সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসকদের প্রতি অবহেলা, প্রতিকার চাওয়ায় শাস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা রোগীদের নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দিয়ে হোটেলে কোয়ারেন্টাইনে থাকা চিকিৎসকরা নানা ধরনের অবহেলার শিকার হয়েছেন। দায়িত্ব পালন শেষে হোটেলে গিয়ে টয়লেট, রুম পরিষ্কার করতে হতো তাদের। এসব অব্যবস্থাপনার জন্য হোটেল মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকসহ কয়েকজন চিকিৎসককে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে।

রাজধানীর বিজয়নগরের ‘হোটেল ৭১’ নামের একটি হোটেলে থাকা কয়েকজন চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আমরা টানা সাত দিন দায়িত্ব পালন করতাম। এরপর যখন হোটেলে আসতাম তখন এখানে অন্যান্য কাজও করতে হতো। যেসব কাজ হোটেল স্টাফদের করার কথা। কিন্তু রুম সার্ভিসের জন্য ডেকে কাউকে পাওয়া যেত না। শয়নকক্ষে ময়লা-আবর্জনায় সয়লাব হয়ে থাকলেও পরিষ্কার করার জন্য কাউকে পেতাম না। টয়লেট অপরিষ্কার থাকলেও কেউ এগিয়ে আসত না। আমরাই বাধ্য হয়ে বলতাম, অন্তত একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বা ব্রাশ দেন যাতে রুম ও টয়লেট পরিষ্কার করতে পারি। হাসপাতালে ডিউটি শেষে হোটেলে আসার পর এভাবে আমরা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে ঝাড়ু দেওয়া শেষে টয়লেটও পরিষ্কার করতাম। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এই চিকিৎসকরা বলেন, হোটেলে তো টাকা দিয়েই আমাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যাতে দায়িত্ব পালন শেষে চিকিৎসকরা কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পারেন। কিন্তু সেখানে কোনো রুম সার্ভিস না পেয়ে এখন বাসায় থেকেই কোয়ারেন্টাইন করছি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন চিকিৎসক বলেন, ‘হাসপাতালে আমরা সাধারণত রোস্টার পলিসিতে দায়িত্ব পালন করে থাকি। রোস্টার শেষে আমাদের হোটেলে এসে  কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়। কিন্তু এই একটা হোটেলে আমাদের নানারকম বিমাতাসুলভ আচরণের মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়। আমরা যখন হাসপাতাল থেকে দায়িত্ব পালন শেষে হোটেলে আসি তখন এমন একটা আচরণ করা হতো যেন আমরা কাক্সিক্ষত কেউ নয়। এরপর আমাদের রুমে চলে যেতে হয়। সেখান থেকে আমাদের বারান্দা বা ছাদে যেতে নিষেধ করা হয়। সেটাও আমরা মেনে নিলাম।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কক্ষের বাইরে খাবার রেখে যেত। কিন্তু সেই খাওয়াটা দেখা যেত ঠান্ডা হয়ে থাকা। তাও আমরা মেনে নিলাম। কিন্তু এক বিছানার চাদরে কয় দিনই বা কাটানো যায়। টয়লেটও ময়লা হয়ে থাকত। তাই আমরা সেই কথাই জানিয়ে ছিলাম আমাদের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু এখন দেখি ওনাদেরই বদলি করে  ফেলা হলো।’ জানা যায়, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ গোলাম নবী তুহিনকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজে এবং নাক, কান গলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটুকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়াও করোনা চিকিৎসার ফোকাল পারসন সার্জারির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মাহবুবুর রহমান কচিকে জামালপুরে বদলি করা হয়েছে। চক্ষু বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোত্তালিব হোসেনকে ওএসডি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে বদলি একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রশাসনিক কারণেই তাদের বদলি করা হয়েছে। খুব দ্রুতই এ বিষয়ে বিস্তারিত সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’ হোটেল ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে দেখা হয়ে থাকে। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’

সর্বশেষ খবর