বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

জমতে শুরু করেছে মৌসুমি ফলের হাট

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও দিনাজপুর প্রতিনিধি

জমতে শুরু করেছে মৌসুমি ফলের হাট

আগের বছরের চেয়ে অন্তত ১৫ দিন দেরিতে এ বছর রাজশাহীতে আমের হাট বসেছে। রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বাণেশ্বরে বসছে এ হাট। এটিই রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট। এবার আম পরিপক্ব হতে সময় বেশি লাগার কারণে হাট বসতে দেরি হলো। তবে দেরিতে হলেও জমতে শুরু করেছে হাট। পাইকাররাও আসছেন বাইরের জেলা থেকে। তবে গত বছরের তুলনায় কম। এদিকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে লিচু। দামও পাচ্ছেন কৃষক। হাটে গিয়ে দেখা গেছে, ভ্যানের ওপর ঝুড়ি আর ক্যারেটে সাজিয়ে রাখা হয়েছে গুটি, রানীপছন্দ আর গোপালভোগ জাতের আম। তবে পুরো হাট এখনো ভরেনি। স্বল্পসংখ্যক ব্যবসায়ী হাটে আম তুলেছেন। হাটে যেমন বিক্রেতার সংখ্যা কম, তেমনি কম ক্রেতার সংখ্যা। তাই তুলনামূলক কম আমের দাম।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গুটি জাতের আম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আর গোপালভোগ বিক্রি করা হচ্ছে এক হাজার ৭০০ টাকা মণ দরে। তবে আকারে একটু বড় গোপালভোগের দাম ব্যবসায়ীরা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাইছেন। এক হাজার ৮০০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে সেসব আম। তবে হাটে হিমসাগর বা খিরসাপাত দেখা যায়নি। পুঠিয়ার শিবপুর এলাকার আম ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান জানালেন, চার-পাঁচ দিন আগে থেকে হাতেগোনা কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের ইজারা নেওয়া বাগান থেকে আম ভেঙে হাটে তুলছেন। শুক্রবার সবচেয়ে বেশি আম উঠেছে হাটে। এখন প্রতিদিন আরও বেশি পরিমাণ আম উঠবে বলে মনে করছেন তিনি। আরেক আম ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম বলেন, এবার আম পরিপক্ব হতে একটু সময় লাগল বেশি। এর পরও করোনাভাইরাসের জন্য আম নামানোর সাহস পাচ্ছিলেন না তিনি। ফলে অল্প পরিমাণ আম এনেছেন। কিন্তু ক্রেতার সংখ্যা কম। তাই আমের দামও কম।

আমের ক্রেতা জুলফিকার রহমান বললেন, প্রতি বছরই আম কিনে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠানো লাগে। সে জন্য এবারও হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ভিড় এড়িয়ে চলা খুব জরুরি। কিছু দিন পর হাটে ভিড় দেখা দিতে পারে। তাই তিনি আগেভাগেই আম কিনতে এসেছেন। আমের দাম নিয়ে অভিযোগ নেই বলেও জানান তিনি। রাজশাহী জেলায় আমবাগান আছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। অপরিপক্ব আম নামানো ঠেকাতে গেল চার বছরের মতো এবারও আম নামানোর সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

সে অনুযায়ী গাছে পাকলেই ১৫ মে থেকে সব ধরনের গুটি আম নামানোর সময় শুরু হয়েছে। ২০ মে থেকে গোপালভোগ এবং ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষ্মণভোগ বা লখনা এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত নামানোর সময় শুরু হয়েছে। এ ছাড়া ল্যাংড়া ৬ জুন, আম্রপালি ১৫ জুন এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামবে আশ্বিনা এবং বারী-৪ জাতের আম। করোনাকালে বাজারজাত নিয়ে যেন সমস্যা না হয় সে জন্য এবারই প্রথম শুধু আমের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী হয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনে আম নিয়ে ঢাকায় যেতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। ট্রেনে দেড় টাকায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে এবং এক টাকা ৩০ পয়সা কেজি ভাড়ায় আম ঢাকায় নেওয়া যাবে। ঢাকায় গিয়ে ব্যবসায়ীদের সুবিধামতো স্টেশনে আম নামানো হবে। এ ছাড়া আজ থেকে ডাক বিভাগ বিনা ভাড়ায় ব্যবসায়ীদের আম ঢাকায় নিয়ে যাবে। ডাক বিভাগ বলছে, কৃষকবন্ধু ডাকসেবার আওতায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং পর্যায়ক্রমে নওগাঁ থেকেও আম পাঠানো হবে ঢাকায়। এদিকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে পরিবহন সংকট ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা না আসায় এবং ঝড়-বৃষ্টির কারণে লিচুবাগানিরা লোকসানের মধ্যে পড়ে। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে সেসব সমস্যা দূর হওয়ায় ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। সমস্যাগুলো দূর করে লিচুর ভালো দাম পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসন শহরের কালিতলা থেকে ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে লিচুর বড় বাজার বসিয়েছে। এ বাজারে বাইরের ব্যবসায়ীসহ লিচুবাগানিদের বিক্রি করার সব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাজারটি জমে উঠেছে। সততা আড়তের লিচুবিক্রেতা রোস্তম আলী জানান, এখন বাগানমালিকসহ ব্যবসায়ীরা সবাই লিচুর ভালো দাম পাচ্ছেন। তবে কয়েক দিন আগে সেই দাম পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন করোনায় পরিবহন সংকট, বাইরের ব্যবসায়ীরা আসতে না পারায় লিচুবাগানিরা দাম ভালো পাননি। এখন আগের চেয়ে ভালো দাম পাচ্ছেন সবাই। লিচু বিপণন, পরিবহন, দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণে তাদের সমস্যা আর নেই। বাইরের ব্যবসায়ীদের থাকা-খাওয়ারও কোনো সমস্যা নেই। তাই আগের চেয়ে ব্যবসা ভালো হচ্ছে এবং দামও ভালো পাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মাসিমপুরের মোসাদ্দেক হোসেন জানান, লিচু গত মাসের মাঝামাঝিতে বাজারে আসা শুরু করে। করোনার কারণে অনেকে বাজারে লিচু নামিয়েছেন। আবার ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক গাছের লিচু নষ্টের ভয়ে তারা বাজারে বিক্রি করে দিয়েছেন। যারা সপ্তাহখানেক আগে লিচু বিক্রি করেছেন, তারা লাভ করতে পারেননি। তখন বিক্রি করা নিয়েও সমস্যা ছিল। তখন মাদ্রাজি লিচু ২০০০-২৩০০ টাকায় হাজার বিক্রি করেছেন বাগানিরা। লিচুর মৌসুম মাঝামাঝি চলে এসেছে। তবে এখন সেই লিচু আজ বিক্রি হচ্ছে ২৯০০-৩৫০০ টাকা হাজার।

সর্বশেষ খবর