বৃহস্পতিবার, ৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

উপসর্গ নিয়ে আরও ১৭ মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের বিভিন্ন জেলায় সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্টের মতো করোনা উপসর্গ নিয়ে গতকাল একজন মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৭ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে চাঁদপুরে পাঁচজন ও পাবনায় দুজন, মুন্সীগঞ্জে দুজন, নরসিংদীতে একজন, পটুয়াখালীতে একজন, নাটোরে একজন, মানিকগঞ্জে একজন, ঝালকাঠিতে একজন, জামালপুরে একজন, বরিশালের একজন ও পিরোজপুরে একজন মারা গেছেন। সংশ্লিষ্টদের বাড়িঘরও লকডাউন করেছে প্রশাসন। করোনা সন্দেহে পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করাও হচ্ছে। অনেককেই হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যানুযায়ী- চাঁদপুরে করোনা উপসর্গে ১২ ঘণ্টায় আইসোলেশন ইউনিট ও বাড়িতে ৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। জানা গেছে, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টায় সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পল্লী চিকিৎসক আবু তাহের ভুঁইয়া (৬০), রাত ২টায় সদর উপজেলার কল্যান্দীর আবদুর রাজ্জাক (৭০) ও গতকাল সকালে একই গ্রামের লাকী বেগম (৩৪) মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে করোনা উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টায় হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পূর্ব ইউনিয়নের বলিয়া গ্রামে মজিবুর রহমান (৭০), গতকাল সকাল ৮টায় হাজীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৬০) মৃত্যুবরণ করেন। তারা সবাই কয়েকদিন ধরে জ¦র, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। করোনা উপসর্গ নিয়ে পাবনায় এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এদের একজনের বাড়ি জেলার সুজানগর ও অপরজনের বাড়ি চাটমোহর উপজেলায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তারা মারা যান। পাবনা  জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন জানান, সুজানগর উপজেলা থেকে সুম হোসেন (৬৫) নামের এক ব্যক্তি গত ১ জুন সর্দি, জ¦র ও কাশির উপসর্গ নিয়ে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। করোনা উপসর্গ থাকায় তাকে সন্দেহভাজন রোগী হিসেবে আইসোলেশন ইউনিটে রাখার পর নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তার পরীক্ষার রিপোর্ট এখনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে পৌঁছেনি। তবে গত রাতে তিনি মারা যান। চাটমোহর উপজেলায় আটলঙ্কা নতুন পাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম (৬৫) নামে এক ব্যক্তি শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। চাটমোহর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সজীব শাহরীন মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ওই ব্যক্তি অ্যাজমা রোগী ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্র দাবি করেছে। মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়েছে।

নরসিংদীতে করোনা উপসর্গ  নিয়ে নূরে আলম খন্দকার (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে জেলার কভিড হাসপাতালের আইসোলেশনে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। নিহত নূরে আলম খন্দকার শহরের বাসাইল এলাকার আবদুর রহমান খন্দকারের ছেলে। তিনি ভেলানগর বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনের ব্যবসা করতেন। জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মিজানুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার বিকালে নিহত নূরে আলম জ্বর, ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। রাতে তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরে গতকাল সকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

পটুয়াখালীতে করোনার উপসর্গ (জ্বর, শ্বাসকষ্ট) নিয়ে বাবুল লাল দাস (৫৬) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। গতকাল সকালে পটুয়াখালী জেনালের হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। শহরের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের থানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত সুরেন্দ্র নাথ দাসের বড় ছেলে তিনি। বাবুল দাস মারা যাওয়ার খবরে এলাকার মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক বিরাজ করছে। পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের এক ব্রাদার জানান, করোনা উপসর্গ নিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে বাবু লাল দাস নামের এক ব্যক্তিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করলে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান। পরে তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা ইউনিয়নের শালাইনগরে করোনা উপসর্গ নিয়ে এক বয়স্ক নারীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গতকাল মেয়ে জামাইর বাড়িতে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা জানায়, শালাইনগর পূর্বপাড়া গ্রামের এসরাইলের শাশুড়ি ঢাকা থেকে জামাই বাড়িতে এসে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছিল। গতকাল সকালে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে জ্বর ছিল। মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন বীরমুক্তিযোদ্ধা সফিউদ্দিন (৭৪)। গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মারা যান। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশাদ উল্লাহ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সফিউদ্দিন জ¦র ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি মারা যান। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা তা নিশ্চিত হতে ওইদিনই সকাল ৭টায় তার শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য সাভার প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা এক পোশাককর্মীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোরে ভাটারা ইউনিয়নের ভেবলা গ্রামে বোনের বাড়িতে ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যক্তি মারা যান। ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন বাদল জানান, এই ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। দুদিন আগে তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভাটারা ইউনিয়নের ভেবলা গ্রামের বোনের বাড়ি আসেন। গতকাল ভোররাত ৪টার দিকে তিনি মারা যান। সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা গাজী রফিকুল হক জানান, করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করা ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ওই বাড়ির সবার নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।

পিরোজপুরে কভিড-১৯ উপসর্গ নিয়ে জেলা হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। গতকাল সকালে আইসোলেশনে তিনি মারা যান। পিরোজপুরের সিভিল সার্জন ডা. হাসনাত ইউসুফ জাকী জানান, মৃত ব্যক্তির বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের ভৈরমপুর গ্রামে। মঙ্গলবার জ্বর ও শারীরিক নানা সমস্যা নিয়ে ওই ব্যক্তি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন। তার শরীরে জ্বর থাকায় কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি করে। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে থাকা তিন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন কভিড-১৯ এ আক্রান্ত ছিলেন। অন্য দুজন শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান। তারা দুজনই কিডনির রোগে ভুগছিলেন। গতকাল সকালে একজন করোনা পজিটিভ ও দুজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত তিনজনের মধ্যে একজন টঙ্গিবাড়ী উপজেলার, একজন সদর উপজেলার ও একজন শহরের ইদ্রাকপুর এলাকার। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া টঙ্গিবাড়ীর ওই ব্যক্তির গত ২৯ মে করোনা শনাক্ত হয়। তার অবস্থার অবনতি হলে ৩১ মে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। তিনি হৃদরোগেও ভুগছিলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান। এর কিছু সময় আগে আইসোলেশন সেন্টারটিতে মারা যান সদর উপজেলার ওই ব্যক্তি। তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে ৩১ মে এই হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই দিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরদিন ১ জুন পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। কিন্তু পরীক্ষার রিপোর্ট আসার আগেই তিনি মারা যান। গতকাল সকাল সাতটার দিকে একই আইসোলেশন সেন্টারে মারা যান শহরের ইদ্রাকপুর এলাকার ওই বাসিন্দা। তিনি গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালটির করোনা কেয়ার সেন্টারে ভর্তি হন। ঝালকাঠির নলছিটিতে বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গতকাল সকালে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তিন দিন ধরে তার বুকে ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট ছিল। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, ওই ব্যক্তি সকালে বাড়ি থেকে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে বুকে ব্যথা বেড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগকে জানানোর পরে মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স ৪৫ বছর। গৌরনদীর মারা যাওয়া ওই ব্যক্তি ঢাকায় পোশাককর্মী ছিলেন। ১ জুন করোনার উপসর্গ নিয়ে ঢাকা থেকে তিনি গ্রামের বাড়ি ফেরেন। ওই দিন তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাবে পাঠানো হয়। বুধবার সকালে তিনি নিজ বাড়িতে মারা যান।

সর্বশেষ খবর