সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ঢাকায় ফিরছে কর্মজীবী মানুষ

ট্রেন চলছে নিয়ম মেনে লঞ্চে গাদাগাদি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ট্রেন চলছে নিয়ম মেনে  লঞ্চে গাদাগাদি

সদরঘাটে গতকাল ঢাকামুখী মানুষ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মহামারী করোনাভাইরাসের কারণে দুই মাসের বেশি সময় সাধারণ ছুটির পর শুরু হয়েছে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল। গতকাল দেশের বিভিন্ন রেলস্টেশন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেন চললেও যাত্রীবাহী নৌযানে উপেক্ষিত শারীরিক দূরত্ব। প্রায় সব লঞ্চেই যাত্রী এসেছে গাদাগাদি করে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে এমন তথ্যই জানানো হয়েছে। প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে যাত্রীদের মাঝে। অন্যদিকে গত কয়েক দিনের মতো গতকালও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানী ঢাকায় ফিরেছেন কর্মজীবী মানুষেরা। ফলে অন্য দিনের মতো গতকালও মহাসড়কে ঢাকামুখী যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে।

সকাল ৭টায় রাজশাহী স্টেশন থেকে আসন সংখ্যার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এর আগে স্টেশনের প্রধান ফটকে যাত্রীদের জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানোর পাশাপাশি তাদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়। চট্টগ্রাম থেকেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে সুবর্ণা এক্সপ্রেস। প্রথম দিনের সব টিকিট অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিকে দুই মাসেরও বেশি সময় পর বরিশাল ও চাঁদপুরসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল। গতকাল সকাল ৭টায় চাঁদপুর লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রাজধানীর সদরঘাটের উদ্দেশে এমভি সোনারতরী নামে একটি লঞ্চ ছেড়ে আসে। লঞ্চে ওঠার আগে যাত্রীদের জীবাণুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার নির্দেশনা থাকলেও অনেককেই তা মানতে দেখা যায়নি। বাড়তি চাপের কারণে যাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানায় লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

ভোলা প্রতিনিধি জানান, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্তে চালু হয়েছে ভোলার সঙ্গে রাজধানীসহ দেশের মূল ভূখন্ডের লঞ্চ চলাচল। এতে গন্তব্যে যেতে পারার আনন্দ বিরাজ করছে যাত্রীদের মধ্যে। তবে অধিকাংশ যাত্রী সতর্কতা অবলম্বন না করায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। অনেক যাত্রীই মানছেন না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। অন্যদিকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ঘাট ছাড়ছে লঞ্চ। ফলে বিপাকে পড়েছেন আগে থেকে টিকিট কেটে রাখা অসংখ্য যাত্রী। যানবাহনের তুলনায় যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় স্থানীয় একটি অসাধু চক্র যাত্রীদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীদের ছোট ছোট ট্রলারে উত্তাল মেঘনা পারাপার করা হচ্ছে। তবে বিআইডব্লিউটিএর ভোলা নদীবন্দরের সহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানিয়েছেন লঞ্চগুলোকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করতে কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোনো লঞ্চ তা না মানে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই গতকাল আমতলী লঞ্চঘাট থেকে এমভি হাসান-হোসেন লঞ্চ ছেড়ে গেছে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ যাত্রী নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এতে ওই লঞ্চের যাত্রীদের মাঝে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতঙ্ক বিরাজ করছে। জানা গেছে, হাসান-হোসেন লঞ্চে যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৯৫ জন। কিন্তু ওই লঞ্চটি আমতলী ঘাট থেকে অন্তত তিন শতাধিক যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। এরপর লেবুখালী পর্যন্ত মাঝখানে পুরাকাটা, আয়লা পাতাকাটা, ভয়াং, কাঁকড়াবুনিয়া ও পায়রাকুঞ্জু নামের পাঁচটি ঘাট রয়েছে। ওই সব ঘাট থেকে অন্তত আরও তিন শতাধিক যাত্রী লঞ্চে উঠেছে বলে জানান লঞ্চে থাকা যাত্রীরা। এতে ধারণক্ষমতার চেয়ে দুইগুণ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ঢাকায় পৌঁছবে। ফলে স্বাস্থ্যবিধি বিঘ্নিত হচ্ছে। মাদারীপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচল শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল থেকেই সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে লঞ্চ স্পিডবোট চালু করে। আগে থেকেই ফেরি চলাচল করছিল। এদিকে ঈদের ছুটি শেষে পঞ্চম দিনের মতো কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে কর্মস্থলমুখী যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। তবে লঞ্চ স্পিডবোট চালু থাকায় ফেরিঘাটে যাত্রী চাপ কিছুটা কমেছে। কাঁঠালবাড়ী-শিমুলিয়া নৌরুটে ১৭টি ফেরি, ৮৭টি লঞ্চ ও দুই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করছে। কাঁঠালবাড়ী ঘাটের ম্যানেজার আবদুল আলীম জানান, গত চার দিন ধরে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ছোট যানবাহনে করে যাত্রী কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আসছিল। তবে লঞ্চ স্পিডবোট চালু হওয়ায় ফেরিতে যাত্রী চাপ কমেছে।

 

সর্বশেষ খবর