মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বিনা বাধায় অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করা যাবে

ফ্ল্যাট কিনে বর্গমিটারপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিলে প্রশ্ন নয়

মানিক মুনতাসির

বিনা বাধায় অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করা যাবে

বিশ্বব্যাপী মহামারী রূপ নেওয়া করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ডুবতে থাকা এই অর্থনীতিকে টেনে তুলতে সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতেই বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া পুঁজিবাজার চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ বন্ড ছাড়া হতে পারে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক জোনের বাইরে স্থাপিত শিল্পতেও বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ আসছে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে। আবাসন খাতেও বিনা প্রশ্নে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে জরিমানা দেওয়ার যে বিধান রয়েছে সেটাও বহাল থাকবে বলে জানা গেছে। বাজেটের এমন ব্যবস্থা একদিকে অচল হয়ে পড়া অর্থনীতিতে গতি ফিরিয়ে আনবে। এতে বাড়বে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান। অন্যদিকে সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ৫ বছরে কালো টাকার মালিকরা তাদের অর্থ ১০ শতাংশ কর পরিশোধ করে বিনিয়োগ করতে পারতেন। নিয়মিত কর পরিশোধকারীদের ক্ষেত্রে এ হার ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন কালো টাকার মালিকদের অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারত। এবার করোনাভাইরাইসের মহামারীর কারণে দুদকের এমন প্রশ্ন করার এখতিয়ার রহিত করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া সরকার করোনাভাইরাস মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত তালিকাবহির্ভূত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে। ব্যক্তি করমুক্ত আয়সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখে উন্নীত হতে পারে। আগামী অর্থবছরে করপোরেট কর হারও কমানো হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, বর্তমানে এলাকাভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ কর দিয়ে কালো টাকায় ফ্ল্যাট কেনার সুযোগ আছে। রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, জেলা শহর, পৌর এলাকাভেদে কালো টাকায় ফ্ল্যাট কিনে বর্গমিটারপ্রতি ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কর দিলে কোনো প্রশ্ন করছে না এনবিআর। আগামী অর্থবছরে করের পরিমাণ কমিয়ে জমি কেনায়ও কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া হতে পারে। এ ছাড়াও ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কালো টাকা বিনিয়োগ করলে কোনো প্রশ্ন করা হবে না। প্রতি বর্গকিলোমিটারে কর কমিয়ে ৫০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা করার বিধান যুক্ত হতে যাচ্ছে এবারের বাজেটে। আগামী ১১ জুন সংসদে বাজেট উপস্থাপনের সময় এই ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ  ম মুস্তফা কামাল।

জানা গেছে, বিনিয়োগ চাঙ্গা করতে চলতি অর্থবছরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা হয়। সেখানে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগকৃত অর্র্থের ১০ শতাংশ কর দিলেই এখন প্রশ্ন করে না এনবিআর। ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত এই সুযোগ আছে। আগামী অর্থবছরের জন্য এক্ষেত্রে বিনিয়োগের নতুন খাত যুক্ত করা হতে পারে। পুঁজিবাজারের বন্ড, অর্থনৈতিক জোনের বাইরে যেমন কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, বড় অবকাঠামো নির্মাণ ইত্যাদি। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত কেউ হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলে কালো টাকা বিনিয়োগ করেনি। গত এক বছরে কালো টাকায় ফ্ল্যাট কেনায়ও সাড়া নেই বললেই চলে। এই সংখ্যা একশর মতো হবে। এ পর্যন্ত দেশে ১৬ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা সাদা করা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা সাদা হয়েছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। ওই সময় ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সুযোগ নিয়েছিল। তখন ৯ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা বৈধ করা হয়। এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ সরকার প্রায় প্রতি বছরই দেয়। তবে এবারের প্রেক্ষাপটটা একেবারেই ভিন্ন। এবার দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে এ ধরনের উদ্যোগ যদি কার্যকর করা যায় তবে সেটা মন্দের ভালো। কেননা কালো টাকাটা তো দেশের বাইরে চলে যায়। কিন্তু এই বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে হয়তো এবারে এ উদ্যোগ বেশ কার্যকর হবে বলে আশা করা যায়।

সর্বশেষ খবর