শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

আকাশে উড়ছে বাহারি ঘুড়ি

মোস্তফা কাজল

আকাশে উড়ছে বাহারি ঘুড়ি

বাহারি ঘুড়িতে ছেয়ে গেছে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার আকাশ। লকডাউনের অফুরন্ত অবসর সময়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার আকাশে উড়ছে বাহারি ঘুড়ি। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ,  বেগুনি নানা রঙের ঘুড়ি আকাশে উড়ছে। দেখে মনে হচ্ছে, রঙের মেলা বসেছে আকাশজুড়ে। করোনাভাইরাসের কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা ঘরবন্দী হয়ে পড়েছে। তাই বিকেলে একটু আনন্দ পেতেই তারা ঘুড়ি উড়াতে মেতে উঠছে। এসব ঘুড়ি উড়ানোর জন্য অনেকে বাড়ির ছাদ ও বাড়ি সংলগ্ন মাঠ কে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। এক সময় ঘুড়ি ওড়ানো আর ঘুড়ি কাটার প্রতিযোগিতার রেওয়াজ ছিল। বিলীন হওয়ার পথ থেকে ঘুড়ি যেন নতুন জীবন পেল। এসব ঘুড়ি ৫০ থেকে ৫০০ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। রাজধানীর সূত্রাপুর, মালিটোলা, ধোলাইখাল,  চানখাঁরপুল, নারিন্দা, লালবাগ, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, মিরপুর ও কলাবাগানের বিভিন্ন বাড়ির ছাদ ও খোলা মাঠে বাহারি রঙের ঘুড়ি উড়তে দেখা যায়। এ ছাড়া রাজধানীর উপকণ্ঠে সাভার, টঙ্গী, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে আকাশে চোখ মেললেই দেখা যায় ঘুড়ির লড়াইয়ের দৃশ্য। হালের নেটপ্রেমী কিংবা স্মার্টফোনে বুঁদ হওয়া তরুণ প্রজন্মকে মাঠে ফেরাতে দারুণ কাজ করছে ঘুড়ি। গ্রাম ও শহরে এখন ঘুড়ি ওড়ানো খেলা অনেকটা বন্ধ হবার পথে। বর্তমানে আমাদের শিশুরা বড় হচ্ছে খাঁচার মধ্যে। ঘরে বসে শহুরে শিশুরা কম্পিউটার বা ভিডিও গেম খেলে সময় কাটায়। যারা মাঠে যায় তারা ফুটবল বা ক্রিকেট খেলে। গ্রামীণ শিশুদের মধ্যেও ক্রিকেট খেলার জোয়ার বয়ে গেছে। এক সময় এ দেশের ছেলে ও যুবকরা প্রচুর ঘুড়ি ওড়াতো। শরৎ ও হেমন্তের বিকালের আকাশ ছেয়ে যেত ঘুড়িতে। করোনাভাইরাসের লকডাউনে অনেকটাই ফিরেছে ঘুড়ি ওড়ানোর সেই সময়টা। এ ছাড়া অফিস-আদালত ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বড়রাও ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতি কিছুটা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন বিকাল হলেই রাজধানীর ও বিভিন্ন জেলার অনেক ভবনের ছাদ এবং মাঠে-ময়দানে দেখা মিলছে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব। ঘুড়ি একপ্রকারের হালকা খেলনা, যা সুতা টেনে আকাশে ওড়ানো হয়। পাতলা কাগজের সঙ্গে বাঁশ থেকে বানানো চিকন কঞ্চি লাগিয়ে সাধারণত ঘুড়ি তৈরি করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন উপাদান ও নকশার ঘুড়ি রয়েছে। ঘুড়ি ওড়ানো একটি অবসর বিনোদন। বাংলাদেশের পুরান ঢাকায় পৌষ সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বকর্মা পূজার দিন ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা রয়েছে। ঘুড়ি উদ্ভাবন এবং ওড়ানোর ইতিহাস অনেক প্রাচীন। কিংবদন্তি আছে, খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে পূর্ব এশিয়া মহাদেশের লোকেরা ঘুড়ি ওড়ানোর ব্যাপারে দক্ষ ছিল। চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়ায় ঘুড়ি ওড়ানোর খেলার প্রচলন রয়েছে। প্রায় ২৮০০ বছর পূর্বে চীন দেশে ঘুড়ির সর্বপ্রথম উৎপত্তি ঘটেছে। পরবর্তীকালে এটি এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়াও ইউরোপে ঘুড়ি খেলাটির প্রচলন ঘটে প্রায় ১৬০০ বছর পূর্বে। প্রথম দিকে ঘুড়ি কাগজ অথবা হালকা তন্তু জাতীয় সিল্কের কাপড় দিয়ে বানানো হতো। ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের অংশ হিসেবে ঘুড়িতে বাঁশের কঞ্চি কিংবা অন্যান্য শক্ত অথচ নমনীয় কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। সুতা কিংবা পাতলা দড়ি ব্যবহৃত হয়। আধুনিককালের ঘুড়িগুলোয় সিনথেটিক জাতীয় পদার্থের প্রচলন রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ঘুড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রচলিত। কোনোটি আকারে খুব বড় ও দেখতে মনোহর। আবার কোনোটি আকারে খুবই ছোট যা দ্রুত উড়তে পারে। বাংলাদেশে ঘুড়ির নামগুলো হচ্ছে- চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুন পাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, জেমিনি, চরকি লেজ, চিলঘুড়ি, বেত, ডাক, মানুষ ও তারাঘুড়ি, পালতোলা জাহাজ প্রভৃতি। ঘুড়িপ্রেমীদের তথ্যমতে, শীতের শেষে বসন্তের আগমনে প্রকৃতি যখন জেগে উঠত, তখন গ্রামের বিলগুলোতে চলত ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা। প্রত্যেক কিশোরের হাতে থাকত লাটাই ও সুতা। আকাশে উড়ত বিচিত্র নামের রঙিন ঘুড়ি। একে ডাক ঘুড়ি বা বেনা ঘুড়ি বলা হতো। এসব ছবি দেখে অনেকেই ফিরে যাচ্ছে সেই পুরনো স্মৃতির দিকে। বাতাসে দুলতে দুলতে ভূপাতিতও হয় ঘুড়িগুলো। বড়দের কেউ কেউ ঘুড়ি বানাতে পারলেও শিশু-কিশোররা বেশির ভাগই ঘুড়ি কিনে উড়িয়ে থাকে। মিরপুরের বাসিন্দা হাজী মিলন মিয়া বলেন, বর্তমানে লকডাউনের কারণে তার পরিবারের কিশোর ও যুবকরা বাড়ির ছাদে অথবা মাঠে গিয়ে ঘুড়ি উড়িয়ে সময় কাটাচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর