শুক্রবার, ৫ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা মোকাবিলায় ১৭ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা

মানিক মুনতাসির

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চলতি-২০১৯-২০ ও আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের পুরো সময়ে ১৭ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। আগামী অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এমন পরিকল্পনা করছে সরকার। ইতিমধ্যে সহায়তার উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ ছাড় করেছে উন্নয়ন সহযোগীরা। এ ছাড়া এডিবি, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা হিসেবে আরও অর্থ সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিশ্রুতির অর্থ দ্রুত ছাড় করারও তাগিদ দেওয়া হয়েছে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি। অর্র্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, বাজেটের খসড়া রূপরেখায় সরকারের বাজেট ঘাটতির অর্থায়ন ও করোনা মোকাবিলায় বৈদেশিক সহায়তার একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। যা অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার বাজেট বক্তৃতায়ও তুলে ধরবেন। সেই রূপরেখার খসড়া অনুযায়ী উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ২০৩ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭ হাজার ২৫৫ কোটি টাকার সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। ইতিমধ্যে সহায়তার ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে এডিবির কাছে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, বিশ্বব্যাংকের কাছে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, এআইআইবির কাছে ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা, জাপানের কাছে ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে ৮৫০ কোটি টাকা, এএফডির কাছে ১ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা এবং জার্মানির কাছে ২৫৫ কোটি টাকার সহায়তা পাবে বাংলাদেশ। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের। সূত্র জানিয়েছে, উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত পাওয়ার কৌশল হিসেবে তাদের কাছে বাজেট সহায়তা চাওয়া হয়েছে, এ টাকা মূলত স্বাস্থ্য খাত, কর্মসৃজন এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনার প্যাকেজে ব্যয় করা হবে। বাজেট সহায়তা ছাড়াও প্রকল্পের সহায়তার জন্য সব উন্নয়ন সহযোগীদের অনুরোধ করেছে অর্থ বিভাগ। জানা গেছে, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চিকিৎসা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সারা দেশে সব ধরনের কর্মকান্ডে স্থবিরতায় অর্থনীতিতে যে ধাক্কা লাগছে, তা সামাল দিতে দাতা সংস্থাগুলোর কাছে ঋণ ও অনুদান হিসেবে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এদিকে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের জন্য ৪ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করায় এডিবিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, এই সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়ার জন্য আমরা এডিবিকে অবিরাম সমর্থন ও সহায়তার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। এই ক্রান্তিকালে এডিবির তাৎক্ষণিক সহায়তাটি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল এবং তাদের এই ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের ওপর করোনার বিরূপ প্রভাব মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর আগে করোনাভাইরাসে অর্থনীতিতে উ™ভূত নেতিবাচক প্রভাবের ঝুঁকি এবং প্রভাব হ্রাসের সহায়তায় সদস্য দেশগুলোর জন্য এশীয় অবকাঠামো বিনিয়োগ ব্যাংক (এআইআইবি) কর্তৃক ১ হাজার কোটি ডলারের তহবিল গঠন করে। সেখান থেকে  সহায়তা এবং স্বাস্থ্য খাতের জরুরি সেবা ও বাজেট সাপোর্টের জন্য এআইআইবি বাংলদেশের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার  আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এআইআইবির সহায়তার টাকায় কৃষি খাতের অটোমেশন, কৃষিজাত দ্রব্যের প্রক্রিয়াকরণ, ফল ও শাক-সবজি প্রক্রিয়াকরণ, কোল্ড স্টোরেজ, চামড়া প্রক্রিয়াকরণ, গবাদি পশু ও হাস-মুরগি পালন এবং মাছ চাষের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতোই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। এখানে শুধু নিজেদের অর্থ দিয়ে ঝুঁকি সামলানো কঠিন। এ ছাড়া সব সময়ই বাংলাদেশের মতো দেশগুলো উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা পেয়ে থাকে। এটা একটা নিয়মিত কর্মসূচি। তবে করোনাকে কেন্দ্র করে তাদের সহায়তা বৃদ্ধি করা জরুরি।

সর্বশেষ খবর