শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

বাজারে উঠছে মৌসুমি ফল নেই ক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজারে উঠছে মৌসুমি ফল নেই ক্রেতা

রাজধানীর বাজারে এখন মৌসুমি ফলের ছড়াছড়ি। দোকানে আম, লিচু ও কাঁঠালের ছড়াছড়ি। অনেক আগেই বাজারে এসেছে তরমুজ, বাঙ্গি। যদিও বিদায়ী রমজান মাস জুড়েই এসব ফলের আধিপত্য ছিল। বেশ কিছু জায়গায় পাকা আমের সঙ্গে বিক্রি হতে দেখা গেছে কাঁচা আমও। তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় মৌসুমি ফলের ক্রেতা কম। আবার ফলের দামও কিছুটা চড়া। গতকাল  রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন দেখা যায়। বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর মিরপুর, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও এলাকায় প্রতি ১০০ পিস লিচু (আকার ও লিচুভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকায়। আর এসব এলাকায় প্রতি পিস কাঁঠাল (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। তরমুজ ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকার ভ্যানযোগে আসা অপরিপক্ব আমও বিক্রি করতে দেখা গেছে। আর দামে সস্তা হওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি অন্যরাও কিনছেন এসব আম।

এদিকে মৌসুমি ফল হিসেবে লিচু ও কাঁঠাল বাজারে এলেও দাম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মাঝে। ক্রেতারা বলছেন, এ বছর ফলের ভালো ফলন হওয়ায় দাম আরও কম হওয়া উচিত। আর বিক্রেতারা বলছেন, লকডাউনের কারণে পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় দাম বেড়েছে ফলের। এ ছাড়া গাজীপুরের কাঁঠালের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হওয়ায় ফলটির দাম বেড়েছে। রাব্বি নামে মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টির এক ফল বিক্রেতা বলেন, গাজীপুরের কাঁঠালের চাহিদার তুলনায় পণ্য কম আসছে, তাই দাম বেশি। তবে লিচুর দাম আরও কমে আসবে বলে জানান তিনি। তার মতে, লিচু বাজারে আরও আসবে তখন দাম কিছুটা কমে আসবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর এক লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর প্রত্যাশিত উৎপাদন ২২ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। তবে রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সাতক্ষীরা, নাটোর, গাজীপুরের কাঁঠালের চাহিদার তুলনায় পণ্য কম আসছে, তাই দাম বেশি। তবে লিচুর দাম আরও কমে আসবে।

এবার লিচুর আবাদ হয়েছে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে এবং প্রত্যাশিত উৎপাদন দুই লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। অধিকাংশ লিচুর ফলন হয় রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, গাজীপুর এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলায়।

আর কাঁঠালের আবাদ হয়েছে ৭১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন ১৮ লাখ ৮৯ হাজার মেট্রিক টন। টাঙ্গাইল, গাজীপুর ও রাঙ্গামাটিতে সবচেয়ে বেশি কাঁঠাল উৎপাদন হয়। অন্যদিকে, আনারসের আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে ও সম্ভাব্য উৎপাদন চার লাখ ৯৭ হাজার মেট্রিক টন। আনারসের সিংহভাগ উৎপাদন হয় টাঙ্গাইলে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিক বাজার ধরা, মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য পরিবহনে ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহনে যেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কোনো হয়রানি না করে তা মনিটর করা হয়।

এ ছাড়া কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রযুক্তিনির্ভর আগামী ‘এক শপ’ অ্যাপস চালু করেছে। আগামী ৩-৪ দিনের মধ্যে যার মাধ্যমে সারা দেশের চাষিরা পণ্য বেচাকেনা করতে পারবে। অনলাইনে এবং ভ্যানযোগে ছোট ছোট পরিসরে কেনাবেচার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

ব্যবসায়ী, আড়তদার ও ফড়িয়াদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে পরিচয়পত্র ইস্যু এবং ব্যাংকের লেনদেনের সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মধুমাসে বিদেশি ফল যেমন আপেল, আঙ্গুর প্রভৃতি আমদানি কমানোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনার কারণে কৃষক শাক-সবজি, তরমুজসহ বিভিন্ন কৃষি পণ্য বিক্রি করতে পারেনি। যা বিক্রি করেছে তারও ভালো দাম পায়নি। ইতিমধ্যে আম, লিচু, আনারস, কাঁঠালসহ মৌসুমি ফল বাজারে আসতে শুরু করেছে। এসব মৌসুমি ফল সঠিকভাবে বাজারজাত না করা গেলে চাষিরা আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পাশাপাশি দেশের অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। তাই মৌসুমি ফল নষ্ট না হয় সেজন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর পবা উপজেলার আলীমগঞ্জ এলাকার বাগান মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘অধিকাংশ বাগান বিক্রি করা হয়েছে। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী এখন আম ও লিচু পাড়া যাবে। অনেক ফড়িয়া এখান থেকে কিনে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া শুরু করছে। প্রশাসন থেকে তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মেঘলা ফলের আড়তদার বোরহান হোসেন বলেন, ‘সরকার ১৫ মে থেকে আম বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। আগাম জাতের কিছু ফল আসা শুরু হয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আম, লিচু এবং অন্যান্য মৌসুমি ফল ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা হবে। মৌসুমি ফল এবং কৃষিপণ্য বহনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক ও অন্যান্য পরিবহনের অবাধ যাতায়াত নির্বিঘ্ন করা, পরিবহনের সময় যাতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী কোনোরকম হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যবস্থা হবে। মৌসুমি ফল যেন নষ্ট না হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর