মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার মধ্যে চ্যালেঞ্জ ডেঙ্গু

ডিএনসিসির তিন দিনের অভিযানে ৫৩৯ বাড়িতে এডিসের লার্ভা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

করোনার মধ্যে চ্যালেঞ্জ ডেঙ্গু

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও বংশবিস্তার থেমে নেই এডিস মশার। সাধারণত জুনে প্রতি বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ শুরু হয়। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ছিল ২০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চিরুনি অভিযানে তিন দিনে ৫৩৯টি বাড়িতে মিলেছে এডিসের লার্ভা। করোনার মধ্যে ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ায় স্বাস্থ্য খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে।

ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে আমরা বার্ষিক পরিকল্পনা নিয়েছি। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত আমরা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করব। করোনা মহামারীর মধ্যে যদি ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়, তাহলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা পড়বে। মশা নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ।’ করোনার প্রকোপে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ঢিল পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পরিত্যক্ত গাড়ি, নির্মাণাধীন ভবন এডিস মশার আবাসস্থলে পরিণত হচ্ছে। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় নতুন করে পানি জমছে। এতে করে বংশবিস্তারের উৎস তৈরি হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, নতুন পানিতে খুব দ্রুত ডিম ফুটে মশা বের হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কীটতত্ত্ববিদ খলিলুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এডিস মশার বংশবিস্তারের এখনই সময়। করোনার কারণে আগাম জরিপ হয়নি। তবে এখন বংশবিস্তারের বড় উৎস হয়ে উঠেছে নির্মাণাধীন ভবন। করোনার কারণে অধিকাংশের কাজ বন্ধ থাকায় জমছে পানি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন আমাদের সঙ্গে সমন্বয় করে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করছে। বংশবিস্তার নির্মূল করতে না পারলে পূর্ণবয়স্ক এডিস মশাকে সামলানো দুরূহ হয়ে পড়বে।’

শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত তিন দিনে ৫৪টি ওয়ার্ডে মোট ৩৯ হাজার ৮৩৭টি বাড়ি, স্থাপনা, নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করে মোট ৫৩৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়। ২৭ হাজার ৮০৩টি বাড়ি ও স্থাপনায় এডিস মশার বংশবিস্তার উপযোগী পরিবেশ পাওয়া যায়। এই অপরাধের ভিত্তিতে এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ডিএনসিসির ভ্রাম্যমাণ আদালত।

চিরুনি অভিযান পরিচালনার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আবার প্রতিটি সেক্টরকে ১০টি সাব-সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি সাব-সেক্টরে ডিএনসিসির চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও একজন মশক  নিধনকর্মী বিভিন্ন বাড়ি, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কোথাও এডিস মশার লার্ভা আছে কি না তা দেখছে। এ ছাড়া কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে আছে কি না, ময়লা-আবর্জনা আছে কী না  তা পরীক্ষা করছে। চলমান এই চিরুনি অভিযানে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নয়জন কীটতত্ত্ববিদ, ডিএনসিসির তিনজন কীটতত্ত্ববিদ, স্বাস্থ্য বিভাগ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তারা কাজ করছে। তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে এখনো এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে অভিযান শুরু হয়নি। ঢাকা শিশু হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটের প্রধান অধ্যাপক ডা. রিয়াজ মোবারক বলেছেন, ‘এডিস মশার বংশবিস্তার রোধের এখনই সময়। বৃষ্টি হলে মশার বংশবিস্তার ত্বরান্বিত হবে। একদিকে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, এর মধ্যে ডেঙ্গু জ্বর হানা দিলে বিপদ বাড়বে। ডেঙ্গু-করোনা একসঙ্গে সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর