সোমবার, ১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় মৃত মুক্তিযোদ্ধার লাশ সৎকারে বাধা

প্রতিদিন ডেস্ক

করোনায় ফরিদপুরে মারা যাওয়া এক মুক্তিযোদ্ধার লাশ সৎকারে বাধা দেওয়া হয়েছে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আরেকজনের লাশ রাস্তায় ফেলে রাখার ঘটনা ঘটেছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফরিদপুর : করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করে অবশেষে জগতের মায়া ত্যাগ করে ওপারে চলে গেলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার ও ফরিদপুর শহরের পুরাতন কালীবাড়ীর পুরোহিত কমলেশ চক্রবর্তী ভানু (৭০)। তিনি গত ১২ দিন ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গতকাল ভোর ৭টা ৪০ মিনিটে ফমেক হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে ২ পুত্র, স্ত্রী, স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী  রেখে গেছেন। এই বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ দুপুরে অম্বিকাপুর শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে স্থানীয় কিছু  লোকজন তার সৎকারে বাধা সৃষ্টি করেন, শ্মশানের চিতায় করোনায় মৃত্যুবরণকারীর দেহ দাহ হতে দেওয়া হবে না মর্মে বাক-বিত ার একপর্যায়ে সেখানে পুলিশ বাড়ানো হয়। সৎকারের কাজে শ্মশান কমিটি, সৎকার সমিতি বা হিন্দু সমাজের কোনো ব্যক্তিকে পাওয়া যায়নি। পরে জেলা পুলিশ প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের হস্তক্ষেপে স্থানীয়রা চলে যাওয়ার পর লাশটি দাহ করা হয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানিয়ে অবশেষে তারাই নিহতের পুত্রের মাধ্যমে সনাতনি ধর্ম অনুযায়ী পিতার মুখাগ্নি নিবেদন করে পুলিশ পাহারায় দাহ সম্পন্ন করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা ইউএনও মো. মাসুম  রেজা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ওসি মোর্শেদ আলমসহ পুলিশের কর্মকর্তারা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : পরিবার নিয়ে চাঁদপুরে থাকতেন ফার্মেসি দোকানি মো. রাজীব (৩৬)। তার পৈতৃক নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বায়েক ইউনিয়নের সাগরতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে গত শনিবার বিকালে মারা যান তিনি। মরদেহ দাফনের জন্য সাগরতলা গ্রামে নিয়ে আসা হলে গ্রামের লোকজন দাফন কাজে বাধা দেন। পরবর্তীতে গভীর রাতে কসবা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কসবা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেন।

মৃতের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট থাকায় গত শনিবার দুপুরে রাজীবকে চাঁদপুর শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে বিকাল ৪টার দিকে রাজীবের মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে তার বাবা-মা মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফনের জন্য সাগরতলা গ্রামে নিয়ে আসলে গ্রামবাসী মরদেহ দাফনে বাধা দেন। এর ফলে ছেলের মরদেহ নিয়ে রাস্তায় বসে থাকেন রাজীবের বাবা-মা। রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রাস্তায় পড়েছিল রাজীবের মরদেহ। কিন্তু কেউই রাজীবের মরদেহ দাফনে এগিয়ে আসেননি।

মর্মান্তিক এ ঘটনার খবর পেয়ে কসবা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রাশেদুল কাউসার ভূইয়া জীবন গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করেন। রাত দেড়টার দিকে কাফনের কাপড়ের দোকান খুলিয়ে কাপড় কিনেন চেয়ারম্যান জীবন। এরপর স্থানীয় এক মসজিদের ইমামকে ডেকে কসবা থানার ওসি লোকমান হোসেনকে নিয়ে জানাজার নামাজ পড়েন। এরপর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় রাজীবের মরদেহ।

সর্বশেষ খবর