সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে লাতিন আমেরিকায়

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনা দ্রুত ছড়াচ্ছে লাতিন আমেরিকায়

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ পর্যন্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অন্তত ৩ লাখ ৭২ হাজার মানুষ। মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬২ লাখের বেশি মানুষ। সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে আমেরিকায়। সেখানে গতকাল পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৬ হাজার।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও আক্রান্তের শিকার হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, আগের থেকে এখন আমেরিকায় পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। তারা বলছেন, সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যায় খুব দ্রুত দ্বিতীয় স্থানে চলে এসেছে ব্রাজিল। সেখানে পাঁচ লাখ মানুষ করোনা আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার মানুষের। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাশিয়া। সেখানে আক্রান্ত ৪ লাখ ৬ হাজার। মৃত্যু হয়েছে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি মানুষের। তাদের তথ্যানুযায়ী, ব্রিটেনে সংক্রমণের গতি কিছুটা কমেছে। সেখানে আক্রান্ত ২ লাখ ৭৪ হাজার মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ৩৮ হাজারের বেশি মানুষের। স্পেন, ফ্রান্স ও ইতালিতেও করোনা সংক্রমণের গতিতে কিছুটা লাগাম পরানো গেছে। সংক্রমণের নিরিখে গোটা বিশ্বে এত দিন কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও সম্প্রতি নয় নম্বরে উঠে এসেছে ভারত।

খবরে বলা হয়, করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে কানাডাতেও। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ৯১ হাজার মানুষ। মৃত্যু ৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই মহামারী ছড়িয়ে পড়ার গতি দেখে শঙ্কিত চিকিৎসকরা। কয়েক দিনের ছবিতেই স্পষ্ট, করোনা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে লাতিন আমেরিকা ও উপসাগরীয় দেশগুলোতে। তবে সব দেশেই করোনার নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা অনেকটা বেড়েছে। তার ফলে আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সংক্রমণের গতি বেড়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো এবং পেরুতে।

সাত মাসে ভারতের অর্ধেক মানুষ আক্রান্ত হতে পারে : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন থেকে ভারতে করোনার সংক্রমণ আরও দ্রুত হারে বাড়বে এবং গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়াবে। ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ সংক্রমিত হয়ে যেতে পারে। এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে গতকাল বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরো সায়েন্সেস বা নিমহানস-এর নিউরোলজি বিভাগের প্রধান, তথা কর্ণাটক হেলথ টাস্কফোর্সের নোডাল অফিসার চিকিৎসক ভি রবি বলেছেন, ‘সংক্রমিতদের ৯০ শতাংশই বুঝতে পারবেন না যে তারা সংক্রমিত। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ মানুষের হাই-ফ্লো অক্সিজেনের দরকার হবে এবং মাত্র পাঁচ শতাংশ মানুষের ভেন্টিলেশন লাগবে।’ চতুর্থ দফার লকডাউন ওঠার পর সবকটি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিকিৎসা পরিষেবার পরিকাঠামো শক্ত করতে জোর দিয়েছেন রবি। তিনি আরও বলেন, ‘দেশে এখন পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যুর হার তিন থেকে চার শতাংশ। শুধু গুজরাটেই মৃত্যুর হার পৌঁছেছে ছয় শতাংশে। এ অবস্থায় আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে, যখন সবাই করোনাভাইরাস নিয়ে বাঁচতে রপ্ত হয়ে যাবে। কারণ ইবোলা, মার্স বা সার্সের মতো অতিমারণ ভাইরাস কখনোই নয় করোনাভাইরাস।’   

থাইল্যান্ডের করোনা জয় : ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলো যখন করোনাভাইরাসের হানায় কাঁপছে, তখন মহামারী নিয়ন্ত্রণে অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ থাইল্যান্ড। গত পাঁচ মাসে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র হাজার তিনেক মানুষ, মারা গেছেন ১০০ জনেরও কম।

থাই স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শনিবার ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন মাত্র চারজন। এদিন মারা যাননি কেউই। ফলে দেশটিতে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮১ জন, আর মৃতের সংখ্যা রয়েছে ৫৭। গতকাল থাইল্যান্ডের করোনা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র পানপ্রাপা ইয়ংত্রাকুল জানিয়েছেন, নতুন শনাক্ত চার রোগীই বহিরাগত। তারা সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক ও সৌদি আরব থেকে সম্প্রতি থাইল্যান্ডে প্রবেশ করেছেন। তাদের সবাইকেই কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এ কর্মকর্তা আরও জানান, দুই সপ্তাহ ধরে দেশটিতে করোনার প্রকোপ একেবারে কমে এসেছে। এ সময়ে নতুন শনাক্ত ৮০ শতাংশ রোগীই বিদেশফেরত থাই নাগরিক। প্রসঙ্গত, করোনার প্রকোপ কমে আসায় এরই মধ্যে লকডাউন শিথিল করেছে থাইল্যান্ড। খুলে দেওয়া হয়েছে বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও পার্ক। চালু হয়েছে রেস্টুরেন্ট, সেলুন, ফুটপাতের বাজারগুলো। মদ বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সরকার। আজ থেকে সিনেমা হল, জিমসহ আরও কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর