ কর্মরত এক লাখের বেশি বেসামরিক লোক, পুলিশ ও সামরিক শান্তিরক্ষীর প্রতি এবং এসব সাহসী ও নিবেদিতপ্রাণ নারী-পুরুষ যেসব দেশ থেকে এসেছেন সেসব দেশের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই। শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ নিবন্ধ ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

সর্বশেষ খবর